শ্রীলঙ্কায় সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
চরম আর্থিক সঙ্কটে শ্রীলঙ্কা। ভয়াবহ আর্থিক দুর্দশার প্রতিবাদে দেশটির মানুষ বিক্ষোভ করছেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া মন্ত্রিসভার ২৬ সদস্যের সবাই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া পদত্যাগ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নরও। সঙ্কট সামলাতে সর্বদলীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। এদিকে শ্রীলঙ্কায় গোটা মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শপথ নিয়েছেন নতুন চার মন্ত্রী। সোমবার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের কাছে শপথবাক্য পাঠ করেছেন তারা।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবার সকালে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে বিরোধীদেরও সরকারে যোগ দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ পরিচালানায় অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। অর্থনৈতিক সঙ্কট চরমে পৌঁছেছে। এর জেরে রাস্তায় নেমেছে জনগণ। পরিস্থিতি সামাল দিতে কার্ফু জারি করেও লাভ হয়নি। কার্ফু উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে সাধারণ মানুষ। বিরোধীরাও সেই বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন। এর মধ্যেই বিরোধীদেরও সরকারে যোগ দেয়ার আহ্বান জানালেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। এই আহ্বানে তারা সাড়া দেবেন কিনা, তা এখনও জানায়নি বিরোধীরা।
এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপরও জারি করা হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। তবে ১৩ ঘণ্টা পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। মূল্যস্ফীতিতে নাজেহাল মানুষের রোষের মুখে রবিবার মধ্যরাতে পদত্যাগ করেন ২৬ মন্ত্রী। যদিও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে এখনও ক্ষমতায় রয়েছেন। অপরদিকে মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র মাহিন্দা রাজাপাকসে গ্রহণ করবেন কিনা, তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। তবে বিরোধীদের সরকারে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানোর ফলে নতুন করে মন্ত্রিসভা গঠিত হবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। উল্লেখ্য, কিছুদিন ধরেই শ্রীলঙ্কার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে তার বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে জনসাধারণ। সেই বিক্ষোভ হিংসাত্মক রূপও ধারণ করেছে। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ দিয়ে পোস্ট করা হচ্ছিল সোশ্যাল মিডিয়াতে। এই আবহে ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ফেসবুক, হোয়াটসএ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ইউটিউবসহ যাবতীয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় শ্রীলঙ্কায়। এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে তার বিরুদ্ধে সরব হন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলে তথা মন্ত্রিসভার সদস্য নামাল রাজাপাকসে। তিনি নিজেও রবিবার রাতে পদত্যাগ করেন।
শপথ নিলেন নতুন চার মন্ত্রী : শ্রীলঙ্কায় গোটা মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শপথ নিলেন নতুন চার মন্ত্রী। সোমবার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের কাছে শপথবাক্য পাঠ করেছেন তারা। লঙ্কান সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাসিল রাজাপাকসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন আলি সাবরি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জিএল পেইরিস। এছাড়া দীনেশ গুনবর্ধনে শিক্ষামন্ত্রী ও জনস্টন ফার্নান্দো মহাসড়ক মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এর আগে, চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের জেরে সৃষ্ট রাজনৈতিক টানাপোড়েনে রবিবার পদত্যাগ করেন দ্বীপরাষ্ট্রটির মন্ত্রিসভার সব সদস্য। লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ছাড়া মন্ত্রিসভার ২৬ সদস্যই পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগকারী মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর নিজের ছেলে নামাল রাজাপাকসেও। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, দেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সিদ্ধান্ত নিতে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে সাহায্য করতে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা। মন্ত্রীদের পাশাপাশি পদত্যাগ করেছেন শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর অজিথ নিভার্ড ক্যাবরাল। তিনি নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ক্যাবরাল শ্রীলঙ্কার একজন অন্যতম নীতিনির্ধারক। বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কটের মধ্যে তিনি গত বছরের সেপ্টেম্বরে লঙ্কান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন। বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে কাজ করছিলেন তিনি। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। দেশজুড়ে জরুরী অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে। চলছে ৩৬ ঘণ্টার কার্ফু। তা সত্ত্বেও বিক্ষোভের শঙ্কায় সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হওয়া কার্ফু চলে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।