মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা

2

মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দিবসের প্রাক্কালে সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংস দমন-পীড়নের অভিযোগে তিনটি শক্তিধর দেশÑ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা নতুন করে আরোপ করেছে নিষেধাজ্ঞা। উল্লেখ্য, দেশটিতে ২০২০ সালের নবেম্বরে নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে জান্তাপ্রধান জেনারেল মিং অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল দেশ তিনটির। এর পর থেকে সে দেশে গণতন্ত্রের দাবিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ, ধর্মঘট, গণআন্দোলনসহ প্রায় গৃহযুদ্ধের অবস্থা বিরাজ করছে। বিক্ষোভ দমনে প্রতিদিন বেসামরিক নাগরিক হত্যাসহ দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। এবারে দেশ তিনটি মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের অভিযোগে কয়েকটি কোম্পানি এবং একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা দিয়েছে। এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সম্পদ জব্দ করার খবরও আছে।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তিন বছর পার হলেও বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ঝুলে গেছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছিল। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ নিয়ে তেমন সাড়া শব্দ ছিল না বললেই চলে। এই পেক্ষাপটে দেশ ৩টির নতুন নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দ ইতিবাচক অগ্রগতি অবশ্যই। বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য-সহায়তা-সহানুভূতি পেতেও তা সহায়ক হতে পারে। সরকার ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কোনভাবেই আত্তীকরণ করা হবে না। বরং চেষ্টা চলবে ইউরোপ-আমেরিকাসহ তৃতীয় কোন দেশে পুনর্বাসনের। এটি সময়সাপেক্ষ ও দুরূহ হলেও অসম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়া কর্তৃক মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও শুনানির বিষয়টি একটি বিরাট অগ্রগতি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও এ বিষয়ে সহায়ক হতে পারে।
মিয়ানমার থকে বিতাড়িত ভাগ্যবিড়ম্বিত শরণার্থীরা বর্তমানে বাংলাদেশের একটি প্রধান সমস্যা। টেকনাফ-কক্সবাজার উপকূলবর্তী বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মাদক ও অস্ত্র চোরাচালনসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে বলেও প্রমাণিত। রোহিঙ্গা শিবিরগুলো প্রাচীরবেষ্টিত ও সুরক্ষিত নয় বলে সীমিত পুলিশী নজরদারির সুবাদে তারা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সর্বত্র। শিশু চুরি, ইয়াবা পাচারসহ জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। বাংলাদেশী স্মার্ট কার্ড, পাসপোর্ট নিয়ে অথবা জাল করে পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। সেখানেও জড়িয়ে পড়ছে নানা অপকর্মে। এভাবে চলতে থাকলে রোহিঙ্গা বিশেষ করে তরুণদের জঙ্গী ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। সে অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরও জরুরী উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে।