আনজুমানে খেদমতে কুরআনের যাকাত বিষয়ক সেমিনারে সাইয়্যেদ কামালুদ্দীন জাফরী ॥ যাকাত আদায় ও ব্যয়ের সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগের অভাবে সমাজ এর সুফল পাচ্ছে না

11
আনজুমানে খেদমতে কুরআন সিলেটের উদ্যোগে ইসলামের যাকাতের গুরুত্ব শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আল্লামা সাইয়্যেদ কামালুদ্দীন জাফরী।

দেশবরণ্যে আলেমে দ্বীন ও বাংলাদেশ ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আল্লামা সাইয়্যেদ কামালুদ্দীন জাফরী বলেছেন, ইসলামের মূল পাচঁটি স্তম্ভের একটি হচ্ছে যাকাত। আর যাকাতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় হলো উশর। কিন্তু আমাদের সমাজে নামাজ রোজার মতো যাকাতের উপর সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছেনা। অথচ যাকাত ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সমাজ এবং রাষ্ট্র গঠন সম্ভব। আমাদের সমাজে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে যাকাত আদায় করা হচ্ছে। যাকাত আদায়ের পদ্ধতি এবং ব্যয়ের ক্ষেত্র সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা না থাকায় মানুষ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যাকাত সম্পর্কে ধারণা থাকলেও উশর সম্পর্কে আমাদের সমাজে তেমন কোন আলোচনা নেই। কিন্তু যাকাত এবং উশর উভয়ই পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা অনুসারে যাকাত এবং উশর আদায় ও এর ব্যয়ের ব্যাপারে আলেম সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বুধবার বিকেলে আনজুমানে খেদমতে কুরআন সিলেট-এর উদ্যোগে ‘ইসলামের যাকাতের গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। আনজুমানে খেদমতে কুরআনের সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ একরামুল হকের সভাপতিতে¦ ও সেক্রেটারী হাফিজ মাওলানা মিফতাহুদ্দীন ও সহকারী সেক্রেটারী ড. এ এইচ এম সোলায়মানের যৌথ উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে জাতীয় ও সিলেটের স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ স্থানীয় আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ অংশ নেন। নগরীর দরগাগেইটস্থ কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সুলেমান হলে অনুষ্ঠিত সেমিনারের শুরুতেই অর্থসহ পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন সিলেট আইডিয়াল মাদরাসার শিক্ষার্থী মো: ইশতিয়াক হোসেন। ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন দিশারী শিল্পীগোষ্ঠীর হিফজুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা সাইয়্যেদ কামালুদ্দীন জাফরী আরো বলেন- আমাদের সমাজে মনগড়া লোক দেখানো পন্থায় যে কিঞ্চিত যাকাত দেয়া হচ্ছে তা কারো উপকারে আসছে না। একদিকে মালের হিসাব নিকাশ না করে সঠিকভাবে না দেয়ায় দাতার যাকাত আদায় হচ্ছেনা। অপরদিকে যাকাত গ্রহীতা এই অর্থ দিয়ে উপকৃত হতে পারছেনা। হালাল মালামাল ছাড়া যাকাত আদায় জায়েজ নয়। হালাল রুজি ও মুত্তাকী না হতে পারলে যাকাত আদায় কবুল হবেনা। তাই সর্বপ্রথমে নিজেদেরকে মুত্তাকী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যারা জেনে বুঝে যাকাত দেয় না তারা দুনিয়া ও পরকালে লাঞ্ছিত হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক ইসলামী অর্থনীতি।
ইসলামী অর্থনীতিই একজন মুসলমানের ঈমানী মূল্যবোধ, উন্নত চরিত্রের সুষমা, আর শরয়ী অনুশাসনের দ্বারা মানুষের জন্য পুত পবিত্র সুখ সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ সম্মানিত জীবন নিশ্চিত করতে পারে। তাই আমাদের আলেম সমাজকে যাকাত ও উশরের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমাজের মুসলমানদের সচেতন করতে হবে। তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্র এর সুফল ভোগ করতে পারবে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ লে. কর্ণেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ, শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা পাঠানটুলা সিলেটের প্রিন্সিপাল মাওলানা লুৎফুর রহমান হুমায়দী।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকার সম্পাদক মুকতাবিস উন নূর, আনজুমানে খেদমতে কুরআনের সাবেক সেক্রেটারী হাফিজ আব্দুল হাই হারুন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো: তাজ উদ্দিন, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাওলানা সাদিক মুহাম্মদ ইয়াকুব আযহারী, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ নগরীর হাজী কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব শায়খ সাঈদ বিন নূরুজ্জামান আল মাদানী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মাওলানা মিসবাহুল ইসলাম চৌধুরী, তরুণ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মাহমুদুর রহমান দিলাওয়ার ও মাওলানা ওলিউর রহমান সিরাজী প্রমুখ।
অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী বলেন- আমাদের সমাজে কালেমা, নামাজ, রোযা ও হজ্জ নিয়ে যতটা আলোচনা হচ্ছে যাকাত নিয়ে ততটা আলোচনা হচ্ছে না। আর উশর নিয়ে আলোচনা নেই বললেই চলে। এ ব্যাপারটি আলেম সমাজের নজরে আনতে হবে। যাকাত হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচনের ইসলাম ভিত্তিক সর্বোচ্চ পন্থা। বাংলাদেশে নিয়ম মাফিক যাকাত আদায় করলে এবং যাকাত প্রকৃত খাতে ব্যবহার করলে দারিদ্র্য হ্রাস পেতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। উশরের বিষয়টি নিয়ে আলেম সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
অধ্যক্ষ মাওলানা লুৎফুর রহমান হুমায়দী বলেন- আমাদের সমাজে যাকাত দাতা লোকের অভাব নেই। তবে যাকাতের খাতগুলো তাদের কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। যাকাত সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে এ ধরনের সেমিনারের বিকল্প নাই। যাকাত ভিত্তিক সমাজ না থাকায় সুদ মহামারি আকার ধারণ করেছে। আর ইসলামের মৌলিক স্তম্ভ যাকাত ও উশর প্রকৃত ভাবে আদায় এবং ব্যবহার না থাকায় নানা বিপর্যয় ঘটছে। এ বিষয় নিয়ে আলেম সমাজকে আরো বেশী সচেতন হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ একরামুল হক বলেন- দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে যাকাত ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার বিকল্প নেই। যাকাত ও উশরের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন এবং এ অনুযায়ী কাজ করার জন্য আলেম সমাজকে সচেতন করতেই আমাদের এই সেমিনার। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। বিজ্ঞপ্তি