পেনশন পাবেন সবাই ॥ আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এই সুবিধা চালু ॥ আওয়ামী লীগের আরেকটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ হচ্ছে

10

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে দেশের সব নাগরিকের জন্য অবসরকালীন সুবিধা বা পেনশন চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এর আওতায় নিবন্ধিতরা ৬০ বছরের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পেনশন ভোগ করতে পারবেন। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যাদের বয়স এখন ১৮ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, আপাতত তাদের এ সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে নিবন্ধিতরা এর প্রত্যক্ষ সুফল পাওয়া শুরু করবেন ১০ বছর পর থেকে। বাংলাদেশের বাইরে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্যও এ সুবিধা রাখা হবে। পেনশন ব্যবস্থার আওতায় গঠিত তহবিলে যারা যে পরিমাণ চাঁদা দেবেন, ওই তহবিলে একই পরিমাণ চাঁদা সরকারও দেবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের কার্যক্রম যেভাবে চলে, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হবে।
শুরুর দিকে এ ব্যবস্থা ঐচ্ছিক রাখা হলেও পরবর্তী সময়ে এটাকে বাধ্যতামূলক করা হবে। নতুন এ ব্যবস্থাটি চালুর আগে আইন ও বিধি প্রণয়ন এবং আলাদা একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় নির্বাচনী ইশতেহারে সর্বজনীন পেনশনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। বর্তমানে দেশে শুধু সরকারী কর্মচারীরা পেনশন পেলেও বেসরকারী চাকরিজীবীসহ সবাই এখন সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আসার সুযোগ পাবেন। এর ফলে বর্তমান সরকারের আরেকটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ হলো। এসবের ধারাবাহিকতায় এটা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। এটি একটি অসাধারণ অর্জন হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। কারণ ধারণাটি ছিল তাঁর এবং তিনি বার বার এটি বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছিলেন। এটি বাস্তবায়িত হলে প্রতিটি মানুষ উপকৃত হবে এবং লাভবান হবে।
বুধবার সরকারী ক্রয় ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে প্রস্তাবিত সর্বজনীন পেনশন সুবিধার বিভিন্ন তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, চা দোকানদার, পান দোকানদারসহ দেশের সবাইকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এই পেনশন সুবিধা চালু করা হবে। সেজন্য আইন ও বিধি তৈরি করা হবে এই সময়ের মধ্যেই। একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করে তার অধীনে চলবে এই পেনশন সুবিধা। এই পেনশন ব্যবস্থায় লাভের একটি আনুমানিক হিসাব সাংবাদিকদের সামনে তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যদি মাসিক চাঁদা ১০০০ টাকা, মুনাফা ১০ শতাংশ ও আনুতোষিক ৮ শতাংশ ধরা হয়, ১৮ বছর বয়সে যদি কেউ চাঁদা দেয়া শুরু করে এবং ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত তা চালু থাকে, তাহলে ওই ব্যক্তি অবসরের পর ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে ৬৪ হাজার ৭৭৬ টাকা করে পেনশন পাবেন। যদি ৩০ বছর বয়সে চাঁদা দেয়া শুরু হয় এবং ৬০ বছর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে, তাহলে অবসরের পর প্রতিমাসে ১৮ হাজার ৯০৮ টাকা পেনশন দেয়া হবে। তবে চাঁদার পরিমাণ ১০০০ টাকার বেশি হলে আনুপাতিক হারে পেনশনও বেশি হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এটি একটি আনুমানিক হিসাব। আইন ও বিধি প্রণয়ন এবং পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার পর প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে। সংবিধানের ১৫ ঘ অনুচ্ছেদ থেকে উদ্ধৃত করে মন্ত্রী বলেন, বার্ধক্যজনিত কারণে অভাবগ্রস্ত হলে তাদের অভাবের কারণে যাদের সাহায্য প্রয়োজন, তাদের সাহায্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেই আলোকে এই পেনশন স্কিম নেয়া হচ্ছে। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের বর্তমান গড় আয়ু ৭৩ বছর। ২০৫০ সালে এটি বেড়ে হবে ৮০ বছর, ৬৫ সালে হবে ৮৫ বছর। এতে দেখা যায়, কোন ব্যক্তি অবসরের পরও ১৫ থেকে ২০ বছর বাঁচবেন। এই সময়ে তাদের কোন আয় থাকবে না, কিন্তু তারা বেঁচে থাকবেন। এদের দেখার কেউ নেই, কর্মক্ষমতাও নেই। আয় করতেও পারবে না। ফলে তাদের দায়িত্ব নেবে সরকার। এটা হবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মাধ্যমে।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে নির্ভরশীলতার হার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। আগামী ২০৫০ সালে তা ২৪ শতাংশে এবং ২০৭৫ সালে ৪৮ শতাংশে উন্নীত হবে। গড় আয়ু বৃদ্ধি ও ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীলতা বিবেচনায় আমাদের বৃদ্ধ বয়সের নিরাপত্তা হিসেবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা খুবই জরুরী। আগামী তিন দশকে একজন কর্মজীবী ব্যক্তি অবসর গ্রহণের পরেও ২০ বছর বেঁচে থাকবে। কিন্তু ওই সময় তাদের আয় থাকবে না। সেজন্য তাদের দায়িত্ব কেবল সরকারই নিতে পারে। বর্তমানে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ওপর শিশু ও বৃদ্ধদের নির্ভরতার যে হার আগামী দিনে তা বাড়তে থাকবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই ডিপেন্ডেন্সি রেশিও বা যাদের কর্মক্ষমতা নেই তাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব কে বহন করবে? সেই দায়িত্বটি সরকার নিচ্ছে এই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার মাধ্যমে। সর্বজনীন পেনশনের উল্লেখযোগ্য দিক ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব কর্মক্ষম নাগরিক এই পেনশনের আওতায় আসবেন। প্রবাসীরাও এতে অংশ নিতে পারবেন। সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদেরও সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে নির্দিষ্ট অঙ্কের মাসিক চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে পেনশনের আওতায় আনা হবে। চাঁদার পরিমাণ কত হবে এবং পেনশনভোগী কিভাবে কতটা সুবিধা পাবেন তা নির্ধারণের জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি আলাদা পেনশন এ্যাকাউন্ট থাকবে। ফলে চাকরি পরিবর্তন করলেও পেনশন এ্যাকাউন্ট অপরিবর্তিত থাকবে। ওই এ্যাকাউন্টে সংশ্লিষ্ট জন যে পরিমাণ চাঁদা দেবে তার বাইরে একটি অংশ দেবে সরকার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাসিক চাঁদা জমা দিতে হবে। এরপর মেয়াদ শেষে পেনশনভোগীদের সুবিধা দেয়া হবে। আমৃত্যু পেনশন সুবিধা বহাল থাকবে। নিবন্ধিত চাঁদা জমাকারী পেনশনে থাকাকালে ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে জমাকারীর নমিনি অবশিষ্ট সময়কালের (মূল জমাকারীর বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) জন্য মাসিক পেনশন পাবেন। পেনশনের অর্থ এককালীন উত্তোলন করা যাবে না। সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তোলা যাবে। কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। পেনশনের টাকা হবে সম্পূর্ণ করমুক্ত। পেনশনের টাকা নীতিমালা অনুযায়ী বিনিয়োগ করা হবে। পেনশন কর্তৃপক্ষ এই টাকা বিভিন্ন লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করবে। অর্থমন্ত্রী জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের কার্যক্রম যেভাবে চালায়, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হবে।