ইউপি ভোটে কোন ধাপে কে জয়ী

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের অষ্টম ধাপে আটটি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ পর্যন্ত সাত ধাপে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এসব নির্বাচনের কোনো ধাপে আওয়ামী লীগ আবার কোনো ধাপে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশি জয় পেয়েছেন। দেশের অন্যতম বৃহত্তম দল বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করছে। তবে বিএনপির অনেক প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। আর এসব নির্বাচনে প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি।
সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দেশের ১৩৪টি ইউপিতে ভোট হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দ্বিগুণেরও বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দেশের ১৩০টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সন্ধ্যায় ১৩০টি ইউপির ফলাফলের তথ্য জানায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলাফলে জানা যায়, এ ধাপে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশনের যুগ্মসচিব এসএম আসাদুজ্জামান জানান, সপ্তম ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৮৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী, আওয়ামী লীগ মনোনীত ৪০ জন, জাতীয় পার্টি-জেপির একজন ও জাতীয় পার্টির তিনজন চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন।
ষষ্ঠ ধাপ
এর আগে ৩১ জানুয়ারি দেশের ২১৮টি ইউনিয়নে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভোট হয় ২১৬টিতে। এ ধাপে আওয়ামী লীগের মনোনীত ১১৭ জন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ৯৫ জন, জাতীয় পার্টির তিনজন ও জাতীয় পার্টি-জেপির একজন চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন।
পঞ্চম ধাপ
৫ জানুয়ারি দেশের ৭০৭টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ৬৯২টি ইউপিতে রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বিজয়ীদের সংখ্যা জানায় ইসি। বিজয়ীদের মধ্যে স্বতন্ত্র ৩৪৬ জন, আওয়ামী লীগের ৩৩১ জন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের দুজন, জাতীয় পার্টির দুজন ও জাতীয় পার্টি-জেপির একজন প্রার্থী রয়েছেন।
চতুর্থ ধাপ
২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে দেশের ৮৩৬টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ৭৯৬টি ইউপির ফলাফলের তথ্য জানায় ইসি। এতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত ৩৯৬ জন প্রার্থী জয় পেয়েছেন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন ৩৯০ ইউপিতে। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের দুজন, জাকের পার্টির একজন, জাতীয় পার্টি-জাপার ছয়জন এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির একজন জয় পেয়েছেন।
তৃতীয় ধাপ
গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন ৫২৫টিতে, অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন ৪৪৬টিতে। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১৭টি, একটি করে ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের প্রার্থী।
দ্বিতীয় ধাপ
১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৮৩৪টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন ৪৮৬টিতে। আর ৩৩০টিতে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ১০টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন, এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা ৪টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন। আবার জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, খেলাফত মসলিশ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর প্রার্থী একটি করে ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন।
প্রথম ধাপ
গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের প্রথম অংশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২০৪টি ইউপির মধ্যে ১৪৮টি ইউপিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন ৪৯টিতে। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জয় পেয়েছে এক ইউপিতে, জাতীয় পার্টি-জেপি ও জাতীয় পার্টি-জাপা পেয়েছে ৩টি করে ইউনিয়নে।
এসব নির্বাচন ও হতাহতের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ইউপি নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনকালে অনিয়মে জড়িতদের স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করার কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে কমিশন। অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলছে। তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হলে স্থায়ী বরখাস্ত করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সর্বশেষ সপ্তম ধাপে দুজন ব্যক্তি নির্বাচনী সংহিসতায় মারা গেছেন। তারা ভোটকেন্দ্রের বাইরে স্থানীয় গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারিতে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে স্থানীয় প্রশাসন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রাণহানি আশা করে না। কিন্তু এরপরও অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। এক্ষেত্রে কমিশনের ব্যর্থতা নেই। কারণ সহিংস ঘটনাগুলো স্থানীয়ভাবে সংঘটিত হয়। সরাসরি কমিশনের কোনো দায় নেই। এটা স্থানীয় প্রশাসন দেখবে। ওভারঅল নির্বাচন ভালো হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রমুখী হয়েছেন। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে।