প্রয়োজনের তুলনায় নেই প্রশিক্ষিত নার্স, মান বাড়ছে না সেবার

2

কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বাড়ছে হাসপাতাল ও ক্লিনিক। পাশাপাশি চাহিদা বাড়ছে চিকিৎসক ও নার্সের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স থাকতে হবে। আমাদের দেশে দুজনও নেই। প্রশিক্ষিত নার্সের হিসাবে গেলে সেটা আরও কম। রাজধানী, বিভাগ কিংবা জেলা পর্যায়ে কিছু প্রশিক্ষিত নার্স থাকলেও মফস্বলে নগণ্য। এতে চিকিৎসায় বাড়ছে না সেবার মান।
বর্তমানে দেশে সরকারি ৬৫৪টি হাসপাতালে ৫১ হাজার ৩১৬টি শয্যা রয়েছে। বেসরকারি ৫ হাজারের বেশি হাসপাতালে রয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১৮৩টি শয্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে, প্রতিটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স ও পাঁচজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকার নিয়ম রয়েছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) পরিসংখ্যান অনুসারে, বর্তমানে দেশে বিএমডিসির অনুমোদনপ্রাপ্ত এমবিবিএস এক লাখ আট হাজার ও ডেন্টাল সার্জন ১১ হাজার ৩৫০ জন মিলিয়ে মোট চিকিৎসকের সংখ্যা এক লাখ ১৯ হাজার ৩৫০ জন। একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স থাকার হিসাবে প্রয়োজন মোট তিন লাখ ৫৮ হাজার ৫০ জন নার্স । গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে বিভিন্ন মেয়াদে (চার বছর থেকে ছয় মাস) প্রশিক্ষণ ও সনদপ্রাপ্ত নার্সের সংখ্যা এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৩ জন। ঘাটতি ২ লাখ ৪৯ হাজার ১৫৭ জন নার্স।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনো হাসপাতালে রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষিত নার্স অপরিহার্য। চিকিৎসকরা রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিলেও মূলত নার্সরাই নিয়মিত রোগীর পাশে থেকে খোঁজ-খবর (উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস, অক্সিজেন লেভেল ও জ্বরসহ অন্যান্য পরিমাপ) নেওয়ার পাশাপাশি সেবা দিয়ে রোগীকে সুস্থ করে তুলতে সহায়তা করেন। টানা দুই বছর ধরে চলমান মহামারি করোনাকালেও নার্সরা অসংখ্য রোগীকে সেবা দেওয়ার মাধ্যমে সুস্থ করে তুলেছেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) থেকে প্রাপ্ত এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, মহামারিকালে এখন পর্যন্ত চিকিৎসক ও নার্সসহ মোট নয় হাজার ৬০৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিন হাজার ১৬০ জন চিকিৎসক, দুই হাজার ৩৪২ জন নার্স এবং চার হাজার ১০৫ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনারোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে সংস্পর্শে আসায় পরিসংখ্যানের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে নার্সের সংখ্যা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ জরুরি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নার্স নেতা বলেন, দেশে এখনো প্রশিক্ষিত নার্সের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। ফলে বহু হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বিশেষ করে মফস্বল এলাকায় প্রশিক্ষিত নার্স নেই বললেই চলে। সনদপ্রাপ্ত নার্স ছাড়াই চলছে বহু হাসপাতাল ও ক্লিনিক। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ভুয়া নার্স ধরা পড়ারও নজির রয়েছে।
বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিভিন্ন মেয়াদের মোট এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৩ জন নার্সের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সের নার্স রয়েছেন ২০ হাজার ১৭৩ জন। এ কোর্সে ভর্তির যোগ্যতা ন্যূনতম এসএসসি ও বয়স অনূর্ধ্ব ২২ বছর। একবছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মিডিওয়াইফারি (ডিপ্লোমা নার্সিং কোর্স করার পর) ডিগ্রিধারী রয়েছেন ১৮ হাজার ২৮২ জন। একবছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন অর্থপেডিক নার্সিং (ডিপ্লোমা নার্সিং কোর্স করার পর) ডিগ্রিধারী এক হাজার ৬৮৭ জন।
এছাড়া চারবছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্সেস অ্যান্ড মিডওয়াইফারি/অর্থপেডিক (২০০৩ সাল থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে এইচএসসি পাস) ডিগ্রিধারী রয়েছেন সাত হাজার ৪৩২ জন। তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি (এইচএসসি ২০০৭-২০০৮ সেশন) আছেন ৪২ হাজার ৪৮ জন। এছাড়া তিনবছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি (এইচএসসি ২০১২ ও ২০১৩ সাল থেকে শুরু) ডিগ্রিধারী ৬ হাজার ২৮৫ জন রয়েছেন।
চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং (এইচএসসি সায়েন্স অ্যান্ড বায়োলজি ২০০৭ ও ২০০৮ সেশন) ডিগ্রিধারী আছেন ছয় হাজার ৬৬৪ জন। দুই বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) পাঁচ হাজার ৬৫৯ জন, বিএসসি ইন পাবলিক হেলথ নার্সিং ১ হাজার ৪২৮ জন। একবছর মেয়াদি সাইক্রিয়াটিক নার্স ৮২ জন, একবছর মেয়াদি অফথালমিক নার্স ৩১ জন, একবছর মেয়াদি পেডিয়েট্রিক নার্সিং ৯০ জন।
এক বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন কার্ডিয়াক নার্সিং অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার নার্সিং ৩০১ জন। একবছর মেয়াদি চেস্ট ডিজিজ নার্সিং ৪৪ জন। একবছর মেয়াদি রিহ্যাবিলিটেশন নার্সিং ৩৭ জন। ছয় মাস মেয়াদি অ্যাসিস্ট্যান্ট নার্স দুই হাজার ৪২৫ জন। ২৭ মাস মেয়াদি এমসিএইচ ভিজিটরস ৫০৪ জন। ১৮ মাস মেয়াদি ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর সাত হাজার ২১১ জন। ছয়মাস মেয়াদি জুনিয়র নার্সিং (এসএসসি) ১৮১ জন রয়েছেন।
এছাড়া ছয় মাস মেয়াদি সিএসবি অ্যাটেনডেন্ট (এসএসসি শুধুম নারী স্বাস্থ্য সহকারী) নয় হাজার ৩০৩ জন। দুই বছর মেয়াদি কমিউনিটি প্যারামেডিক (এসএসসি) দুই হাজার ৩০৯ জন এবং ছয় মাস মেয়াদি পোস্ট বেসিক মিডওয়াইফারি ট্রেনিং সম্পন্নকারী দুই হাজার ৩০৯ জন রয়েছেন।