পুলিশী নির্যাতনে রায়হান হত্যা মামলা ॥ পলাতক আসামী নোমানের পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়ায় বিচার পিছিয়েছে

3

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীতে পুলিশী নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া ফের পিছিয়েছে। সোমবার সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চাঞ্চল্যকর এই মামলার শুনানির তারিখ ধার্য ছিলো। এই মামলার পলাতক আসামি আব্দুল্লাহ আল নোমানের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়ায় বিচারক আবদুল মোমেন শুনানি পিছিয়ে দেন।
এদিকে, কারাবন্দী থাকা আলোচিত মামলার এজাহারভুক্ত আসামী সাময়িক বহিষ্কৃত এএসআই আশেক এলাহী মহানগর হাকিম আদালতে জামিন আবেদন করেন। দুপুরে জামিন আবেদনের শুনানি শেষে বিচারক মো. আব্দুর রহিম তার জামিন না মঞ্জুর করেন।
জানা যায়, কথিত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান আলোচিত এই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে রায়হানকে নির্যাতনের আলামত নষ্ট করা এবং মামলার প্রধান আসামি বহিষ্কৃত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায় নোমান ছাড়া এজাহারভুক্ত সব আসামিই কারাগারে আছেন। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আবুল মোমেন রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে নোমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। তাকে গ্রেফতারী করতে না পারায় নোমানের মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। এরপর গত ২২ ডিসেম্বর নোমানের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আমিরুল ইসলাম। তবে ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়ায় সোমবার বিচারকাজ শুরু হয়নি।
আদালতের নির্দেশের পরও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়া প্রসঙ্গে আদালতের সরকারি কৌশলি জাহাঙ্গির আলম বলেন, পত্রিকায় আদালতের মাধ্যমেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এধরণের ক্ষেত্রে সাধারণত কয়েকটি মামলা একসাথে করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এ কারণে হয়তো দেরি হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে বন্দরবাজার পুলিশের ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নগরীর আখালিয়ার যুবক রায়হান আহমদকে নির্যাতন করা হয়। পর দিন ১১ অক্টোবর সকালে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ ৪ জনকে সাময়িক বরখাস্ত ও ৩ জনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে প্রধান অভিযুক্ত আকবর ১৩ অক্টোবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান। ৯ নভেম্বর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই (সাময়িক বরখাস্ত) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (৩২) প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী (৪৩), কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ (৩২), টিটু চন্দ্র দাস (৩৮), ফাঁড়ির ‘টু-আইসি’ (সেকেন্ড-ইন-কমান্ড) পদে থাকা সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন (৩২) ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কথিত সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (৩২)।