সারাদেশে ২৪ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১০৫টি মামলা ॥ প্রতারিত গ্রাহকরা ন্যায় বিচার পাবেন : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

5

কাজিরবাজার ডেস্ক :
গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে এ পর্যন্ত ২৪টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সারাদেশের বিভিন্ন থানায় ১০৫টি মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী কিনতে এসব প্রতিষ্ঠানকে অগ্রিম টাকা প্রদান করেছিলেন। কিন্তু অর্ডার মতো পণ্য না দিয়ে বরং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করে। প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে সরকারী সংস্থাগুলো। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দেশের প্রচলিত আইনে বিচারকার্য সম্পন্ন করে এদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি তারা কেন্দ্রীয় ডিজিটাল ই-কমার্স নীতিমালা মেনে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ পাবে। শুধু তাই নয়, প্রতারিত গ্রাহকরা ন্যায় বিচার পাবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
জানা গেছে, প্রতারণা করে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে চালানো অভিযানে ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে, আলোচিত ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রাসেল ও তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, এসপিসি ওয়াল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোঃ আল আমীন ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শারমীন আক্তার, কিউকমের প্রধান নির্বাহী রিপন মিয়া ও রিং আইডির পরিচালক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়া মামলা রয়েছে এমন ২৪টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছেÑ ইভ্যালি, যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সারাদেশে ২০টি মামলা রুজু করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। এরপরই রয়েছে ই-অরেঞ্জ যাদের বিরুদ্ধে সারাদেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সাতটি। দুটি করে মামলা হয়েছে রিং আইডি, গ্লোবাল গেইন ই-কমার্স ও ধামাকা শপিংয়ের বিরুদ্ধে, গ্লোবাল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তিনটি, আনন্দের বাজারের নামে একটি, আনন্দ বাজারের নামে দুটি, দালাল প্লাস দুটি, এমাসবিডি দুটি, ফাল্গুনি শিপ বিডি একটি, সিরাজগঞ্জ শপ একটি, এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস দুটি, ২৪টিকিটি লিমিটেড ৩টি, নিরাপদ শপ একটি, র‌্যাপিড ক্যাশ ক্যাশ-কুইক অনলাইন ইলোনস এ্যাপ একটি, সহজ লাইফ এ্যান্ড লাইভলি লাইফ দুটি, এহসান গ্রুপ চারটি, তাহলে ডট কম একটি, আলিফওয়ার্ল্ড একটি, মাইক্রোট্রেড গ্রুপ ডট কমের নামে একটি, ডিজাইন ফ্যাশন একটি এবং জিকা বাজার লিমিটেডের নামে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। অর্থাৎ ২৪টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সারাদেশে ১০৫টি মামলা রুজু করেছেন প্রতারিত গ্রাহকরা। পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স স্পেশাল ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট শাখা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটি থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হযেছে- কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সিআইডিসহ অন্যান্য সংস্থা কর্তৃক অভিযুক্ত কিংবা ইতোমধ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে এমন ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত তালিকা চাওয়া হয়। ওই পত্রের প্রেক্ষিতে সিআইডিসহ বাংলাদেশ পুলিশের মাঠ পর্যায় থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ই-কমার্স সংক্রান্ত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সমন্বয়ক এএইচএম সফিকুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই সেসব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের বকেয়া অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ফেরত দেয়া হবে। এ কারণেই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে সব মামলার তথ্য মন্ত্রণালয়ে জানাতে পুলিশ সদর দফতরকে অনুরোধ করা হয়েছিল। সিআইডির তথ্যের ভিত্তিতে পেমেন্ট গেটওয়েগুলোকে গ্রাহকদের টাকা ফেরতের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকেও প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নতুন করে কাজ শুরু করা হবে। তিনি বলেন, গ্রাহক স্বার্থ সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়ে একটি সমাধানের পথ বের করতে কাজ করা হচ্ছে। প্রতারিত গ্রাহকরা ন্যায় বিচার পাবেন।
টাকা ফেরত দেয়ার উদ্যোগ : যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা নেই, পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানের কাছে তাদের ক্রেতাদের আটকে থাকা টাকা দ্রুত ফেরত দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেল থেকে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের ৩০ জুন ই-কমার্স নির্দেশিকা জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, গ্রাহক পণ্য বুঝে পাওয়ার পর বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান টাকা পাবে। তবে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান পণ্য সরবরাহ না করলে টাকা কিভাবে ক্রেতার কাছে ফেরত যাবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। একটি এসক্রো সার্ভিস চালুর কথা বলা হলেও তা এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি। ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনেক গ্রাহকের টাকা পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানের কাছে আটকে গেছে। ৩০ জুনের পর থেকে গত অক্টোবর পর্যন্ত পেমেন্ট গেটওয়ে কোম্পানিগুলোর কাছে ২১৪ কোটি টাকা আটকে পড়েছে। এসব টাকার একটি বড় অংশ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ফ্রিজ করে রাখার জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে অনুরোধ করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই টাকা ছাড় করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সিআইডিকে অনুরোধ করে। পাশাপাশি আইন মন্ত্রণালয়েরও মতামত নিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক মতামত পাওয়ার পরই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে চিঠিতে বলা হয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে কোন মামলা নেই, তাদের গ্রাহকদের টাকা দ্রুত ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইতোমধ্যে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের যেসব ক্রেতা আগাম টাকা পরিশোধ করে পণ্য পাননি, তাদের ৫৬ কোটি ৮৫ লাখ ৬৭ হাজার ৬৭৪ টাকা ছাড় করতে ৩ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এগুলো হচ্ছে- ব্যাংক এশিয়া, ইসলামী ব্যাংক এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোর এমডিদের এ চিঠি পাঠানো হয়। ফস্টার কর্পোরেশনের ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা কিউকমের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এ চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে টাকা ছাড়ের জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২৩ জানুয়ারি কিউকমের ২০ গ্রাহককে ৪০ লাখ টাকা ফেরত দেয়। এ গ্রাহকেরা কিউকমে পণ্যের ক্রয়াদেশ দিয়ে দীর্ঘদিন পণ্য বা টাকা কিছুই পাচ্ছিলেন না। তার আগে কিউকম ও ফস্টার যৌথভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রথম দফায় ৬ হাজার ৭২১ গ্রাহকের একটি আংশিক তালিকা দেয়। তাদের ফেরত দেয়া হবে মোট ৫৯ কোটি ৫ লাখ টাকা।