অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহৃত হউক

5

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতের ঐতিহাসিক রায়ে বঙ্গোপসাগরের ওপর বাংলাদেশের প্রায় একচ্ছত্র অর্থনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলেও বাস্তবে এ খাতে তেমন অগ্রগতি নেই বললেই চলে। বঙ্গোপসাগর একটি সুবিশাল মাছ ও জলজ প্রাণীর ভান্ডার। প্রায় পাঁচ শ’ প্রজাতির সুস্বাদু মাছ রয়েছে এখানে, যার অধিকাংশই অনারোহিত। সমুদ্র তলদেশও মূল্যবান তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদের অফুরান ভান্ডার। ভারত ও মিয়ানমার এ দুটো ক্ষেত্রে সমুদ্র সম্পদ আহরণ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে সক্ষম হলেও বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে অনেকাংশে। জরিপ ও গবেষণার কাজটিও প্রায় স্থবির, গতিহীন। দক্ষ জনবলের অভাবও প্রকট। তদুপরি ১৯৭৪ সালের ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটার এ্যান্ড মেরিন জোন এ্যাক্ট’ আইনটিও সংস্কার ও সংশোধন করা হয়নি অদ্যাবধি।
সুবিশাল বঙ্গপোসাগরের বিপুল মৎস্য সম্পদ আহরণে টেকসই মৎস্য মজুদ, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা পরিচালনা এবং উপকূলীয় প্রান্তিক জেলেদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য মৎস্য অধিদফতর বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাস্তবায়ন করছে ১৮৯২ কোটি টাকার ‘সাসটেন্যাবল কোস্টাল এ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট’, যা বাস্তবায়িত হবে চার ধাপে। ২০২৩ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ হলে তা হবে বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমি বা নীল অর্থনীতির একটি বড় অগ্রগতি।
বাংলাদেশের সমুদ্র গর্ভের সম্পদ এখন পর্যন্ত প্রায় অনাবিষ্কৃত ও অব্যবহৃত। সীমিত পর্যায়ে কিছু পরিমাণ তেল-গ্যাস এবং মৎস্য সম্পদ আহরণ করা হলেও, এর পরিমাণ বঙ্গোপসাগরের অফুরান সম্পদের তুলনায় খুব নগণ্য। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে ভারত এবং ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র এলাকায় (টেরিটোরিয়াল সি) অধিকার লাভে সফল হয়। ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ ও অন্যান্য সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার লাভ করে। অথচ এই বিশাল অঞ্চলে কি পরিমাণ মৎস্য ও খনিজ সম্পদ রয়েছে, সে সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা নেই। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ব্লু ইকোনমি সেল। গভীর সমুদ্র এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও মৎস্য সম্পদ আহরণের জন্য ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বহুমুখী প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর আওতায় ৯৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হবে অত্যাধুনিক মাল্টিডিসিপ্লিনারি জাহাজ। বাকি ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে অবকাঠামো উন্নয়নসহ গবেষণার কাজে। জরিপ জাহাজের মাধ্যমে সুবিস্তৃত ও সুবিশাল বঙ্গোপসাগরের বুকে ও তলদেশে যাবতীয় মৎস্য, জলজ সম্পদ ও তেল-গ্যাসসহ মূল্যবান খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান এবং এসবের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা জানা সম্ভব হবে। প্রাপ্তিসাপেক্ষে এসব মূল্যবান খনিজ উত্তোলন ও আহরণ সম্ভব হলে আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে সুনিশ্চিত।