রেকর্ড পরিমাণ মজুদের পরও অস্থির চালের বাজার

16

কাজিরবাজার ডেস্ক :
রেকর্ড পরিমাণ মজুদ থাকার পরও কমছে না দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম। বরং বাড়তে বাড়তে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি সরু নাজিরশাইল ও মিনিকেট চালের দাম ওঠেছে ৬৮-৭২ টাকায়। আর স্বর্ণা ও চায়না ইরিখ্যাত মোটা চাল ৪৫ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। একদিকে ব্যবহার বাড়ছে অন্যদিকে অসাধু ব্যবসায়ীরা ‘অতিরিক্ত মুনাফা’ করার কারণে কমছে না চালের দাম। বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজখবর ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে যে চিত্র পাওয়া গেছে, তাতে ১৫ কারণে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এ্যানিমেল ফিড তৈরি ও রোহিঙ্গাদের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত চাল আমদানির অনুমতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া আমদানিতে শুল্ক হার কমানোর বিষয়েও জোর দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরেই অস্থির চালের বাজার। দাম বেশি বেড়ে গেলে সরকারের খোলা বাজার বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম চালু এবং শুল্ক সুবিধায় আমদানির সুযোগে অল্প সময়ের জন্য বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হয়। তবে সারাবছর বেশি দাম দিয়ে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে চাল। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ উপার্জিত অর্থের সিংহভাগ ব্যয় করছেন চাল কিনতে। এ অবস্থায় চালের দাম কমানোর কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। দাম বাড়ার পেছনে মিল মালিক থেকে শুরু করে চালের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের ‘অতি মুনাফা’ করার প্রবণতা মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম আবার বেড়ে গেছে। এতে করে বাড়ছে পরিবহন খরচ। পরিবহনে আবার চাঁদাবাজি নিত্যদিনের ঘটনা। এ অবস্থায় চালের দামও বেড়ে গেছে। তাদের মতে, দেশের বেশির ভাগ ভোক্তা চিকন ও মাঝারি মানের চাল খান। এই চাল উৎপাদন হয় বোরো মৌসুমে। গত বোরো মৌসুমের ধান-চালের মজুদ প্রায় শেষ। ফলে সরবরাহ কম।
অন্যদিকে বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালের বহুবিধ ব্যবহার বাড়ছে। এ্যানিমেল ফিড হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে চাল। মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুর খাবার হিসেবে চালের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলছে। দেশে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য গরু-ছাগল ও হাঁস মুরগির খামার। গত এক বছরে আটা ও গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব খামারে এখন চাল ব্যবহার করা হচ্ছে। এ্যানিমেল ফুড হিসেবেও কয়েক লাখ টন চালের চাহিদা তৈরি হয়েছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। মিয়ানমার থেকে আগত ১০-১৫ লাখ রোহিঙ্গার খাদ্য হিসেবেও চাল দেয়া হয়। বছরে কয়েক লাখ টন চাল খাচ্ছে তারা। এতে করে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। সরকার আগে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনলেও এখন মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করে থাকে। এতে করে মিল মালিকরা সরকারকে চাল দিলেও খোলা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাবে বাজারে চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ভোগ্যপণ্যের বড় বড় কোম্পানি যেমন স্কয়ার, প্রাণ, আকিজ, এসিআই, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও অন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মজুদ বাড়িয়ে প্যাকেট করে চাল বাজারজাতকরণ করছে। ছোট ছোট মিলাররা এখন বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে অনেকটাই জিম্মি। বড়রাই নিয়ন্ত্রণ করছে ছোটদের। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিস্তারে ইতোমধ্যে বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। সামনে লকডাউনের মতো কর্মসূচী আসছে কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে ব্যবসায়ী পর্যায়ে চালের মজুদ বাড়ছে।
জানা গেছে, দেশে উৎপাদিত চালের একটি বড় অংশ আবার বিদেশে রফতানি করা হয়। বিশেষ করে দেড় থেকে ২ কোটি প্রবাসী বিদেশে অবস্থান করছেন। তারা বাংলাদেশী চালসহ বিভিন্ন পণ্য ব্যবহার করেন। এ কারণে বিদেশেও দেশী চালের চাহিদা রয়েছে। প্রবাসীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে সুগন্ধি চালের পাশাপাশি সিদ্ধ চালও রফতানি করা হয়। এ কারণে দেশের চাহিদা মেটাতে সরকারী- বেসরকারী পর্যায়ে আবার চাল আমদানি করা হয়। থাইল্যান্ড, ভারত ও ভিয়েতনামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আসে বাংলাদেশে। বাড়তি চাহিদা পূরণে গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বেসরকারী পর্যায়ে ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। কিন্তু শুল্কমুক্ত সুবিধার বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীরা সন্তুষ্ট না হওয়ায় সেই সময় চাহিদা অনুসারে চাল আনা হয়নি। তবে সরকারী পর্যায়ে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমদানি করা হয়েছে। খুচরা পর্যায়ে বাজার নজরদারির অভাবেও দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কঠোর মনিটরিং না থাকার সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা।
এ অবস্থায় দাম কমাতে চাল আমদানির সুযোগ আবার উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। আমদানি উন্মুক্ত করা হলে ব্যবসায়ীদের মজুদকৃত চাল বাজারে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি চাল আমদানির অনুমতি প্রদানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। আশা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শীঘ্রই চাল আমদানির অনুমতি প্রদান করবেন। এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় সারাবছর ওএমএস কার্যক্রম চালু রাখা এবং ১০ কেজি দরে চাল বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ওএমএস এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি কার্যক্রম সারাবছর চালু রাখা হয় না। এর একটি সুযোগও নিয়ে থাকেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে চালের দাম ৪ শতাংশ বেড়েছে। আর গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৮ শতাংশ। সর্বাধিক বেড়েছে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম। এছাড়া গত এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে সাড়ে ৩ শতাংশ। রাজধানীর বাবুবাজার, বাদামতলী ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের আড়তগুলোয় বর্তমানে চিকন চাল জিরা নাজিরশাইল বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ থেকে ৬১ টাকা কেজি দরে। আর কাটারি নাজির (পুরনো) বিক্রি করা হচ্ছে ৬৭ টাকা কেজি দরে। কাওরানবাজার, ফকিরাপুল বাজার, কাপ্তানবাজার, খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশন মার্কেট এবং মুগদা বড়বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ওই একই চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে। পাইকারি বাজারগুলোয় আকিজ, এসিআই, তীর, প্রাণ, রশিদ, মজুমদার, এসব ব্র্যান্ডের চালের পরিমাণ বেশি। বর্তমানে পাইকারিতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৫৭ থেকে ৬১ টাকা কেজি দরে। আর খুচরা বাজারে এই চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। পাইকারি ও খুচরায় কেজিতে দামের পার্থক্য ৮-১০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চাল খুচরা পর্যায়ে বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়।
দ্রুত চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হবে : বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং দাম কমাতে শীঘ্রই চাল আমদানির অনুমতি দিতে যাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি দিলেই আমদানি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমরা দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এ লক্ষ্যে খাদ্য মজুদের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এটি সরকারের নির্বাচনী অঙ্গিকার বাস্তবায়নেরও একটি প্রতিফলন। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয় তিনি বলেন, আমরা দ্রুত বেসরকারী পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দেব। এছাড়া চালের দাম বাড়ছে কেন? এ বিষয়ে কারা জড়িত সে বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। বাজার অস্থিতিশীল সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা গেছে, সরকারের গুদামে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য মজুদ গড়ে উঠেছে। বর্তমানে মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৭ হাজার ৪৪৫ মেট্রিক টন। এই প্রথম সরকারী মজুদ ২০ লাখের বেশি। এর আগে রেকর্ড মজুদ ছিল ২০১৯ সালের অক্টোবরে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৮ মেট্রিক টন। বর্তমান মজুদ খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে সরকারকে সুদৃঢ় অবস্থানে নিয়ে এসেছে। স্বস্তিদায়ক মজুদ গড়ে উঠলেও বাজারে চালের দাম বেড়েই চলেছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাজারে চালের দাম বেড়েই চলেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে মোট খাদ্য মজুদের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ২১ লাখ মেট্রিক টন। এছাড়া আরও কিছু গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে ধারণ ক্ষমতা আরও এক লাখ মেট্রিক টন বাড়বে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে, যে কোন রাষ্ট্রের নাগরিকদের খাদ্য নিরাপত্তায় সরকারীভাবে কমপক্ষে ৬০ দিনের খাদ্য মজুদ রাখা প্রয়োজন। আমাদের মোট জনগোষ্ঠীর এক দিনের খাদ্য চাহিদা প্রায় ৪৬ হাজার টন। সে হিসাবে ৬০ দিনের জন্য খাদ্য মজুদ রাখার কথা ২৭ লাখ টন। সেখানে সরকারের কাছে খাদ্য মজুদ রয়েছে ২০ লাখ ৭ হাজার টন। পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের ঘরে, মিল, বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় খাদ্যপণ্য যথেষ্ট মজুদ রয়েছে বলে মনে করে সরকার। পৃথিবীর অনেক দেশেই এমন ব্যবস্থা নেই।
শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্রের কারণে দাম কমছে না : সরকারের মজুদে নতুন রেকর্ড তৈরি হলেও বাজারে চালের দাম কমছে না, বরং বাড়ছে। চালের বাজার অস্থিরতার পেছনে একই ব্যক্তিদের নাম আসছে বারবার। তারা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই সিন্ডিকেট প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে নেয়াও যাচ্ছে না কোন ধরনের আইনগত ব্যবস্থা। সারাদেশেই আছে তাদের সদস্য। এমনকি সিন্ডিকেটের সদস্যরা পাইকারি ও খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীও। আর তাদের পেছনে কাজ করছে শক্তিশালী চক্র। সম্প্রতি সরকারের একটি সংস্থার প্রতিবেদনে জমা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগেও একই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও নেয়া হয়নি কোন ধরনের ব্যবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে সঠিক তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন কমিটির কার্যক্রম ও মনিটরিং গতিশীল করার সুপারিশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ধানের দাম বৃদ্ধি করা হয়। পরে ধানের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে তারাই চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। কেবল ব্যাপক চাহিদা থাকা মিনিকেট ( চিকন চাল) চালের ক্ষেত্রে তারা এ কৌশল অবলম্বন করেছে। এ সুযোগে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়ে দিয়ে বাজার অস্থিতিশীল করেছেন। কিন্ত চালের দাম বাড়িয়ে কত টাকা সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে সে বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নওগাঁ ও কুষ্টিয়ার বাজারগুলোয় ধানের সঙ্কট নেই। গত বছরের তুলনায় দামও বাড়েনি। নওগাঁ সদর উপজেলা ধান-চাল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দীন খান টিপু জানিয়েছেন, বর্তমানে হাটগুলোয় প্রতিমণ (৩৭.৫ কেজি) স্বর্ণা ধান সংগ্রহের পর মিল পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ পড়ছে এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ৫৫ টাকা, যা গত বছর একই সময়ে ছিল এক হাজার ১৩০ থেকে এক হাজার ১৪০ টাকা। বর্তমানে নাজিরশাইল (সরু) ধান সংগ্রহের পর মিল পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ পড়ছে মণপ্রতি এক হাজার ৪৪০ টাকা। গত বছর একই সময়ে ছিল এক হাজার ৩৭২ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিতে এলসি বন্ধ করে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। যদি এলসি চালু থাকত তাহলে চালের দাম বাড়ত না। এলসি আবার এখন চালু করলে দাম আবার স্থিতিশীল থাকবে। স্বল্প আয়ের ক্রেতারা বলছেন, দৈনিক পাঁচশ’ টাকা আয় করা যায় না। অথচ চাল লাগে দুইশ’ টাকার। বাকি তিনশ’ টাকায় পরে আর কিছুই হয় না। শীঘ্রই অভিযান চালিয়ে চালের দাম ভোক্তার নাগালে আনার আহ্বান ভোক্তা অধিকার সংস্থা-ক্যাবের। কনজুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, বাজার তদারকি হওয়া উচিত কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে। এতে করে দাম কমতে পারে।
আমদানি শুল্ক কমানো উচিত : ভোগ্যপণ্য আমদানিতে সবসময় সতর্ক থাকেন ব্যবসায়ীরা। চাল আমদানিতে শুল্ককর ৬২ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হলেও আমদানিকারকরা উৎসাহিত হননি। আর এ কারণে বেসরকারী খাতে চাল আমদানি কম হয়েছে। অন্যদিকে গত বছরের শুরুতে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে চাল আনার জন্য ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু ওই সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও ব্যবসায়ীরা কাক্সিক্ষত পরিমাণ চাল আমদানি করতে পারেনি। শুল্ক সুবিধায় আমদানি করতে নতুন করে আর সময় বাড়ানোর জন্য আবেদনও করেনি চাল ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার বাদামতলীর এক চাল আমদানিকারক জানান, আমদানি বাড়াতে হলে শুল্ক কর ৬২ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে এনে দ্রুত আবার সুযোগ দিতে হবে। অন্যথায় ব্যবসায়ীরা আমদানি বাড়াবে না। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক দাম এবং ৬২ শতাংশ শুল্ক সমন্বয় করে চাল আমদানি করা এ মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ঝুঁকি। এ কারণে ঝুঁকি হ্রাসে প্রয়োজনে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানির সুযোগ দেয়া হোক। উল্লেখ্য, চালের বাজারের অস্থিরতা কমাতে গত বছরের ৭ জানুয়ারি আমদানিতে বিদ্যমান সাড়ে ৬২ শতাংশ শুল্ককর ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। চাল আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ ও সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশসহ মোট ৩৫ শতাংশ কমানো হয়। ওই সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছিল।