কাল উঠবে নতুন সূর্য, করোনার বিদায় প্রত্যাশা ॥ বিশ্বকে তাক লাগিয়ে উন্নয়নের মহাসোপানে দেশ

5

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ক্যালেন্ডার বদলানোর সময় হয়েছে। কিন্তু বর্ষ বিদায়ের আট-দশটা বছরের মতো নয় ২০২১। শুধু নিকট ভবিষ্যত নয়, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বারবার গল্প হয়ে ফিরবে বিদায়ী সালটি। ২০২০ সালের মতো ২০২১ সালও ছিল বিষময়। বিদায়ী দুই বছর ধরেই বিশ্বজুড়ে আলোচিত শব্দ ছিল কোভিড-১৯ বা মরণব্যাধি করোনা। তবুও আশার কথা, বিদায়ী বছরের শুরুতে আবিষ্কার হয়েছে করোনা ভ্যাকসিন। অনেক উন্নত দেশ যেটা পারেনি, বাংলাদেশ তথা ক্ষমতাসীন সরকার দ্রুত ভ্যাকসিন এনে প্রয়োগ করে করোনার ভয়াল থাবা থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে সফল হয়েছে। এরপরও প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। আরও কত মানুষের জীবন কেড়ে নিয়ে করোনা তার সংহার তাণ্ডব বন্ধ করবে তা এখনও কেউ বলতে পারছে না।
তবুও ঘরের দেওয়ালে আর টেবিলের ডেস্কে সময় এলো ক্যালেন্ডার পাল্টে দেয়ার। একটি বছর যখন চলে যায়, আমরা ফিরে দেখি বড় ঘটনাগুলো। সেখানে আমরা ভালোলাগা খুঁজি। নতুন বছর আসার কিছু দিন পরই হয়ত আগের বছরের কথা ভুলতে থাকি আমরা। কিন্তু ২০২০ সালের মতো ২০২১ সালকেও বিশ্বের প্রতিটি মানুষ মনে রাখবে, অতিমারী করোনার জন্য। গত একটি বছরে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো নিয়ে ভাবতে বসলে শুধুই চোখে ভাসবে হারানোর স্মৃতি।
আজ রাত পেরোলেই আগামীকাল ভোরের পূর্বাকাশে দেখা দেবে নতুন বছরের সূর্য। এসে গেল আরও একটা নতুন বছর। নতুন আশায় বুক বেঁধে নতুন করে পথ চলার ব্রত। কিন্তু, অতীতের বীজেই যে ভবিষ্যতের বৃক্ষ- সে তো আর নতুন নয়। তাই পেছনে ফিরতেই হয়। দেখে নিতে হয়। কেমন গেল, কী মিলল, কী হারাল। আগামীতেই বা কী হবে। এই পিছিয়ে দেখাটা পেছনে যাওয়া নয়, আসলে সামনে এগোনোর তাগিদেই।
কালেন্ডারের পাতা উল্টে বিদায় নিচ্ছে ২০২১ সাল। করোনা নামক কোভিড-১৯ অতিমারীতে আজও যেন থমকে আছে গোটা বিশ্ব। প্রতিবারের মতো বিদায়ী এ বছরটিতেও অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা, সংঘাত, রাজনৈতিক পালাবদল দেখেছে বিশ্ব, কিন্তু অতিমারীর কাছে হারিয়ে গেছে সবকিছু। প্রতিদিন এতে ঝরে যাচ্ছে বহু মানুষের প্রাণ। তাই নতুন বছরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি মানুষের একটি মাত্রই চাওয়াÑ ‘বিশ্ব মুক্ত হোক এই প্রাণঘাতী করোনা থেকে, ভয়হীন প্রাণভরে নিশ্বাস নিক বিশ্বের প্রতিটি মানুষ।’
দেখতে দেখতে কেটে গেল আরেকটি ঘটনাবহুল বছর। দিনপঞ্জিকার শেষ পাতাটি উল্টে যাবে আজ। নানা কাজের ফিরিস্তি লেখা নিত্যসঙ্গী হয়ে হাতখাতাটি হয়ে পড়বে সাবেক। পরমায়ুর বৃক্ষ থেকে ঝরে যাবে একটি পাতা। মহাকাল নামের এক অন্তহীন মরুভূমির বুকে যেন এক ফোঁটা জল। কিন্তু গোটা বিশ্বকে রীতিমতো নাস্তানাবুদ করেই বিদায় নিচ্ছে ঘটনাবহুল ২০২১।
গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বিশ্বকে তাক লাগিয়ে উন্নয়ন ও সাফল্যের মহাসোপান দিয়ে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার চাকাকে কিছুটা হলেও স্থবির করে দিয়েছিল প্রাণঘাতী এই করোনা। করোনা এদেশের ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধির চাকাকে নামিয়ে আনলেও বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশগুলো যখন বিপর্যস্ত, তখনও বর্তমান সরকারের অসামান্য কৃতিত্বে দেশের অর্থনীতি সচল রেখেও কার্যকরভাবে করোনা মোকাবেলা করতে সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। সর্বশেষ ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারাবিশ্বের মধ্যে করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ ২০তম স্থান অর্জন করেছে। বিদায়ী গত দুই বছর ধরেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে কয়েকটি নতুন শব্দের সঙ্গে নিজের জীবনকে মানিয়ে নিয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়া, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন, করোনা নেগেটিভ-পজেটিভ এবং সর্বশেষ করোনা থেকে মুক্তির জন্য ভ্যাকসিন বা টিকা। বাংলাদেশে দুই ডোজ টিকা গ্রহণের পর এখন চলছে বুস্টার ডোজ প্রয়োগ করে মানুষের জীবন বাঁচাতে।
প্রাণঘাতী করোনার ছোবলে বছরের অর্ধেক সময় জুড়েই প্রায় স্থবির হয়ে ছিল অর্থনীতি, রাজনীতিসহ সবকিছু। বাংলাদেশেও এই অতিমারী করোনা রাজনীতিকে স্থবির করলেও দেশের অগ্রগতি ও অর্থনীতির চাকাকে স্থবির করে দিতে পারেনি। বরং শুধু বিদায় বছর ২০২১ নয়, ক্ষমতার গত এক যুগ ধরে দেশের মানুষসহ গোটা বিশ্ব দেখছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সফলতার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যাজিক। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্ব আর কৌশলী অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ আজ নব-পরিচয়ে পরিচিতি পাচ্ছে। বিদায়ী বছরে প্রাণঘাতী করোনা অতিমারীসহ শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে যাওয়ার রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। আর এই এগিয়ে যাওয়ার গল্পের প্রধান কারিগরই হচ্ছেন রেকর্ড সংখ্যক চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা।
আজ মহাকাল সেভাবেই মুছে দেবে বহুল আলোচিত ২০২১কে। ‘যেতে নাহি দিব’-এ চিরন্তন বিলাপধ্বনির ভেতরে আবহমান সূর্য একটি পুরনো দিবসকে আজ কালস্রোতের উর্মিমালায় বিলীন করে পশ্চিম দিগন্তে মিলিয়ে যাবে। বর্ষবরণের আবাহন রেখে কুয়াশামোড়া পা-ুর সূর্য আজ বিদায় নেবে মহাকালের যাত্রায়। সময় হলো খ্রিস্টীয় ২০২১ সালকে বিদায় বলার। খ্রিস্টীয় নতুন বছর ২০২২ সালকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত গোটা বিশ্ববাসী।
সময় যায়। সময় যাওয়ার সময় বদলে যায় অনেক কিছুই। এ হলো পরম সত্য। সময় যেন এক প্রবহমান মহাসমুদ্র। কেবলই সামনের এগিয়ে যাওয়া, পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। তাই তো জীবন এত গতিময়। সেই গতির ধারাবাহিকতায় মহাকালের প্রেক্ষাপটে একটি বছর মিলিয়ে গেল। আজ আলোড়িত বর্ষ বিদায়ের দিন। জীর্ণ ঝরা পল্লবের মতো সরল রৈখিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে আজ খসে পড়বে ‘২০২১’। মধ্যরাতে নতুন বছর ২০২২-কে স্বাগত জানানোর উৎসবের বাঁশি বেজে উঠবে সবার প্রাণে। তবে প্রতিবছরের মতো নতুন বছরেও উৎসবে মেতে উঠতে পারবে না বিশ্বের মানুষ। তবে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কণ্ঠে, প্রাণে ও আকুতিতে থাকবে একটিই মাত্র স্লোগানÑ ‘করোনা তুমি বিদায় হও, বিশ্বকে পূর্বের মতো সুন্দরভাবে বাঁচতে দাও’।
আগামীকাল থেকে শুরু হবে নতুন প্রত্যাশার নতুন বছর, কিন্তু যে বছরটি হারিয়ে গেল জীবন থেকে, ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে, তার সবই কি হারিয়ে যাবে? মুছে যাবে সব? না, সবকিছু মুঝে যায় না। ঘটনাবহুল ২০২১-এর ঘটনার রেশ টেনেই মানুষ এগিয়ে যাবে ২০২২ সালের মধ্যরাত্রির পথে। অনেক ঘটনা মুছে যাবে বিস্মৃতির ধুলোয়। আবার পাওয়া না পাওয়ার অনেক ঘটনা থাকবে উজ্জ্বল হয়ে। বিশ্বের সব মানুষের প্রত্যাশা ঘাতক এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পাবে সবাই, আর মাস্ক, কোরায়েন্টাইন কিংবা আইসোলেশনে নয়, বুক ফুলে মুক্তির বাতাস গ্রহণ করবে প্রাণভরে।
প্রতিবারের মতো এবারও নতুন সূর্যালোকে নতুন আশা ও স্বপ্ন নিয়ে নতুন একটি বছরে যাত্রা শুরুর জন্য প্রস্তুত সবাই। অসীম প্রত্যাশা নিয়ে মানুষ অপেক্ষা করছে আজ মধ্যরাতের প্রথম প্রহরের জন্য, যখন সূচিত হবে নতুন আকাক্সক্ষায় উদ্ভাসিত হবে নতুন বছর। যে বছরের খেরোখাতায় চোখ বুলালেই বয়ে যায় আনন্দ-বেদনার স্রোত। তবে এবার সুখের চেয়ে বেদনায় গোটা বিশ্বকে নীল করেই বিদায় নিচ্ছে ২০২১ সাল। হিসাবের খেরোখাতায় জমে আছে অনেক বিয়োগ-ব্যথা, হারানোর কান্না, নানা গ্লানি আর মালিন্যের দাগ। বছরজুড়ে অপ্রত্যাশিত নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় আমাদের মন ভীষণ ভারাক্রান্ত, তবু নিরাশার গভীর থেকে ফুটে ওঠে বিপুল আশার আলো, ধ্বংসস্তূপ থেকে ফোটে নবতর জীবনের ফুল। আমরা আবারও মেতে উঠি সৃষ্টিসুখের উল্লাসে, বৈরী সময়কে মাড়িয়ে হেসে গেয়ে উঠি জীবনের জয়গান।
আজ রাত পেরোলেই কাল পূর্বাকাশে উঠবে যে নতুন সূর্য- সে সূর্য নতুন বছরের। নতুন আশায় বুক বেঁধে আরও একটি নতুন বছরের দিনলিপি পড়ে থাকবে পেছনে। নতুন বছরে নতুন সূর্যের অসীম প্রতীক্ষা মানুষের। উৎসব করতে না পারলেও করোনা থেকে মুক্তির প্রত্যাশা নিয়েই এবার মানুষ স্বাগত জানাবে ইংরেজী নতুন বছর ২০২২ সালকে। ইংরেজী পঞ্জিকার সার্বজনীনতায় কাল বিশ্ববাসীও মেতে উঠবে নতুন বছরের আগমনী বার্তায়। স্বপ্ন আর দিনবদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার রক্তিম আলোয় উদ্ভাসিত শুভ নববর্ষ ২০২২। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’- উচ্চারিত হবে বিশ্বের শত কোটি মানুষের কণ্ঠে।
যে প্রত্যাশার বিশালতা নিয়ে ২০২১ সালের যে প্রথম দিনটি বরণ করা হয়েছিল, সেই প্রত্যাশার সব কি পূরণ হয়েছে। হয়নি। কিন্তু যা পাওয়া গেছে তাও কম নয়। নানা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শক্তভাবে মোকাবেলা করে সৃষ্টির জাগরণে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। করোনা মহামারীর মধ্যেও সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় আজ সবদিক থেকে সমৃদ্ধির মহাসড়ক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। হয়েছে পদ্মা সেতুর মতো আত্মমর্যাদার প্রতীক। প্রবৃদ্ধি ও রিজার্ভে সৃষ্টি করেছে নতুন নতুন মাইলফলক।
বিদায়ী ২০২১ বছরটাও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ শুরু করেছিল উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাযজ্ঞ নিয়েই। কিন্তু করোনাভাইরাস সেই গতি থমকে দিতে বারবার আঘাত হানে। করোনায় প্রভাব ফেলে উন্নয়ন, অগ্রগতি, অর্থনীতি- এমনকি রাজনৈতিক পরিস্থিতিও। করোনার আঘাতে বিশ্বের মোড়ল বলে খ্যাত উন্নত দেশগুলোও যখন বিপর্যন্ত, অর্থনীতি-রাজনীতি স্তব্ধ- এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও বিশ্বকে তাক লাগিয়ে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে বিদায়ী বছরে ভয়াল করোনা মোকাবেলা, স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা, একটি মানুষকে বুভুক্ষ যেন না থাকে সেজন্য সবার ঘরে ঘরে খাদ্য-নগদ অর্থ পৌঁছে দেয়ার বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পাশাপাশি পুরো বছর ধরে রাজনীতির মাঠ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে সর্বত্র উন্নয়ন-অগ্রগতির চাকা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আর এর প্রধান চালিকাশক্তিই ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে সমান্তরালভাবে ব্যবহার করে করোনা মোকাবেলার পাশাপাশি বিশাল অঙ্কের প্রণোদনা দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল, দলে শুদ্ধি অভিযান, সম্মেলন হয়ে যাওয়া জেলা-মহানগরসহ সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে দলকে সারাদেশে চাঙ্গা করে তোলা, বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোতে ক্লিন ইমেজের নতুন নেতৃত্ব গঠন, দুর্নীতিবিরোধী অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বের কাছে বিস্ময়। আর বিস্ময়কর সাফল্যের কারিগরই হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে জ্বলছে বিদ্যুতের আলো, ঠিকানাবিহীন অসহায় গৃহহীন লাখ লাখ মানুষ পেয়েছে বিনা পয়সায় দুই শতক জায়গার ওপর নির্মিত বাড়ি, স্বপ্নের ঠিকানা।
ভূমিধস সংখ্যাগরিষ্ঠতা আসনে বিজয়ী হয়ে রেকর্ড সংখ্যক চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা গত এক যুগে রাজনৈতিকভাবেই শুধু কোণঠাসাই নয়, অস্তিত্বের চরম সঙ্কটের মুখে দাঁড় করিয়েছেন প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নতুন মুখোশ নিয়ে আবির্ভূত হওয়া যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্টের জোটকে। ক্ষমতার গত প্রায় এক যুগ ধরেই গোটা বিশ্ব দেখছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সফলতার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যাজিক। দেশের উন্নয়ন তিনি এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে, একাত্তরের পরাজিত পাকিস্তান এখন বাংলাদেশ হতে চায়। কেননা প্রধান ১০ সূচকের সবই পরাজিত পাকিস্তান এখন বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে।
সকল ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে প্রমত্তা পদ্মা সেতুর বুকচিরে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণযজ্ঞ প্রায় সম্পূর্ণ হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। নির্মাণ কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে রাজধানীতে মেট্রোরেল নির্মাণ। দেশের ইতিহাসে জাতীয় প্রবৃদ্ধি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়ে দারিদ্র্যের হার ২০ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে সরকার। সরকারের দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় বাংলাদেশ পেয়েছে বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। নতুন বছর ২০২২ সালের অনেক প্রত্যাশার বীজও বনে গেছে বিদায়ী ২০২১।
করোনাভাইরাসের কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতির মাঝেও আর্থিক দিক থেকে অনেকটা হেসে-খেলেই বিদায়ী বছরটা পার করেছে সরকার। বিদায়ী বছরটা অনেক কারণেই মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কেননা বিদায়ী বছরে করোনার মধ্যেও জাতির পালন করেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। এক অন্যরকম মুক্তিযুদ্ধের গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল গোটা দেশেই। দুই দফা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত বর্ণিল আয়োজনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ সার্কভুক্ত পাঁচটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা। বিশের সব প্রভাবশালী দেশই অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির বিস্ময়কর অগ্রযাত্রার প্রশংসা করেছেন। সর্বশেষ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
বিদায়ী বছরে বেশিরভাগ সময় রাজনীতির মাঠ শান্ত থাকলেও দেশের বিভিন্নস্থানে সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করে হেফাজতে ইসলামী। দুর্গাপূজার সময় অনেক ম-পও জ্বালিয়ে দেয় উগ্র জঙ্গীবাদী অপশক্তিরা। এর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী অপশক্তিকে শক্তহাতে নির্মূল করতে রাজপথে নানা কর্মসূচী পালন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। সরকারও শক্তহাতে অপশক্তিকে মোকাবেলা করে। তীব্র গণবিস্ফোরণের ভয়েই উগ্রবাদীরা আবারও গর্তে লুকাতে বাধ্য হয়েছে।
এখন নতুন বছর আর নতুন সূর্যের অপেক্ষায় দেশবাসী। অপেক্ষা কেবল মানুষের নিরাপত্তা, শান্তি, স্বস্তি, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসমুক্ত অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণ এবং সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির দেশ গড়ার। টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের কাছে এ প্রত্যাশা রেখেই আগামীকাল শনিবার থেকে নতুন বছরে, নতুন জীবনে যাত্রা করবে এ দেশের মানুষ। কাল শুরু হবে আরও একটি নতুন বছর ২০২২। বিদায় ২০২১। চিরতরে বিদায় হোক প্রাণঘাতী করোনা বা কোভিড-১৯।