রাজনগরে ইউপি নির্বাচন ॥ চা শ্রমিক, মৎস্যজীবী ও হাওরের ভোটাররা ফ্যাক্টর

6

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
চা শ্রমিক, মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও হাওরের ভোটারদের সমন্বয়ে রাজনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত। এই উপজেলায় স্বাধীনতার পর থেকে বেশিরভাগ নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়লাভ করে আসছে। বিএনপি আমলে কিছুটা ব্যত্যয় ঘটে।
আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা নেতারা রাজনীতি, নির্বাচন, সামাজিকতা, সম্প্রদায়, গোষ্ঠীসহ ভোট নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তাঁদের নেতৃত্বে এই উপজেলায় এতোদিন অনেক বিষয়ের সমাধান হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে আওয়ামী ঘরাণার নের্তৃত্ব প্রায় শূন্যের কোটায় পৌঁছেছে।
প্রবীণ নেতাদের মৃত্যুর কারণে এখন জেলার নেতারা এই উপজেলায় হস্তক্ষেপ করছেন। অবশ্য মৌলভীবাজার ও রাজনগর উপজেলা একই সংসদীয় আসনে থাকায় জেলার নেতারা বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন।
রাজনগরের ৮টি ইউনিয়ন ও মৌলভীবাজারের সদরের ১২টি ইউনিয়নে ২৬ ডিসেম্বর একই দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জেলার বড়লেখা উপজেলায় পরিবেশ মন্ত্রী এম শাহাব উদ্দিন ও কমলগঞ্জ উপজেলায় সাবেক চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি’র এলাকা থাকায় নির্বাচনে এই দুই উপজেলা আলাদা গুরুত্ব রাখে।
ইতিমধ্যে বড়লেখায় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে এবং কমলগঞ্জ উপজেলায় বাকী রয়েছে। তাই এখন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটাররা মৌলভীবাজার ও রাজনগরের নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করছেন।
রাজনগরের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইতিমধ্যে কামারচাক ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নৌকার প্রার্থী আতাউর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন। বাকী রয়েছে ৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন।
এই ৭টির মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করছে টেংরা, মনসুরনগর, মুন্সীবাজার ইউনিয়ন। টেংরা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী বিদ্রোহী) টিপু খান ইতিমধ্যে ফ্যাক্টর হয়ে আছেন দুইবার নির্বাচিত হয়ে। এই ইউনিয়নে এবার আওয়ামী লীগের নতুন প্রার্থী মাহমুদ মিয়া (আওয়ামী লীগ) ও আকমল হোসেন। এই তিনজনই সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি চা শ্রমিক ভোট নিয়ে কাজ করছেন। এই ইউনিয়নে সোনাতোলা, রাজনগর ও সাকেরা এই তিনটি চা বাগান রয়েছে। তাই সব প্রার্থীই চা শ্রমিকদের ভোটের দিকে তাকিয়ে আছেন। তবে টিপু খানের একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে যা বাকী দুজন প্রার্থীকে মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।
মুন্সীবাজার ইউনিয়নে লড়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ছালেক মিয়া নৌকা মার্কা নিয়ে। তিনি বিগত দিনে বিভিন্ন কার্মকান্ডের কারণে সমালোচিত হয়ে আছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নতুন মুখ রাহেল হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। ভোটাররা মনে করছেন এবার এই ইউনিয়নে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। কারণ রাহেল হোসেন নবীন তবে তাঁর পারিবারিক প্রভাব, অর্থবিত্ত, ক্লিন ইমেজ নির্বাচনে বড় ভূমিকা পালন করবে। এই ইউনিয়নে চা শ্রমিক ভোটাররা একটা ফ্যাক্টর। কারণ ইউনিয়ন ঘিরে করিমপুর, ইটা, উদনা ও রাজনগর এই চারটি বাগান রয়েছে।
মনসুরনগর ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান মিলন বখত। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন নতুন মুখ সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া মিলন। নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যানের বিগত দিনের কর্মকাণ্ড ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাবে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
প্রায় ৯০ শতাংশ মৎসীজীবী সম্প্রদায়ের ভোট নিয়ে গঠিত ফতেহপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে মৎস্যজীবী ভোটাররা ফ্যাক্টর। বর্তমান চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাশ এবার দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বখতিয়ার উদ্দিন।
পাঁচগাঁও ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম ছানা। ক্লিন ইমেজের অধিকারী তিনি। তাঁর সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন আজাদ মিয়া। এই ইউনিয়নে প্রায় ২৫ শতাংশ মৎসীজীবী ভোটার থাকায় তাঁরা নির্বাচনে ফ্যাক্টর হতে পারেন বলে ভোটাররা মনে করছেন।
রাজনগর সদর ইউনিয়নে নৌকা নিয়ে লড়ছেন সোহেল মিয়া। তাঁর সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান দেওয়ান খায়রুল মজিদ। বিএনপি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন জুবায়ের চৌধুরী।
এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নেই একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। একাধিক প্রার্থী থাকায় ভোট ভাগাভাগি হবে এটা নিশ্চিত। তবে এলাকার নারী ও পুরুষ ইউপি সদস্যও ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাবে বলে ভোটাররা মনে করছেন।