আজ জাতীয় আয়কর দিবস

3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সারাদেশে আজ মঙ্গলবার জাতীয় আয়কর দিবস ২০২১ পালন করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, সবাই মিলে দেব কর’। প্রতিবছর জাতীয় কর দিবস জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলেও এবার করোনা মহামারীর কারণে লোকসমাগম হয় এ ধরনের কর্মসূচী রাখেনি এনবিআর। এ কারণে কোন র্যারলির আয়োজন করা হয়নি। এমনকি কর প্রদানে উৎসাহিত করতে সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে এমন তারকাদের দিয়ে প্রচারমূলক কার্যক্রম এবার করা হচ্ছে না। এছাড়া এবার কর মেলারও আয়োজন করা হয়নি। বিভিন্ন করাঞ্চলে ছোট ছোট বুথে গিয়ে করদাতারা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। দিবসটি উপলক্ষে বেলা ১১টায় এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে ‘রূপকল্প বাস্তবায়ন ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে আয়করের ভূমিকা’ শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি থাকবেন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
জানা গেছে, প্রতিবছর ৩০ নবেম্বরই বিনা জরিমানায় আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ দিন থাকে। অন্যবছর নাগরিকদের কর দিতে উৎসাহিত করতে কর মেলার আয়োজন করা হলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার সে আয়োজন হয়নি। শীতের আগে আগে ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় এবং দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রিটার্ন জমার সময় বাড়ানোর দাবি উঠলেও বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশে রিটার্ন জমার সময় বাড়ানোর সরাসরি কোন সুযোগ নেই। সে হিসেবে রিটার্ন জমা দেয়ার শেষ দিন আজ মঙ্গলবার। কয়েক বছর আগেও প্রতিবার রিটার্ন জমার সময় বাড়ানো হতো। কিন্তু ২০১৬ সালে আয়কর অধ্যাদেশে পরিবর্তন এনে ৩০ নবেম্বর জাতীয় কর দিবসের পর রিটার্ন জমা না নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই সময় বাড়ানোর পথটি বন্ধ হয়ে যায়। যদিও গত বছর করোনার কারণে সময় একমাস বৃদ্ধি করা হয়েছিল। তবে নির্ধারিত ৩০ নবেম্বরের মধ্যেই রিটার্ন জমা দিতে ব্যর্থ হলে আবেদন সাপেক্ষে করদাতারা চাইলেই সময় বৃদ্ধি করার সুযোগ পাবেন। করদাতার রিটার্ন জমা দেয়ার যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে দুই থেকে চার মাস পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নিতে পারবেন। এজন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। যদিও আবেদন করে সময় পেলেও বিলম্ব সুদ দিতে হবে, জরিমানা দিতে হবে না। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী জরিমানা, করের ওপর ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত সরল সুদ কিংবা করের টাকার ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে বিলম্ব সুদ আরোপ করতে পারবেন।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের প্রায় ৬৮ লাখের বেশি কর শনাক্তকারী নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাদের মধ্যে ২৫ লাখের মতো টিআইএনধারী করদাতা নিয়মিত রিটার্ন দেন বলে জানা গেছে। তবে এ বছর সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। করোনা মহামারী বিবেচনায় চলতি বছরে আয়কর মেলা না হলেও এনবিআরের আওতাধীন সারাদেশে ৩১টি কর অঞ্চলে মেলার মতো সেবা দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি কর অঞ্চলে জোন ভিত্তিক বুথ, ই-টিআইএন ও তথ্য সেবা বুথ রাখা হয়েছে। আয়কর অফিসেও করদাতাদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তাই আয়কর আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই করদাতাদের রিটার্ন জমা দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন কর বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় আয়কর দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, আয়কর কেবল রাজস্ব আহরণের প্রধান খাত নয়, এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি অন্যতম মাধ্যম। প্রত্যক্ষ কর বা আয়করকে পৃথিবীর সকল উন্নত রাষ্ট্রের প্রধান কর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশ রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে সফলতার পথ ধরে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুখী-সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে। রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
জাতীয় আয়কর দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাষ্ট্রের রাজস্ব ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচী সফলভাবে বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দেশে রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি গড়ার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন উদ্ভাবনী কর্মসূচীর ছোঁয়া জাতীয় পর্যায় থেকে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। করদাতাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশের সকল কর অফিসসমূহে একযোগে নবেম্বর মাসব্যাপী করসেবা প্রদান করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতা আনয়নের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে একটি সেবাধর্মী, জনবান্ধব ও করদাতাবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। ফলে করদাতাগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর প্রদান করে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছেন।