এবার রোমাঞ্চকর ফাইনালের অপেক্ষা

3

স্পোর্টস ডেস্ক :
বাবর আজম বলেছিলেন, আমিরাত বলেই বড় স্বপ্ন তাদের চোখে। দুবাই, আবুধাবি, শারজাহ প্রতিটি ভেন্যু তাদের হাতের তালুর মতো চেনা। এখানে খেলেই র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠা। অধিনায়কের আত্মবিশ্বাসী মন্ত্রে বলিয়ান পাকিস্তানও কার্যত উড়ছিল। টানা পাঁচ জয়ে স্বপ্নের শিরোপা থেকে ছিল দুই কদম দূরে। অথচ দুবাইয়ে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিদের সেই স্বপ্নের সমাধি রচনা করে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া। এর আগে প্রথম সেমিফাইনালে আরেক হট ফেবারিট ইংল্যান্ডকে বিদায় করে চূড়ান্ত মঞ্চে পা-রাখা নিউজিল্যান্ডের সেই ম্যাচটাও ছিল দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। মোড়ল ভারত কিংবা গতবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সুপার টুয়েলভ থেকে বিদায় নিলেও দুটি সেমিফাইনালই ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জুড়িয়ে দিয়েছে। চার-ছক্কা, হাসি-কান্না, নাটকীয়তায় ভরপুর বিনোদন। এবার রোমাঞ্চকর ফাইনালের অপেক্ষা…। দুবাইয়ে আগামীকাল সপ্তম টি২০ বিশ্বকাপে এসে প্রথম শিরোপার লক্ষ্যে মুখোমুখি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। তাসমান পাড়ের চেনা দুই ক্রিকেট পরাশক্তির লড়াই দেখার অপেক্ষায় গোটা বিশ্ব।
ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তান হয়তো ফাইনালে নেই, কিন্তু দুটি দলই এবারের টি২০ বিশ্বকাপে উপভোগ্য ক্রিকেটশেলী উপহার দিয়েছে। মরুর বুকে চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি ছুটিয়েছেন জস বাটলার, মঈন আলি, মোহাম্মদ রিজওয়ান, আসিফ আলিরা। চোখ জুড়ানো বোলিং করেছেন আদিল রশিদ, শাহিন শাহ আফ্রিদি। বিশেষ করে পাকিস্তান। দলটিকে এত সমৃদ্ধ আগে কখনই দেখা যায়নি। আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বিরাট কোহলির ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়ে বাঁশিতে সুর তুলে দিয়েছিলেন বাবর আজমরা। এরপর ফাইনালে ওঠা এই নিউজিল্যান্ডকে তারা হারায় ৫ উইকেটের বড় ব্যবধানে। আফগানিস্তান, নামিবিয়া আর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও পাকিরা ছিল দুরন্ত-দুর্বার। সেই তারা সেমিফাইনালে এসে বড় ম্যাচের চাপ নিতে পারেনি। ৪ উইকেটে ১৭৬ রানের ‘চ্যালেঞ্জিং’ স্কোর এনে দিয়েছিলেন ব্যাটসম্যানরা। আইসিইউ থেকে ফিরে রিজওয়ান খেলেন ৫২ বলে ৬৭ রানের ইনিংস। অধিনায়ক বাবর ৩৯। আগের ম্যাচগুলোতে সুবিধা করতে না পারা ফখর জামান এদিন জ্বালে ওঠেন। ৩২ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় খেলেন অপরাজিত ৫৫ রানের ঝলমলে ইনিংস। পরে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের সময়েও ম্যাচের বড় একটা অংশ ছিল পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে।
১৭৭ রানের জয়ের লক্ষ্যে শেষ ৯ বলে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ২০ রান। শাহিন শাহ আফ্রিদির করা ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মিড উইকেটে উড়িয়ে মারেন ম্যাথু ওয়েড। কিন্তু বল তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন ওখানে থাকা ফিল্ডার হাসান আলি। এরপর সমীকরণ দাঁড়ায় ৯ বলে ১৮ রান। ব্যাট হাতে অতিমানবীয় হয়ে ওঠা ওয়েড টানা ৩ বলে ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচই শেষ করে দেন। ১৭ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। ১ ওভার আগে ৫ উইকেটের জয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালের টিকেট পায় অসিরা। ৩০ বলে ৪৯ রান করেন ডেভিড ওয়ার্নার। ম্যাচসেরা হন ম্যাথু ওয়েড। দুবাইয়ে গ্যালারিভর্তি দর্শকের সমর্থন, চিরপরিচিত উইকেট, দুর্দান্ত ফর্ম- বাবর আজমদের এর কোন কিছুই শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত হাসি এনে দিতে পারেনি। কেমন ছিল অস্ট্রেলিয়ার এ পর্যন্ত আসার পথটা? সুপার টুয়েলভে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫ উইকেটে হারিয়ে শুরু। দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এ্যারন ফিঞ্চদের জয় ৭ উইকেটে। তৃতীয় ম্যাচে এসে হোঁচট খায় অস্ট্রেলিয়া। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হেরে যায় ফিঞ্চ, ওয়ার্নাররা। বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে আবারও জয়ে ফেরা। সুপার টুয়েলভের শেষ ম্যাচে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অসিদের কাছে হারে ৮ উইকেটে। সেমিইনালে তো পাকিস্তানের স্বপ্নযাাত্রা থামিয়ে নাটকীয় জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। ফিঞ্চদের লক্ষ্য এখন টি২০’র অধরা শিরোপা।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ড কতটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে, সেটা গত তিন বছরের তাদের পারফরমেন্সে চোখ রাখলেই বোঝা যায়। ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গের পর, এ বছর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পরাক্রমশালী ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জেতে কেন উইলিয়ামসনের দল। আর এ বছরই তৃতীয়বারের মতো কোন আসরের ফাইনালে পা রাখল নিউজিল্যান্ড। যদিও বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে উইলিয়ামসনদের শুরুটা হয়েছিল হার দিয়ে। পাকিস্তানের কাছে ৫ উইকেটের হারে শুরু হয় তাদের। বিরাট কোহলির ভারতকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে জয়ে ফেরে তারা। পরের তিন ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের শিকার স্কটল্যান্ড, নামিবিয়া ও আফগানিস্তান। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের শোধ নেয় তারা। ২০০৭ প্রথম টি২০ বিশ্ব কাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ভারত। ২০০৯, পরের আসরেই অবশ্য শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান। ২০১০-এ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শিরোপা জেতে ইংল্যান্ড। ২০১২ এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাঝে ২০১৪ আসরে শিরোপা জেতে শ্রীলঙ্কা। এবার দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলতে যাওয়া অসিরা ২০০৭ এবং ২০১২ সালে সেমিতে উঠেছিল। নিউজিল্যান্ড সেমিতে খেলে ২০০৭ এবং ২০১৬ আসরে। কথায় আছে শেষ ভাল যার, সব ভাল তার। দুবাইয়ে সেই শেষটা দেখার অপেক্ষা, অপেক্ষা টি২০ বিশ্ব কাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন বরণের।