ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড দু’দলই জিততে আত্মবিশ্বাসী

3

স্পোর্টস ডেস্ক :
একদিকে পাওয়ার ক্রিকেটের মন্ত্রে বদলে যাওয়া ইংল্যান্ড, দারুণ ধারাবাহিক ইয়ন মরগানের দল। অন্যদিকে চিরায়ত ক্ল্যাসিক্যাল নিউজিল্যান্ড, ক্রিকেটে ভদ্রতার প্রতিমূর্ত কেন উইলিয়াম এ্যান্ড কোং। ওয়ানডের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বনাম টানা দুই আসরের ফাইনালিস্ট। জস বাটলার, ডেভিড মালান, আদিল রশিদ, ক্রিস জর্ডানদের সঙ্গে মার্টিন গাপটিল, ডেভন কনওয়ে, ট্রেন্ট বোল্টদের লড়াই। আবুধাবিতে সপ্তম টি২০ বিশ^কাপের প্রথম সেমিফাইনালে আজ মুখোমুখি ক্রিকেটে সময়ের অন্যতম দুই পরাশক্তি। সুপার টুয়েলভে পাঁচ ম্যাচের চারটি জিতে গ্রুপ-১এর সেরা হিসেবে শীর্ষ চারে উঠে আসে ইংলিশরা। অন্যদিকে গ্রুপ-২এ ভারত, আফগানিস্তানকে হারিয়ে সমান জয়ে দ্বিতীয় হয়ে সেমিতে নিউজিল্যান্ড। মাস্ল নির্ভর ধুন্ধুমার চার-ছক্কাময় ব্যাটিং যদি হয় মরগানদের শক্তির জায়গা তবে ব্ল্যাক ক্যাপসদের দুরন্ত-দুর্বার ফ্লিল্ডিং এবং ধরালো বোলিং হতে পারে বড় হাতিয়ার। সঙ্গে উইলিয়ামসনের ঠাণ্ডা মাথার নেতৃত্ব। সব মিলিয়ে উপভোগ্য এক ম্যাচ দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব ক্রিকেট। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় রাত আটটায়।
২০১৬ সালে আগের টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারের কষ্ট ইংল্যান্ড ভুলেছিল ঘরের মাঠে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতে। ২০১০-এর পর টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে আসা মরগান-বাহিনী আজ কিউইদের হারিয়ে ফাইনালের মঞ্চে পা রাখতে চায়। অন্যদিকে ২০১৫ ও ২০১৯ টানা দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও ট্রফিবঞ্চিত নিউজিল্যান্ডের টি২০ বিশ^কাপে এটিই প্রথম সেমিফাইনাল! আইসিসি টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থেকে বিশ^কাপ মিশন শুরু করা ইংল্যান্ড সুপার টুয়েলভে একটিমাত্র ম্যাচই হারে, দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১০ রানে। তার আগেই অবশ্য টানা চার জয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায়। চ্যাম্পিয়ন উইন্ডিজকে ৫৫ রানে অলআউট করে ৬ উইকেটের জয়ে শুরু। বাংলাদেশকে হারায় ৮ উইকেটে। এরপর একই ব্যবধানে জয়ের পথে উড়িয়ে দেয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়াকে। শ্রীলঙ্কাকে হারায় ২৬ রানে। দুর্দান্ত ছন্দে আছেন জস বাটলার। এবারের বিশ^কাপের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান (১০১*) পাঁচ ম্যাচে করেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪০ রান। তবে দুর্ভাগ্য ইনজুরির কারণে বড় ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেয়া জেসন রয়কে পাচ্ছে না ইংলিশরা। আছেন ডেভিড মালান, লিয়াম লিভিংস্টোন, ইনফর্ম মঈন আলি এবং অধিনায়ক মরগান। বোলিংয়ে আদিল রশিদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে। ৮ উইকেট নিয়েছেন এ লেগস্পিনার। টাইমাল মিলস, ক্রিস জর্ডান, মঈন, ক্রিস ওকসও ভাল বল করছেন।
অন্যদিকে পাকিস্তানের কাছে ৫ উইকেটের হারে আসর শুরু করার পর শক্তিশালী ভারতকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ঘুড়ে দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ড। এরপর ১৬ ও ৫২ রানে জয়ের পথে স্কটল্যান্ড এবং নামিবিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখে। আফগানিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ভারতকেও বিদায় করে দেয় উইলিয়ামসন-বাহিনী। গ্রুপ-২ থেকে পাকিস্তানের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে উঠে আসে সেমিফাইনালে। কিউইদের স্বস্তি দিচ্ছে অধিনায়কের ফর্মে ফেরা, আফগানদের বিপক্ষে ৪০ রান করে উইলিয়ামসন। মিডল অর্ডারে ডেভন কনওয়ে, গ্লেন ফিলিপসরা ধারাবাহিক না হলেও দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় সময়ে। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন ওপেনার মার্টিন গাপটিল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাফল্য পেতে আজ তাদের একসঙ্গে জ¦লে উঠতে হবে। বোলিংয়ে অস্ত্রের অভাব নেই নিউজিল্যান্ডের। দুর্র্ধষ ট্রেন্ট বোল্ট ১১ উইকেট নিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিকারি। আরেক পেসার সাউদির দখলে ৭ উইকেট। স্পিনার ইশ সোধি নিয়েছেন ৮ উইকেট। তবে চোখ ধাঁধানো ফিল্ডিংয়ে আসরে আলাদা করে নজর কাড়ছে কিউইরা।
আজকের ম্যাচে বারবার ফিরে আসছে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ^কাপের ফাইনালের স্মৃতি। লর্ডসে সেদিন মূল ম্যাচ এবং সুপার ওভার দুটিই টাই হলে বাউন্ডারি সংখ্যায় পিছিয়ে থাকায় ইংলিশদের কাছে হেরেছিল নিউজিল্যান্ড। এবার ঘুণাক্ষরেও সেটি নিয়ে ভাবতে চায় না কিউইরা। ‘এখানে এ নিয়ে (২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল) আমি কাউকে কিছু বলতে শুনিনি। আমি মনে করি ছেলেরা আবারও ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। আগে যেমনটা বলেছি, তারা ভাল দল এবং সেরা দলকে খেলার চ্যালেঞ্জ নিতে উন্মুখ। তাই আমি নিশ্চিত নই যে ২০১৯ সালের ওই ম্যাচ নিয়ে কোন চিন্তা তৈরি হবে, এমনকি সুপার ওভারে গড়ালেও।’ বলেন কোচ গ্যারি স্টিড। একটা বিষয় পরিষ্কার, এবারের টি২০ বিশ^কাপে ম্যাচ শেষে স্কোর সমান থাকলে ফল না হওয়া পর্যন্ত সুপার ওভার চলবে। তবে সুপার ওভার মানেই কিন্তু কিউইদের দুশ্চিন্তা। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এ পর্যন্ত আটবার সুপার ওভারে খেলেছে সাতটিতেই হেরে গেছে তারা। সেমিফাইনালে সুপার ওভার শুরু হওয়ার পর যদি কোন কারণে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়? সেক্ষেত্রে সুপার টুয়েলভে যে দল ভাল অবস্থানে ছিল, তারাই যাবে ফাইনালে। শুধু ফাইনালে ম্যাচ বাতিল হলে দুই দলকে যৌথভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। টি২০তে মুখোমুখি পরিসংখ্যানে এগিয়ে ইংল্যান্ড। ২১ দেখায় ১২ জয় ইংলিশদের, ৭ জয় কিউইদের। টাই ও পরিত্যক্ত হয়েছে ১টি করে ম্যাচ। আর টি২০ বিশ^কাপে ৫ দেখায় ৩ জয় ইংল্যান্ডের। ২ জয় নিউজিল্যান্ডের। এবার কি হয়, সেটিই দেখার অপেক্ষা।