জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন

5

জলবায়ু পরিবর্তনে ক্রমশ উষ্ণ হয়ে উঠছে বিশ্ব। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বিশ্বে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের বিপর্যয়। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে অনেক দেশ। কমছে ফসলের উৎপাদন। পরিবেশ বিপর্যয়ের মারাত্মক প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যের ওপর। সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়া। বিশ্বের ৬৪ শতাংশ মানুষের বসবাস এই অঞ্চলে। বিপর্যয়ের জন্য বেশি দায়ী উন্নত বিশ্ব। পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রতিশ্রুতি দিয়েও উন্নত দেশগুলো তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করছে না। প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণ ঠেকানোর কর্মপন্থা নির্ধারণে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো নগরীতে সমবেত হয়েছেন বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের সংগঠন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি হিসেবে সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিভিএফ ফোরাম এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে তিনি সম্মেলনে দুটি ভূমিকা পালন করবেন। সম্মেলনে ধরিত্রী বাঁচাতে চারটি এজেন্ডা নিয়ে সোচ্চার থাকবে বাংলাদেশ।
জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্ব বাঁচাতে প্রথম ধরিত্রী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯২ সালে। এই সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৯৪ সালে ১৯৭টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত হয় ইউনাইটেড নেশন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি)। জার্মানির বার্লিনে ১৯৯৫ সালে নবগঠিত সংগঠনের অনুষ্ঠিত হয় প্রথম সম্মেলন। ২০০৭ সালে জাপানের কিয়োটো শহরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট বিপর্যয় মোকাবেলায় প্রথম আইনগত চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। কিয়োটো প্রটোকলখ্যাত চুক্তিতে উন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের দায় স্বীকার করে নেয়। এজন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। তবে আশ্বাস আনুযায়ী সহায়তা পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১৫ সালের প্যারিস সম্মেলনে। চুক্তির মূল বিষয় ছিল ২০৫০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রী সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখা। এজন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক অনুদানেরও আশ্বাস দেয়া হয়। যথারীতি এই সম্মেলনের অঙ্গীকারও পালিত হয়নি। এবার বসছে ২৬তম জলবায়ু সম্মেলন।
জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বের সাত নম্বর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এবার চারটি প্রস্তাব উপস্থাপন করবে। এর মধ্যে রয়েছে- বৈশ্বিক তামমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে কার্বন নিঃসরণ কমানো, ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী জলবায়ু তহবিলের জন্য উন্নত দেশগুলোর অঙ্গীকার বাস্তবায়ন, দূষণ কমাতে বাংলাদেশসহ অনুন্নত বিশ্বকে সহজ শর্তে প্রযুক্তি প্রদান এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন। দাবিগুলো শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, দায়ী না হয়েও যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের জন্যও প্রযোজ্য হবে। এসব দেশের পক্ষে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ধরিত্রীকে বাঁচানোর জন্য, মানবজাতি, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গোটা বিশ্ব তাকিয়ে রয়েছে এই সম্মেলনের দিকে।