ইউপি নির্বাচন ঘিরে রক্তক্ষয়ী সহিংসতা, অস্ত্রের ঝনঝনানি ॥ সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আসন্ন দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে অস্ত্রের ঝনঝনানি বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে গত ১৫ দিনে সারাদেশে কয়েকটি জেলায় নির্বাচনী সহিংসতায় ১২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক। বৃহস্পতিবার একদিনে নির্বাচনী সহিংসতায় তিনজন খুন হয়েছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আশঙ্কা, আসন্ন ইউপি নির্বাচন ঘিরে খুনোখুনি আরও বেড়ে যেতে পারে। কয়েকটি জেলায় সংঘর্ষে নিহত ১২ জনের মধ্যে বেশিরভাগই শাসক দলের নেতা ও কর্মী। এদিকে নির্বাচনী সহিংসতা রোধে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। অপরদিকে নির্বাচনী সহিংসতা রোধে বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দফতর থেকে পুলিশের সব রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। এতে খুনোখুনি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারসহ সামগ্রিক বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া বিজিবি, আনসার সদস্যরাও নির্বাচনী নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকেন। তারা নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা রোধে কাজ করছেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ও ১৪ অক্টোবর তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্নস্থান দেশী ও বিদেশী অস্ত্রের মহড়া এবং ভাংচুরের ঘটনায় নির্বাচনী মাঠ গরম হয়ে উঠেছে। এর ফলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, ইউপি নির্বাচন নিয়ে যাতে কেউ ফায়দা লুটতে না পারে সেজন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যারা অপকর্ম করার চেষ্টা করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দর হয় সেই জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। যেকোন দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের হাতে আইনশৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ থাকে। যাতে নির্বাচনী এলাকায় খুনোখুনি ও সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটে। তারপর পুলিশ সদর দফতর থেকে ইতোমধ্যে জেলা পুলিশ সুপারদের কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। থানা ও জেলার সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের ডেকে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কোথাও সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকলে দ্রুত তা পুলিশকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের সার্বক্ষণিক টহল জোরদার করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাড়তি নজরদারি করা হচ্ছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করছেন জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা। সদর দফতরে পুলিশের উর্ধতন কয়েক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন জেলায় প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুনোখুনি বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রার্থী ও সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচন শেষে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ ও ২৮ নবেম্বর। এরই মধ্যে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে দুই ধাপের মনোনীতদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮ ও তৃতীয় ধাপে ১০০৭টি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাছাড়া ২৮ নবেম্বর দেশের ১০টি পৌরসভায়ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই খুনোখুনি, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কয়েক জেলায় বড় ধরনের সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও প্রাণহানি ঘটেছে। সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে গত ২৬ অক্টোবর সদর দফতরে অনুষ্ঠিত সভায় ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচন কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় মাঠ পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী মাঠপর্যায়ের পুলিশ ইউপি ও পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত এলাকাগুলোয় টহল ও নজরদারি জোরদার করেছে। এরপরও প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকায় হামলা, সংঘর্ষ ও খুনোখুনির মতো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ও মাঠপুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, তারা সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দফতর থেকে রেঞ্জ ডিআইজি ও এসপিদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন ও প্ল্যানিং) হায়দার আলী খান জানান, স্থানীয় পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে প্রতিটি ইউনিয়নে নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হয়। মাঠ পুলিশকে সেভাবেই নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও টহল এবং স্ট্রাইকিং ফোর্সের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য চেয়ে একটি চাহিদা দেয়া হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সে অনুযায়ী সরবরাহ করে। এর বাইরে পুলিশ একটি নিজস্ব নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে কাজ করছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা ও ঝুঁকির বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন থাকলে সেগুলো আমলে নিয়ে মাঠপর্যায়ে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে সহিংসতার বিষয়টি নির্ভর করে মূলত প্রার্থীদের আচরণের ওপর। খুনোখুনি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারসহ সামগ্রিক বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। পুলিশ ছাড়াও বিজিবি, আনসার সদস্যরাও নির্বাচনী নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকেন। তারা নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা রোধে কাজ করছেন।
নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, ‘ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে সতর্ক থাকা ও স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও এসপিদের বলেছি যাতে নির্বাচনকেন্দ্রিক কোন ধরনের সহিংসতা ঘটতে না পারে। পাশাপাশি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আমরা বিশেষ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। নির্বাচন কমিশনার, কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সফর করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। পাশাপাশি তফসিল ঘোষিত এলাকাগুলোয় পুলিশি টহল ও তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে। ইসি ও পুলিশের উচ্চ পর্যায় থেকে সতর্কবার্তা এবং মাঠপর্যায়ের পুলিশ সতর্ক থাকার পরও নির্বাচনে খুনোখুনি ও সহিংসতা থামছে না।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১৭ অক্টোবর এই উপজেলার সদর ইউনিয়নের প্রতিবেশী চিৎমরম ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নেথোয়াই মারমাকে নিজ বাসায় গুলি করে হত্যা করে একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত। ওই ঘটনার পর এই ইউনিয়নের নির্বাচন পিছিয়ে ২৮ নবেম্বর নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। কাপ্তাইয়ের বাকি তিন ইউনিয়নের নির্বাচন আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে মাগুরা সদর উপজেলার জগদল ইউনিয়নে নির্বাচনী সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। প্রথম ধাপের নির্বাচনে কক্সবাজারের মহেশখালীতে সহিংসতায় দুজন নিহত হন। বরিশালের গৌরনদীতে দুজন নিহত হন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার নরসিংদীর রায়পুরায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে কাচারিকান্দি এলাকার মলফত আলীর ছেলে সাদিব মিয়া এবং আসাদ মিয়ার ছেলে হিরণ মিয়া খুন হন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও আটজন। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার পাড়াতলী ইউনিয়নের কাচারিকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নরসিংদীর রায়পুরার কাচারিকান্দি এলাকার ইউপি মেম্বার বড় শাহ আলম ও ছোট শাহ আলম গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। এরই জের ধরে বৃহস্পতিবার ভোরে ইউপি মেম্বার শাহ আলমের সমর্থক প্রতিপক্ষ ছোট শাহ আলমের সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উভয় সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের রূপ নেয়। এতে দুই গ্রুপের লোকজন টেঁটা ও আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি বর্ষণে পুরো গ্রামে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ছোট শাহ আলম গ্রুপের সাদির (২২) ও হিরণ (৩৫) নামে দুজন ঘটনাস্থলে নিহত হয়। এতে ৮ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়। এর ৬ মাস আগে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ছোট শাহ আলম গ্রুপের ইয়াসিন ও শাহিন নামে দুজন নিহত হয়। এ ঘটনার পর বড় শাহআলম গ্রুপের সদস্যরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। শুক্রবার রায়পুরার চরাঞ্চালে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় সাব মিয়া (৫৩) নামে ১ জনকে গ্রেফতার করেছে রায়পুরা থানা পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২টি পাইপ গান ও ৩ রাউন্ড রাবার বুলেট। এ ব্যাপারে রায়পুরা থানার ওসি তদন্ত গোবিন্দ সরকার জানান, চরাঞ্চালে দুগ্রুপের সংঘর্ষে পর পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। একইদিন সকালে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় দুর্বৃত্তরা তার সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। নিহত আবু ছায়েদ ভূঞা রিপন (৪৮) উপজেলার মিরওয়ারিশপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তালুয়া চাঁদপুর গ্রামের ভূঞা বাড়ির মৃত রফিক উল্লাহ ভূঞার ছেলে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউপি নির্বাচনে বিরোধের জের ধরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। অপরদিকে বৃহস্পতিবার গভীররাতে যশোরের ঝিকরগাছায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে পৃথক সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। শিমুলিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আহত জহুরুল হক জানান, রাতে তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে মিশনপাড়া যান। ওইসময় আরেক প্রার্থী মতিয়ার রহমান সরদারের ছেলে সুবিধা ও নাতি পিয়াসের নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। তাকে ও তার কর্মী আবু সাঈদকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে তারা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। অপরদিকে যশোর ঝিকরগাছা পানিসারা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী পিকুল হোসেনের নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে বোমা হামলা চালায় অপর প্রার্থী নওশের আলী। এতে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী পিকুল জানান, তার চারকর্মী মাহাবুব, সিরাজুল, মিলন ও হাসেম আলী গুরুতর আহত হন। তাদের যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করের। অপর প্রার্থী নওশের আলী দাবি করেন, সংঘর্ষের সময় পিকুল হোসেনের লোকজন আমার গাড়ি ভাংচুর করে। জরুরী বিভাগের ডাক্তার মুরছালিন রহমান জানান জরুরী বিভাগের ডাক্তার মুরছালিন রহমান জানান, আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সকলের শরীরে কোপানোর চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে বুধবার রাতে ঢাকার ধামরাইয়ে প্রতীক বরাদ্দের পরপরই নৌকার প্রার্থী, বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় রোয়াইল, সোমভাগ ও গাংগুটিয়া ইউনিয়নে গুলি ছোঁড়া, মারধর ও পোস্টার ছেঁড়া নির্বাচনী প্রচারের অফিস ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব অভিযোগ তুলেছেন কয়েকটি ইউনিয়নের প্রার্থীরা। ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত উদ্দিন জানান, প্রাথমিক তদন্তে পোস্টার ছেঁড়ার সত্যতা মিলেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। একইদিন মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় আলমগীর হোসেন টিটুর দুই সমর্থক রিপন ও নাঈম নামে দুই যুবককে হকিস্টিক ও ইট দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। স্থানীয় ভোলাব ইউনিয়নের চারিতালুক এলাকায় এ সময় তারা প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার রাতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলার ঘোনা বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন কোয়ারপাড়া এলাকায় নৌকা ও স্বতন্ত্র মোটরসাইকেল প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ কমপক্ষে ১৭ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে এ ঘটনায় নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে ১৫ জন জ্ঞাত ও অজ্ঞাত ৫০/৬০ জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
গত ২৬ অক্টোবর রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। ঘটনার দিন রাতে উপজেলার নতুন বাজার এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত সজিবুর রহমান ৫ ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য এবং আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের জেলা কমিটির সদস্য। নিহত সজিব আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফের সমর্থক। এখানে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মহিউদ্দিন পাটোয়ারি বাদলও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে নতুন বাজার এলাকায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ ঘটনার পরের দিন ২৭ অক্টোবর ঢাকার ধামরাইয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রচারণার প্রথম দিনেই চার ইউনিয়নে গুলি ছোড়া, মারধর ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বুধবার দুপুরের দিকে প্রতীক বরাদ্দের পর বিকেলেই গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে রোয়াইল ইউনিয়নে। বিকেলের দিকে বালিয়া ইউনিয়নে মুখোমুখি দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজনের হাত ভেঙ্গে যায়। এছাড়া মাগরিব নামাজের পরপর সোমভাগ ইউনিয়নে মারধরের শিকার হন প্রার্থীসহ ৪ জন। সন্ধ্যার দিকে গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নে পোস্টার লাগাতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন আরেকজন। ২৬ অক্টোবর বগুড়ার শিবগঞ্জে আ’লীগ-জাপার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত হন ১০ জন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বগুড়ার শিবগঞ্জের কিচক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছিলেন ১১৭ জন। পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, যে এলাকায় ইউপি নির্বাচন হবে সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশের পাশাপাশি আধিপত্য বিস্তার, হামলা-পাল্টা হামলা, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ সন্ত্রাসকাণ্ড ও কেন্দ্র দখলের মতো অপরাধ ঘটতে পারে। এ আশঙ্কায় সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত অপরাধ পর্যালোচনা সভায় আইজিপি মাঠ পুলিশকে সতর্ক করে বলেছেন, ইউপি নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার, বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারসহ আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে। তাই এ বিষয়ে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলা পুলিশ সুপারদের এ বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন আইজিপি।