দক্ষিণ সুরমা সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী ছুরিকাঘাতে খুন ॥ ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন ॥ আধা ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ ॥ কলেজ বন্ধ ঘোষণা

8

স্টাফ রিপোর্টার :
দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের ক্যাম্পাসে মো. আরিফুল ইসলাম রাহাত নামে এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১ টার দিকে দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল এলাকাস্থ দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের অভ্যন্তরে সাবেক আরেক শিক্ষার্থীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন রাহাত।
নিহত রাহাত দক্ষিণ সুরমা তেতলী এলাকার ধরাধরপুর গ্রামের প্রবাসী সুরমান আলীর পুত্র। সে দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত ছিল। এ তথ্য নিশ্চিত করেন সিলেট মহানগর পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান তালকুদার।
তিনি বলেন, দুপুরে দক্ষিণ সুরমা কলেজের অভ্যন্তরে কথা কাটাকাটির জেরে একই কলেজের সাবেক এক শিক্ষার্থী রাহাতের পায়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। পরে উপস্থিতরা তাকে উদ্ধার করে সিলেটে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা রাহাত নামের ওই ছাত্রকে মৃত ঘোষণা করেন। ওসি আরও বলেন, ঘটনার সাথে জড়িতদের এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে রাহাতকে ছুরিকাঘাত করা যুবক একই কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী বলে জানতে পেরেছি। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে।
এদিকে দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শামসুল ইসলাম বলেন, দুপুরে কলেজের মূল ফটকের ভেতরে এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। পরে সে শিক্ষার্থী মারা যায়। তবে কলেজের মূল ফটকের সিসি ক্যামেরা নষ্ট থাকায় ঘটনাটি কে বা কারা ঘটিয়েছে এখনই বলা যাচ্ছে না।
অরদিকে শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায়, কাল ২২ অক্টোবর থেকে আগামী ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ দিন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে কলেজে পরীক্ষা চলমান থাকবে। এছাড়া শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এই কমিটিকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দিয়েছন কলেজের অধ্যক্ষ শামসুল ইসলাম।
সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পরে নগরী কাশ্মির গ্রুপের সামসুদ্দোহা সাদি (২০) নামের ছাত্রলীগের এক কর্মীর নাম আলোচনায় আসে। ছাত্রলীগের কর্মী সাদি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজর থানার সিলাম পশ্চিমপাড়ার আব্দুস সালামের পুত্র এবং তার সঙ্গে থাকা আরেকজন ছিলো।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাদ দিয়ে সূত্র আরো জানায়, প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার উদ্দেশে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন রাহাত। এ সময় চাচাতো ভাই রাফি তার সঙ্গে মোটরসাইকেলে ছিলেন। যাবার পথে চাচাতো ভাইকে কলেজ গেটে রেখে এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে কলেজের ভেতর যায় রাহাত। কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় কলেজের মূল গেট থেকে ২০/২৫ গজ ভেতরে সাদি ও তানভীর সিলভার রঙ্গের একটি পালসার মোটরসাইকেলযোগে পেছন থেকে এসে রাহাতের ডান পায়ের উরুতে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। ছুরিকাঘাতের পর তারা পালিয়ে যায়। পরে রাহাতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। রাহাতের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য বর্তমানে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে।
এদিকে, রাহাত হত্যার ঘটনায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক আধা ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে সড়ক অবরোধ করেন তারা। এসময় রাহাতের ‘হত্যাকারীকে’ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানান তারা। পরে দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান তালুকদারের আশ্বাসের ভিত্তিতে আধা ঘণ্টা পর বিকেল ৪টায় অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মূল ফটকসহ দক্ষিণ সুরমা কলেজে পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়েছে।