কাবুল বিমানবন্দরে হুড়োহুড়িতে নিহত ৭ ॥ উত্তরে তালেবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ

3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
তালেবানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশ ছাড়তে কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আফগানদের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। বিমানবন্দরে প্রবেশের চেষ্টাকালে রবিবার হুড়োহুড়িতে অন্তত সাত আফগান প্রাণ হারান। ১৫ আগষ্ট তালেবান আফগানিস্তান কব্জা করার পর একই ঘটনায় মোট ২০ আফগান প্রাণ হারালেন। তালেবান আফগানিস্তান দখল করলেও দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় পাঞ্জশীর এলাকা এখনও দখলে নিতে পারেনি।
পাঞ্জশীরের সিংহ বলে পরিচিত প্রয়াত আহমেদ শাহ মাসুদের ছেলে, লন্ডন কিংস কলেজের সাবেক ছাত্র আহমেদ মাসুদের নেতৃত্বে ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট অব আফগানিস্তান তালেবানের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এরই মধ্যে শনিবার তালেবান হটিয়ে উত্তরের তিন জেলার দখল নেয় তারা। জেলা তিনটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এসব ঘটনায় অন্তত এক শ’ তালেবান সদস্য নিহত হয়েছে বলে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে। জেলাগুলো ও পাঞ্জশীরের দখল নিতে চার ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে তালেবান। রবিবার তারা বলেছে, ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট অব আফগানিস্তান পাঞ্জশীরের দখল না ছাড়লে হামলা করা হবে। রবিবারও সরকার গঠন নিয়ে তালেবানের সিনিয়র নেতারা আলোচনা অব্যাহত রাখেন। তবে এ বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে তালেবান আপাতত মুখ খুলছে না। কট্টরপন্থী সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আব্দুল গনি বরাদর শনিবার কাবুল পৌঁছান। তালেবানের এক সিনিয়র সূত্র জানান, অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠনে সকলের সঙ্গে আলোচনা করবেন আব্দুল গনি। মঙ্গলবার রাতে দোহা থেকে কান্দাহার পৌঁছান তালেবানের অন্যতম এ শীর্ষ নেতা। শনিবার কাবুল আসেন। একাধিক সূত্রের খবর, সম্ভবত তিনিই আফগানিস্তানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন। আবার অনেকে তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদার নামও বলছেন। তাদের ধারণা হায়বাতুল্লাহ প্রেসিডেন্ট হলে আব্দুল গনি তার ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কাবুলে বরাদরকে স্বাগত জানাতে যাওয়া অপর এক তালেবান কমান্ডার এ ইঙ্গিত করেন। আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা খলিল হাক্কানিসহ আরও অনেকে বর্তমানে কাবুল অবস্থান করছেন। আব্দুল গনি বরাদর সম্ভবত দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবেন। সাধারণ আফগান থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন আফগানিস্তানের সরকার কাঠামো দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন। তালেবান নেতৃত্ব ইতোমধ্যে বলেছে, তাদের সরকার পশ্চিমা ধাঁচের গণতান্ত্রিক হবে না। তবে সকলের অধিকার রক্ষা করা হবে। আফগানিস্তান কব্জার পর থেকে আফগানদের মন জয়ের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তালেবান। গত কয়েকদিন ধরে কাবুলসহ অন্যান্য শহরের মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার অব্যাহত রেখেছেন নেতারা। তারপরও তাদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না আফগানরা। লোকজন ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না।
প্রয়োজনে তালেবানের সঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছে ব্রিটিশ সরকার। পাশাপাশি প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিয়েছে রাশিয়া ও চীন। তালেবানকে সরাসরি সমর্থন করেছে পাকিস্তান। রবিবার পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি কাবুল পৌঁছেছেন। রবিবার পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো জানায়, কাবুল বিমানবন্দরের বাইরের সঙ্কট দুর্ভাগ্যজনক। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদেশীদের সরিয়ে নেয়াই আমাদের লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জামানিসহ অন্যান্য দেশ কাবুল থেকে তাদের লোকজন সরিয়ে নিতে কাজ করছে। ন্যাটো আরও জানায়, আমাদের সৈন্যরা কাবুল বিমানবন্দরের বাইরের এলাকা থেকে কঠোর দূরত্ব বজায় রেখেছেন, যাতে তালেবানের সঙ্গে কোন সংঘর্ষ না হয়। তালেবান ইতোমধ্যে বিমানবন্দরের বাইরে কয়েকদফা গুলি চালালে চারদিকে আতঙ্ক ছড়ায়। আফগানিস্তানের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে ফের মুখ খোলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ পরিস্থিতির জন্য বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান তিনি। শনিবার ‘সেভ আমেরিকা’ নামের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম থেকে দেয়া সর্বশেষ বিবৃততে ট্রাম্প বলেন, বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে আনার আগেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের জন্য বাইডেনের ক্ষমা চাওয়া উচিত। একই সঙ্গে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সরিয়ে আনার আগে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার চরম ভুল হিসেবে ব্যাখ্যা করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে থাকা আমেরিকার ৮৫ বিলিয়ন ডলারের অত্যাধুনিক সব অস্ত্রশস্ত্র এখন তালেবানের হাতে। আধুনিকতম প্রযুক্তির এসব অস্ত্রশস্ত্র এখন সহজেই চীন ও রাশিয়া করায়ত্ত করতে পারে। এসব দেশ এই অস্ত্র দেখে নিজেরাই তা তৈরি করতে পারবে।