সরকার গঠনে তোড়জোড় তালেবানের ॥ আফগানরা এখনও দেশ ছাড়তে মরিয়া

5

কাজিরবাজার ডেস্ক :
এখনও দেশ ছাড়তে মরিয়া আফগানরা। এর মধ্যেই একটি নয়া সরকার গঠন নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেছে তালেবান। এ লক্ষ্যে কট্টরপন্থী সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আব্দুল গনি বরাদর শনিবার কাবুল পৌঁছান। তালেবানের এক সিনিয়র সূত্র জানান, অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠনে সকলের সঙ্গে আলোচনা করবেন আব্দুল গনি। মঙ্গলবার রাতে দোহা থেকে কান্দাহার পৌঁছান তালেবানের অন্যতম এ শীর্ষ নেতা। শনিবার কাবুল আসেন। একাধিক সূত্রের খবর, সম্ভবত তিনিই আফগানিস্তানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন। আবার অনেকে তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদার নামও বলছেন। তাদের ধারণা হায়বাতুল্লাহ প্রেসিডেন্ট হলে আব্দুল গনি তার ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
কাবুলে বরাদরকে স্বাগত জানাতে যাওয়া অপর এক তালেবান কমান্ডার এ ইঙ্গিত করেন। আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা খলিল হাক্কানিসহ আরও অনেকে বর্তমানে কাবুল অবস্থান করছেন। আব্দুল গনি বরাদর সম্ভবত দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবেন। সাধারণ আফগান থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন আফগানিস্তানের সরকার কাঠামো দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন। তালেবান নেতৃত্ব ইতোমধ্যে বলেছে, তাদের সরকার পশ্চিমা ধাঁচের গণতান্ত্রিক হবে না। তবে সকলের অধিকার রক্ষা করা হবে। আফগানিস্তান কব্জার পর থেকে আফগানদের মনজয়ের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তালেবান। গত কয়েকদিন ধরে কাবুলসহ অন্যান্য শহরের মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার অব্যাহত রেখেছেন নেতারা। তারপরও তাদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না আফগানরা। শনিবারও লোকজন ঘরের বাইরে বের হয়নি। কিছু দোকান খুললেও তাতে ক্রেতা ছিল না। এদিনও আফগানিস্তান ছাড়তে বিদেশী নাগরিক ও স্থানীয়রা কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিড় করেন। আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করা তালেবান হটিয়ে উত্তরের তিন জেলার দখল নিয়েছে বিরোধীরা। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ বাগলানের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা। এ সময় অন্তত ৩০ তালেবান নিহত হয়। নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা।
আফগানদের আশ্রয় দেবে ১৩ দেশ : আফগানিস্তান থেকে উদ্ধারকারী আফগানদের অস্থায়ীভিত্তিতে আশ্রয় দিতে এখন পর্যন্ত ১৩ দেশ রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্টনি ব্লিনকেন। উদ্ধার করা এসব মানুষকে স্থানান্তরে ট্রানজিট দিতে রাজি হয়েছে অন্য ১৩টি দেশ। এর মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যরা। যেসব দেশ উদ্ধার করা আফগানদের আশ্রয় দিতে রাজি হয়েছে তারা হলো আলবেনিয়া, কানাডা, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, চিলি, কসোভো, উত্তর মেসিডোনিয়া, মেক্সিকো, পোল্যান্ড, কাতার, রোয়ান্ডা, ইউক্রেন এবং উগান্ডা। ট্রানজিট দিতে রাজি হয়েছে বাহরাইন, ব্রিটেন, ডেনমার্ক, জার্মানি, ইতালি, কাজাখস্তান কুয়েত, কাতার, তাজিকিস্তান, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও উজবেকিস্তান।
তালেবানের সঙ্গে আশরাফ গনির ভাই : তালেবানের সঙ্গে হাত মেলালেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির ভাই। তালেবানরা তাকে সাদরে গ্রহণ করেছে। ১৫ আগষ্ট কাবুল দখল করে তালেবান। সেদিনই দেশ ছাড়েন আশরাফ গনি।
লোকজনকে সরানো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে : কাবুল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, লোকজনকে এভাবে সরিয়ে আনতে গিয়ে সেনাবাহিনী ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। কাজটি যথেষ্ট কঠিন। শুক্রবার বেলা একটার দিকে হোয়াইট হাউসে বক্তব্য দেন বাইডেন। সেখানেই তিনি এসব কথা বলেন। আফগানিস্তান থেকে মানুষ পালানোর জন্য মরিয়া। যুক্তরাষ্ট্র সেখান থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে সহায়তা করছে। বাইডেন বলেন, ইতোমধ্যে ১৩ হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। উড়োজাহাজে যেভাবে মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে, তা যথেষ্ট কঠিন কাজ ছিল। বাইডেন আরও বলেন, মার্কিনীদের মধ্যে যারাই ঘরে ফিরতে চাইবেন, তাদেরই ফিরিয়ে নেয়া হবে।
ছেলে-মেয়ে এক কক্ষে বসতে পারবে না : ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীরা একই শ্রেণীকক্ষে বসতে পারবে না বলে হেরাত প্রদেশের সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে সদ্য ক্ষমতা দখল করা তালেবান। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের সঙ্গে তিন ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত জানায় তালেবান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এ সংক্রান্ত এক পত্র পাঠিয়ে তালেবান জানিয়েছে, সহশিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই, সহশিক্ষা বন্ধের কোন বিকল্পও নেই। তাই সহশিক্ষা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
কূটনৈতিক মিশন সরাল ইন্দোনেশিয়া : আফগানিস্তান থেকে নিজেদের কূটনৈতিক মিশন সরিয়ে পাকিস্তানে নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। শনিবার ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেটনো মারসুদি এ কথা জানান। তিনি রাজধানী জার্কাতায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, অস্থায়ীভাবে ইন্দোনেশিয়ার কূটনৈতিক মিশন কাবুলের পরিবর্তে ইসলামাবাদ থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।