শোকের মাস আগষ্ট

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
‘..যদি বাঙালি হও নিঃশব্দে কাছে এসো, আরো কাছে/ যদি হও স্বাধীনতা প্রিয় মানুষ তাহলে এখানে দাঁড়াও নতশিরে/ বাতাসে শুনতে পাবে স্বাধীনতার গান/ এখানেই শুয়ে আছেন অনন্ত আলোয় নক্ষত্রলোকে/ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান/..কাঁদো বাংলার মানুষ কাঁদো/ প্রতিটি ভোর এখানে এসে দাঁড়ায় শ্রদ্ধায় নতশিরে/ রক্তিম আলোক মালায় বিনম্র্র করপুটে/ পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে যায়।’
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত স্বাধীনতার মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে কবি রবীন্দ্র গোপ তার ‘অর্ধনমিত পতাকা’ নামক কবিতায় এভাবেই কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতিকে আবাহন করেছেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। তাঁর অমোঘ গর্জনে, নেতৃত্বে, দর্শনে, অঙ্গুলী হেলনে- কোটি কোটি বাঙালিই একদিন নেমেছিল পথে, আন্দোলনে, সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামে। সুশিক্ষিত পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যার যা আছে তাই নিয়ে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়েছিল। ত্রিশ লাখ মানুষ হাসতে হাসতে জীবন দিয়ে ছিনিয়ে এনেছিল মহার্ঘ্য স্বাধীনতা।
একদিনে আসেনি বাঙালির হাজার বছরের এই লালিত স্বপ্নের বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বাঙালির অধিকার আদায়ের সব সংগ্রামেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রথম সারিতে, অনন্য ভূমিকায়। তাঁর ডাকেই সূচিত হয়েছিল ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর বৈপ্লবিক নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা।
তাই আগষ্ট এলেই কাঁদে বাঙালি। বাঙালির মন খারাপের মাস এটি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু চিরঞ্জীব। এ-প্রান্ত থেকে সে-প্রান্ত, এ ঘর থেকে সে-ঘর, সবখানে, সর্বত্র, সমানভাবে জুড়ে রয়েছেন তিনি আজও। শাহাদাতের ৪৬ বছর পরও, আজও, আলোয়-উদ্ভাসনে, সঙ্কটে ও সম্ভাবনায়, বাঙালির চিরমানসপটে চির সমুজ্জ্বল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। কারণ তিনিই তো বাঙালির শত-সহস্র্র বছরের অবিস্মরণীয় এক রাজনৈতিক নেতা, বাঙালির জাতির পিতা।
আগষ্ট মাস এলেই মনে পড়ে যায় সেই ভয়াবহ স্মৃতি, যা আমাদের বেদনার্ত করে তোলে। বিশাল হৃদয়ের যে মানুষটিকে কারাগারে বন্দী রেখেও পাকিস্তানী হানাদাররা স্পর্শ করার সাহস দেখাতে পারেনি, অথচ স্বাধীন বাংলার মাটিতে নির্মমভাবে সপরিবারে তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হারানোর সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে গোটা জাতি।
ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও বাঙালির হৃদয়ের আসনে তিনি চির ভাস্বর, চির অম্লান। বাঙালির হৃদয়ের মণিকোঠায় তিনি অধিষ্ঠিত। বঙ্গবন্ধুর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় আজও রচিত হচ্ছে সাহিত্য, ছড়া, কবিতা, গান ও গবেষণায় ইতিহাসের সত্য ঘটনার।
বাঙালির জীবনে শোকাহত ও অভিশপ্ত আগষ্ট মাসের আজ এগারতম দিন। সেই ভয়াল ও নিষ্ঠুরতম রক্তাক্ত ১৫ আগষ্ট যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই অসংখ্য শোকের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে জাতিকে পুরোপুরি কলঙ্কমুক্ত করার দাবি ততই শাণিত হচ্ছে।
শত ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ঘৃণিত খুনীদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। এখনও বেশ ক’জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর খুনী বিদেশে পালিয়ে থেকে ষড়যন্ত্র করছে। তাই এবারের জাতীয় শোক দিবসের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই সোচ্চার দাবি দ্রুত খুনীদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর এবং নেপথ্যের সকল ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হোক। নেপথ্যের মাস্টারমাইন্ডদের মুখোশ নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে দ্রুত জাতীয় কমিশন গঠনের দাবিও।
সেতু বিভাগের কর্মসূচী : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে সেতু বিভাগ নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সেতু ভবন, আওতাধীন অফিস ও পুনর্বাসন গ্রামে অবস্থিত স্কুলসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে অর্ধনমিত করবে, সকাল ৮টায় সেতু বিভাগের কর্মকর্তাগণ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন, সেতু বিভাগের আওতাধীন সকল কার্যালয়ের মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হবে, বঙ্গবন্ধু সেতু ও মুক্তারপুর সেতু এলাকায় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর হতে প্রকাশিত প্রামাণ্য চিত্র এলইডি ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে প্রচার করা হবে, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমার দেখা নয়া চীন ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক ২৬টি গ্রন্থ সেতু বিভাগের লাইব্রেরী ও পুনর্বাসন গ্রামে অবস্থিত স্কুলসমূহে সরবরাহ করা হবে এবং জুম অনলাইন প্ল্যাটর্ফমে “বঙ্গবন্ধুর জীবনালেখ্য ও যোগাযোগখাতে উন্নয়ন দর্শন” বিকেল সাড়ে ৩টায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনলাইন মাধ্যমে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত থাকবেন সেতু বিভাগের সচিব মোঃ আবু বকর ছিদ্দীক। উক্ত অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগ ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের উপসচিব/সমমর্যাদা ও তদুর্ধ কর্মকর্তাগণ এতে অংশগ্রহণ করবেন।