শোকের মাস আগষ্ট

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
‘মুজিবুর রহমান/ জীবন দানের প্রতীক্ষালয়ে লক্ষ সেনানী পাছে/ তোমার হুকুম তামিলের লাগি সাথে তব চলিয়াছে/ রাজভয় আর কারা শৃঙ্খল হেলায় করেছে জয়/ ফাঁসির মঞ্চে মহত্ত্ব তা, তখন হয়নি ক্ষয়/ বাংলাদেশের মুকুট বিহীন তুমি প্রমূর্ত রাজ/ প্রতি বাঙালির হৃদয়ে হৃদয়ে তোমার তখন তাজ।’
পল্লী কবি জসীমউদ্দীন তার ‘বঙ্গবন্ধু’ নামক কবিতায় এভাবেই বিশ্ববাসীর সামনে স্বাধীনতার মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম এবং পুরো জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে এক সুতোয় গাঁথার বর্ণনা দিয়েছেন।
বাঙালি জাতির বেদনাবিধূর শোকের মাস আগষ্টের আজ সপ্তম দিন। পুরো দেশই যেন শোকে মুহ্যমান। সর্বত্র উড়ছে শোকের পতাকা। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, অলি-গলি পর্যন্ত ছেয়ে গেছে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ছাপানো কালো ব্যানার, পোস্টার আর প্ল্যাকার্ডে। লাল, সাদা আর কালো কালিতে লেখা শোকবাণী ছড়াচ্ছে শোকের ছায়া। বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ী। স্বাধীনতায় বিশ্বাসী প্রতি বাঙালির হৃদয়ে তাঁর স্মৃতি যে অমলিন, শোকের মাস আগষ্টে প্রতিটি স্থানে তার প্রতিফলন ঘটেছে।
নানা অনুষ্ঠানমালায় কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আগষ্ট বাঙালির জীবনে শুধু শোকের নয়, একটি অভিশপ্ত মাসও বটে। কারণ এই মাসেই ঘটেছিল বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম কলঙ্কজনক ট্র্যাজেডি। একাত্তরের পরাজিত ঘাতকদের হাতে এ মাসেরই ১৫ আগষ্ট সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের যে বাড়িটি একদিন স্বাধীনতার প্রশ্নে একই পথে নিয়ে এসেছিল বাঙালিকে, সেই বাড়িটিই সেই বাঙালিকে কাঁদাল একদিন অঝোর ধারায়। বাড়িটির ব্যালকনিতে দাঁড়ানো দৃঢ়চেতা যে নেতার অঙ্গুলি হেলনে বুকের ভেতর জ্বলত মুক্তির দ্রোহ, ঘাতক নরপিশাচদের কারণে সেই পিতাই একদিন মুখথুবড়ে পড়লেন বাঙালির অনিবার্য সেই বাড়ির মেঝেতেই। সিঁড়ি গড়িয়ে বইল রক্তের ধারা।
ঘাতকের বুলেট বিদ্ধ করল কালজয়ী মানুষ বঙ্গবন্ধুকে- সপরিবারে। বিদ্ধ হলো গোটা বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশ। রচিত হলো পৃথিবীর এ যাবতকালের সবচেয়ে ঘৃণ্য ও জঘন্যতম ইতিহাস। তাই আগষ্ট এলেই মোচড় দিয়ে ওঠে বাঙালির বুকের ভেতরটা। স্মৃতির উঠোনে গল্প বুনে বেদনার।
সেই অমোঘ নেতার স্মরণে-শ্রদ্ধায়, কান্না-ভালোবাসায় বারবার অবনত হয় মাথা। কতিপয় বর্বর স্বাধীনতাবিরোধী সেনা কর্মকর্তা বর্বরোচিত অভিলাষ পূরণে গড়ল ঘৃণ্য ইতিহাস- তার মর্মবেদনা বাঙালীকে বয়ে বেড়াতে হবে অনন্তকাল। ঘৃণ্য সে কালিমায় লিপ্ত হলো সহজ-সরল বাঙালির মুখ।
বঙ্গবন্ধু-স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ এক ও অভীন্ন। স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ ইতিহাসের প্রতিটি পাতায় একটিই নাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি আজীবন সংগ্রাম আর ত্যাগে আমাদের মহান স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় তাঁরই প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল হায়েনার দল। কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যা করেও বাঙালীর হৃদয় থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি ইতিহাসের খলনায়ক বেইমান ঘাতকরা।
জাতির পিতা তাঁর জীবনের দীর্ঘ ত্যাগ, সংগ্রাম, বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্ব, অদম্য স্পৃহা, দৃঢ় প্রত্যয়, অসীম সাহসিকতা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও আদর্শের দ্বারা সমগ্র বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করেছিলেন স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে। স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত আত্মত্যাগে তিনি গোটা জাতিকে দীক্ষিত করে তুলেছিলেন। তাই আগস্ট এলেই কোটি কোটি বাঙালী শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করে তাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় বঙ্গবন্ধুকে ঠাঁই দেন।
শোকের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকরের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার দাবিতে উচ্চকিত। এবারের এ দাবির পাশাপাশি সোচ্চার দাবি উঠেছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের নেপথ্যের মদদদাতাদের মুখোশ উন্মোচন করে বিচারের মুখোমুখি করতে জাতীয় গণকমিশন গঠনের।