করোনা থেকে গোটা মানবজাতির মুক্তি কামনা ॥ লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান

17

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী থেকে গোটা মানবজাতির মুক্তি ও কল্যাণ কামনা করে আরাফাতের ময়দানে গ্র্যান্ড মুফতি ড. বানদার আব্দুল আজিজ আল বেলিলা নবীজী মোহাম্মদ (স.)’র আদর্শ বাণী অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। নবীজী বলেছেন- “তোমরা মহামারীর সময় নিজ অঞ্চল ত্যাগ করোনা এবং অন্য অঞ্চল থেকে মহামারীর স্থলে এসো না। প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করো।’
সোমবার আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, গোটা পৃথিবীর মুসলিম সম্প্রদায়ের কল্যাণে নিবেদিত রয়েছেন খাদেমুল হেরেম শরীফ বাদশাহ আবদুল আজিজ ও প্রিন্স মোহাম্মদ সালমান বিন আজিজ। তারা করোনা মহামারীর সময়ে হাজীদের কল্যাণে সামাজিক স্বাস্থ্যবিধি ও কঠোর স্বাস্থ্যনির্দেশনা অনুসরণ করে নিরাপদ হজ পালনের সুব্যবস্থা করেছেন। এ জন্য তারা নিয়োগ দিয়েছেন বিপুল সংখ্যক লোক।
এদিন সকাল থেকে লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক ধ্বনিতে পাপমুক্তি ও আল্লাহর খাস রহমতের আশায় মুসল্লিদের চোখের জলে সিক্ত হয় আরাফাতের ময়দান। দু’হাত তুলে ৬০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান ইহকাল ও পরকালের কল্যাণের পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বে শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। সোমবার দিনভর আরাফাতে অবস্থানের মাধ্যমেই সম্পন্ন হলো পবিত্র হজ। রিয়াদ থেকে প্রবাসী সাংবাদিক মোহাম্মদ আবুল বশির জানান, করোনা মহামারীর দ্বিতীয় হজে এবারও কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা হয়েছে। দুপুর সাড়ে বারোটায় মসজিদের নামিরাহ থেকে হজের খুতবা প্রদান শুরু করেন হেরেম শরীফের গ্র্যান্ড ইমাম মুফতি ড. বানদার আব্দুল আজিজ আল বেলিলা। সুদীর্ঘ খুতবায় তিনি সারা জাহানের মুসলিমদের প্রতি আল্লাহ ও রাসূলের তরিকায় সৎকর্ম করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতি উত্তম প্রতিদান রেখেছেন। দুনিয়াতে যারা এহসান করবেন পরকালে তাদের উত্তম প্রতিদান করবেনই। ড. বানদার আহকাম মেনে সঠিকভাবে হজ পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, পৃথিবীতে আরাফাতের দিন শ্রেষ্ঠ দিন। এদিন আল্লাহ প্রথম আকাশে হাজির হয়ে বান্দার আমলনানা প্রত্যক্ষ করেন। মুমিনদের এহসান হওয়ার সুযোগ ও রহমত প্রদান করেন।
তিনি আরও বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বান্দার মন্দ কাজ ঢেকে দেন ভাল কাজ দ্বারা। তওবার মাধ্যমে প্রতিটি মুসলিম এ সুযোগ পান। এমন সুযোগ কাজে লাগানো নিঃসন্দেহে দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য কল্যাণকর। আল্লাহ ভূমন্ডলে যা সৃষ্টি করেছেন সবই বান্দার রহমতস্বরূপ। নিশ্চয়ই মমিন মাত্র ভাল কাজ করেন। মমিন এহসান করেন নিজের ভালর জন্য যার প্রতিদান আল্লাহ তাকেই প্রদান করেন। কেননা আল্লাহ কখনই সৎকর্মের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। এহসান হলো এমন যেন আপনি এবাদত করছেন আল্লাহ তা দেখছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সকল সৎকর্মশীলদের প্রতি রয়েছে। ড. বানদার বিশ্বের সকল মুসলিমের প্রতি সঠিকভাবে সঠিক সময়ে নামাজ আদায় ও হজ্ব করাসহ অন্যান্য আমল করার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য ২০১৯ সালে ২৫ লাখের বেশি লোক হজ্ব পালন করলেও এ বছর সৌদিতে অবস্থানরত মাত্র ৬০ হাজার লোক হজ্ব পালন করতে পারছেন। মাত্র ১০ দিনে অনলাইনে সাড়ে পাঁচ লাখ আবেদনের মধ্যে মাত্র ৬০ হাজার লোককে নির্বাচন করা হয়। এবার হজ্বে দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী হজ্বযাত্রীদের নির্বাচন করা হয়। হজ্বের প্রাথমিক কার্যক্রম হিসেবে হাজীরা এরই মধ্যে কাবার তাওয়াফ (তাওয়াফ কুদুম) শুরু করেছেন।
আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে কমসংখ্যক হজ্বযাত্রীর অংশগ্রহণে গত বছর হজ্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারও সীমিতসংখ্যক অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে হজ্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ রোধে ২০২০ সালে দীর্ঘ ছয় মাস সর্বসাধারণের ওমরা কার্যক্রম স্থগিত থাকে। এরপর আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে সীমিতসংখ্যক অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে হজ্বের কার্যক্রম শুরু হয়।
মসজিদে নামিরার খতিব খুতবা পাঠের সময় সমস্ত হাজীই ছিলেন আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন। তাঁরা নিজ নিজ খিমায় বসে দিনভর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ক্ষণিকের জন্য ভুলে গিয়েছিলেন দুনিয়াদারির ক্ষণস্থায়ী জীবনের মায়া। আদি পিতা হযরত আদম (আ.) ও আদি মাতা বিবি হাওয়ার (আ.) মিলিত হওয়ার এবং নবীকুল শিরোমণি হযরত মুহম্মদের (স.) বিদায় হজ্বের ভাষণের সেই ঐতিহাসিক স্থান আরাফাত ময়দানে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পাপমুক্তি ও আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনা নিয়ে সোমবার সারাদিন হজ্বের মূল কাজ সম্পন্ন করেন। সেলাইবিহীন সাদা দুই খন্ড কাপড় (ইহরাম) পরিধান করে সমস্ত হাজী আরাফাতে জমায়েত হন। এ সময় তাঁদের মানসপটে ভেসে ওঠে দেড় হাজার বছর আগে বিদায় হজ্বের ভাষণের সেই ঐতিহাসিক চিত্র।