করোনা নিয়ন্ত্রণের সর্বোত্তম উপায়, বেশি বেশি পরীক্ষা চাই ॥ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন পরীক্ষা কম হওয়ায় অনেক রোগীই চিহ্নিত হচ্ছেন না

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
কঠোর বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরও করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। শহর এবং গ্রামে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরীক্ষা কম হওয়ায় অনেক রোগীই চিহ্নিত হচ্ছেন না। শনাক্ত ছাড়া রোগীরাই ঘটাচ্ছেন সারা দেশে সামাজিক সংক্রমণ। লকডাউনের পাশাপাশি আরও বেশি পরীক্ষা করে অধিকাংশ রোগী শনাক্ত করতে না পারলে সংক্রমণ কমানো কঠিন হবে। লকডাউনের পাশাপাশি বেশি পরীক্ষা করে দ্রুত সুফল পেয়েছে প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গ।
দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় প্রতিদিনই রেকর্ড হচ্ছে। করোনার ডেল্টা ধরনের কারণে ঈদ-উল-ফিতরের পর থেকেই দেশের সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। স্থানীয়ভাবে এসব জেলায় লকডাউন দেয়া হলেও রোগী শনাক্তে পরীক্ষার সংখ্যা ছিল অপ্রতুল। সীমান্তের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের সচেতনতার অভাব এবং গ্রামীণ মানুষকে দ্রুত পরীক্ষা করে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। ফলে মৃদু উপসর্গ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো রোগীরা সংক্রমণ ছড়িয়েছেন দ্রুত। বর্তমানে করোনায় রেকর্ড মৃত্যু ও শনাক্তের পেছনে জনসংখ্যার তুলনায় কম করোনা পরীক্ষাকেই দায়ী করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিশ্বের অন্য দেশ বেশি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগী শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনার ফলেই করোনা মোকাবেলায় সফল হয়েছে। ভারতে করোনার প্রকোপ বাড়ার সময় পরীক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থারও পরামর্শ ছিল করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় প্রক্রিয়া হচ্ছে দ্রুত রোগী শনাক্ত করা। সেক্ষেত্রে যতটা সম্ভব পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো উচিত। এই জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গ্যাব্রিয়াসেস শুরু থেকেই বলে আসছিলেন পরীক্ষার জন্য। তিনি সংক্রমণ রোধে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা করে রোগী শনাক্তের ওপরই গুরুত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশে এখনও তা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে বাংলাদেশে সংক্রমণের হার ৩১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলেও মঙ্গলবার সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার সংখ্যা ছিল ৪৪ হাজার ।
করোনায় গোটা ভারত যখন বিপর্যস্ত তখন পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। সংক্রমণ রোধে করোনা পরীক্ষাকেই তারা বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। একদিনে যেখানে সর্বোচ্চ পরীক্ষার সংখ্যা ছিল ৭৭ হাজারের বেশি। বিপরীতে বাংলাদেশে সংক্রমণের মাত্রা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছলেও সর্বোচ্চ ৪৪ হাজার মানুষের পরীক্ষা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ পরীক্ষার সংখ্যা কম হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ করোনা নিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গের ৯ কোটি ১৩ লাখ ৪৭ হাজার ৭৩৬ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১৩ জুলাই পর্যন্ত সেখানে মোট করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৬১ হাজার ৯৩০ জনের। সেখানে এখন পর্যন্ত মোট ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৮৭৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অথচ ১৮ কোটি বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ১৩ জুলাই পর্যন্ত মোট করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৭০ লাখ ৫৬ হাজার ৯৮৯ জনের। যেটি পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা বিশেষ করে ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ ক্ষমতা অন্য ধরনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় পরীক্ষা বাড়ানোর বিকল্প নেই। করোনা পরীক্ষা করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যদি দ্রুত অন্যদের থেকে আলাদা করা যায়, তাহলে তার থেকে অন্যরা সংক্রমিত হবে না। বেশি বেশি করোনা পরীক্ষা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশন করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট সামর্থ্য বা যথাযথ পদক্ষেপের অভাব রয়েছে বলেও মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সাম্প্রতিক সময়ে পরীক্ষা বেশি করে করোনা মোকাবেলায় সফল হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। গত মার্চ মাসে মহারাষ্ট্রে ডেল্টার প্রভাবে মৃত্যু ও শনাক্তের হার বাড়লেও পশ্চিমবঙ্গে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। এপ্রিল মাসের শুরুতেই ব্যাপকভাবে ভারতের সবগুলো রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। পশ্চিমবঙ্গে বাড়ানো হয় করোনা পরীক্ষার সংখ্যা। এপ্রিলের প্রথম দিনে পশ্চিম বাংলায় করোনার পরীক্ষার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ৭৬৬। পরদিন থেকেই আস্তে আস্তে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হয়। পরীক্ষা বাড়িয়ে রোগী শনাক্ত করে আইসোলেশন ও চিকিৎসার আওতায় আনার ফলে সেখানে করোনা পরিস্থিতি দিল্লী ও মহারাষ্ট্রের মতো হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পশ্চিমবঙ্গে পরীক্ষার সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হয়েছিল। রোগী শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনার ফলেই সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে রাজ্য সরকার। বিধানসভা ভোট চলাকালীন ১ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গে মোট ২৫ হাজার ৭৬৬ পরীক্ষা করা হয়। পরদিন ২ এপ্রিল তা বাড়িয়ে ২৬ হাজার ৯৮৬ করা হয়। এরপর ১১ এপ্রিল সেখানে বাড়িয়ে ৪০ হাজার ৩৭২ পরীক্ষা করা হয়। ২১ এপ্রিলে করোনা পরীক্ষা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ওই দিন পরীক্ষায় শনাক্ত হয় ৯ হাজার ৮১৯ রোগী। এরপর গত ১ মে পশ্চিমবঙ্গে ৫৬ হাজার ২৯৭ পরীক্ষা করা হয়, ওইদিন রোগী শনাক্ত হয় ১৭ হাজার ৫১২ জন। গত ৬ মে সেখানে মোট ৬০ হাজার ১০৫ পরীক্ষায় শনাক্ত ১৮ হাজার ৪৩১ রোগী। গত ১৯ মে ৭০ হাজার ১৩৩ পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত ১৯ হাজার ৩। এভাবে একদিনে সর্বোচ্চ ৭৭ হাজারের বেশি করোনা পরীক্ষা করা হয়। আরটিপিসিআর, এ্যান্টিজেন ও ব্যক্তিগতভাবে বাড়িতে করোনা পরীক্ষারও অনুমতি দেয়া হয় আইসিএমআরের পক্ষ থেকে।
সরকারী-বেসরকারী ও বাড়িতে বসেই করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হয় আইসিএমআরের পক্ষ থেকে। মাত্র ২৫০ টাকায় ওষুধের দোকানে কিনতে পাওয়া কোভিশেল্ফ কিটের মাধ্যমে এ্যাপস ইনস্টল করেই কিছু সহজ পদ্ধতি ব্যবহার করেই করোনার পজিটিভ নেগেটিভ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে সেখানে। শুধু করোনা উপসর্গ যাদের রয়েছে তারাই এই পরীক্ষা করতে পেরেছেন। যত্ম সহকারে সহজ পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষা করে তা স্বাস্থ্য বিভাগকে কিউআর কোডের মাধ্যমে সংযুুক্তির পদ্ধতিও রয়েছে। কোভিশেল্ফের মাধ্যমে শনাক্ত হওয়া রোগীর পজিটিভ আসলে আরটিটিসিআর পরীক্ষা না করেই চিকিৎসা শুরু করতে পারতো। আর উপসর্গ থাকলেও যদি নেগেটিভ ফল আসতো তবে তাকে আরও নিশ্চিত করার জন্য আরটিপিসিআর পরীক্ষা করতে বলা হতো। এভাবেই ভারতে করোনা পরীক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যার ফলও হাতে হাতে পেয়েছে। করোনার ভয়াল থাবা থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে পশ্চিমবঙ্গ।
পরীক্ষা বাড়ানোর পর সেখানে করোনা সংক্রমণের হার কমতে থাকে। আস্তে আস্তে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হলেও কমতে থাকে করোনা রোগীর সংখ্যা। গত ২ জুন ৭৫ হাজার ১৬১ পরীক্ষায় শনাক্ত হয় ৮ হাজার ৯২৩। গত ৩ জুন ৭৪ হাজার ৫৬৮ পরীক্ষায় শনাক্ত ৮ হাজার ৮১১ জন। এভাবেই আস্তে আস্তে সেখানকার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে। গত ২৭ জুন ৫৫ হাজার ১০২ পরীক্ষায় সেখানে শনাক্ত হয়েছে মোট ১ হাজার ৮৭৬, ২৮ জুন ৫০ হাজার ৫ জনের পরীক্ষায় শনাক্ত ১ হাজার ৭৬১, ২৯ জুন ৫৩ হাজার ১৬৬ পরীক্ষায় শনাক্ত ১ হাজার ৫৯৫ ও ৩০ জুন ৫৩ হাজার ৯৭৫ পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৪৭৮ জনের।
হেলথ এ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ লেলিন চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাস বাহিত লোকজনকে আমরা যদি অন্যদের থেকে আলাদা করতে না পারি, তাহলে সেই ভাইরাস বাহিত লোক দ্বারা অন্যের শরীরে সংক্রমণ ছড়াবেই। তাই প্রচুর সংখ্যক করোনার টেস্ট করা দরকার। প্রতিদিন আমরা যদি অন্তত এক থেকে দেড় লাখ করোনা পরীক্ষা করতে পারতাম তাহলে বেশিরভাগ করোনায় আক্রান্ত লোককে শনাক্ত করা যেত। ভারত, পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা এবং নেপাল থেকেও আমাদের করোনা টেস্টের সংখ্যা কম। পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুধু আফগানিস্তানের ওপরে রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ বেনজির আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আমরা করোনার উৎসস্থলে হাত দিচ্ছি না। করোনা রোগে ভাইরাসের উৎস হচ্ছে করোনা রোগী। করোনা রোগের ভাইরাস আকাশ থেকেও পড়ে না, অন্য কোথাও থেকেও আসে না। কেউ করোনা আক্রান্ত হলে, আমরা যদি তাকে আইসোলেটেড করতে পারি, তাহলে তার থেকে অন্যরা আর সংক্রমিত হবে না। অন্যদিকে একজন আক্রান্ত রোগী যদি রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তার দ্বারা অন্যরা আক্রান্ত হবেই। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওপর। তারা মনে করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় লকডাউন দিলেই করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও মনে করছে হাসপাতালে রোগী এলে চিকিৎসা করাই শুধু তাদের দায়িত্ব। কিন্তু বিষয়টাতো এমন নয়। আমাদের সকলে মিলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। করোনাভাইরাসের উৎস থেকে করোনা নিয়ন্ত্রণের ওপরে আমাদের জোর দেয়া প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে অন্যতম প্রধান উপায়গুলো হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে যত বেশি সম্ভব করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, আক্রান্ত বা সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশন (বিচ্ছিন্ন), কোয়ারেন্টাইন (সঙ্গনিরোধ) করা যেন তার দ্বারা আর কেউ সংক্রমিত না হতে পারে। এর পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
করোনা পরীক্ষা করে শনাক্ত হওয়া আখতার হোসেন নামের রোগী বলেছেন, পরীক্ষাতে পজিটিভ আসার পর নিজের উদ্যোগেই তিনি আইসোলেশনে রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে আইসোলেশন বা চিকিৎসা নিয়ে তেমন কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। অথচ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার থেকেই আইসোলেশনে রাখা উচিত ছিল। আইসোলেশন ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিজেই নেয়ায় করোনার জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে তিনি বলেন, চেষ্টা করছেন পরিবারের অন্যদের থেকে নিজেকে দূরে রাখতে। তবে সরকার থেকে আইসোলেশনের উদ্যোগ নিলে আরও ভাল হতো।
ডেল্টা ধরনের প্রভাবে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার ঊর্ধ্বমুখী হলেও করোনা পরীক্ষা সংখ্যা বাড়লেও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করছেন, শুধু তারাই স্বেচ্ছায় করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন। ফলে অনেকেই সংক্রমিত হয়েও শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছেন এবং তারা বুঝে বা না বুঝেই অন্যদের আক্রান্ত করছেন।
অন্যদিকে আবার যারা করোনা পজিটিভ হচ্ছেন, তাদের আইসোলেশনে রাখার বিষয়েও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদফতরের নেই কোন উদ্যোগ। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি আইসোলেশনে থাকছেন, না রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সেই বিষয়েও নেই কোন তদারকি। সম্প্রতি লকডাউন চলাকালে চেকপোস্টে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে করোনা পজিটিভ হয়েও বাসার বাইরে বের হওয়ার কয়েকটি ঘটনা নজরে এসেছে। করোনার জীবাণু নিয়ে এভাবে ঘুরে বেড়ানো রোগীরাই বেশি করোনা ছড়াচ্ছেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে সরকারী- বেসরকারী মিলে আরটিপিসার ল্যাব রয়েছে ১৩০টি। এর মধ্যে ৫৩টি সরকারী পরীক্ষাগার ও বেসরকারী ৭৭টি। জিন এক্সপার্ট পরীক্ষাগার ৫০টি। এছাড়া র‌্যাপিড এ্যান্টিজেন পরীক্ষাগার ৪৪৭টি। সব মিলে দেশে চলমান পরীক্ষাগারের সংখ্যা ৬২৭টি।
১২ জুলাই দেশে মোট ৪৪ হাজার ৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যেটি এখন পর্যন্ত দেশে একদিনে সর্বোচ্চ। সব মিলে দেশে ৭০ লাখ ৫৬ হাজার ৯৮৯ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ডাঃ মুশতাক হোসেন বলেন, করোনা রোগের বিস্তার রোধে রোগী শনাক্তের জন্য পরীক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশে পরীক্ষা তুলনামূলক কম হচ্ছে। পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত করতে পারলে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা এবং চিকিৎসা করা সম্ভব হতো। কিন্ত পরীক্ষা না করলে সেটির সুযোগ থাকে না। অনেকেই করোনা নিয়েই ঘুরে বেড়াতে পারে। এইভাবে অজ্ঞাত করোনা রোগীই সংক্রমণ বেশি ছড়ায়।
মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ অসীম কুমার নাথ বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধ করতে চাইলে গণহারে পরীক্ষা করে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। সামান্য উপসর্গ নিয়ে হলেও করোনা পরীক্ষা করা উচিত। পরিবারের কোন সদস্যের যদি করোনা হয়ে থাকে, আর সেটি শনাক্ত না হলে সবচেয়ে বেশি মারাত্মক হবে সেই পরিবারের বাকি সদস্যদের জন্য। সংক্রামক ব্যধি হওয়ার কারণে করোনা পরীক্ষাকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।