করোনা রোগীর জন্য ফিল্ড হাসপাতাল

3

সারা দেশে কঠোর লকডাউন সত্ত্বে¡ও দিন দিন করোনার সামাজিক সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বাড়তে থাকায় অবশেষে সরকার জরুরীভিত্তিতে ৫টি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য নিঃসন্দেহে এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে প্রথম ফিল্ড হাসপাতালটি প্রচলিত অর্থে কোন মাঠ বা উন্মুক্ত স্থানে নির্মিত হচ্ছে না, বরং এটি স্থাপন করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন সেন্টারের ৫ম তলায়। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা হাসপাতাল নামের এই হাসপাতালটি হবে করোনা ডেডিকেটেড প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল। এতে ৪ শতাধিক আইসিইউ এবং আরও ৪ শতাধিক আইসিইউ সাপোর্ট সমতুল্য এইচডিইউ থাকবে। বাদবাকি বেডগুলোতে থাকবে অক্সিজেন সরবরাহের সুবিধা। সব মিলিয়ে এটি হতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল। উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১১ হাজার ব্যক্তি নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছে করোনায় এবং প্রতিদিন মারা যাচ্ছে প্রায় ২০০ রোগী। গত রবিবার মারা গেছে ২৩০ জন। ফলে জরুরীভিত্তিতে এরকম একাধিক ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি করোনা প্রতিরোধে চলছে গণটিকাদান কর্মসূচী। আগামী দেড় মাসে প্রায় ২ কোটি ডোজ টিকা দেশে আসার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এসবই আশাব্যঞ্জক খবর নিঃসন্দেহে।
বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রথম ধাক্কা সামলাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম এমনকি নাজেহাল অবস্থা হয়েছে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। এই ভয়াবহ হন্তারক ব্যাধির তীব্র সংক্রমণে রোগীর প্রবল শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, সংক্রমিত হয় ফুসফুস। ফলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের আইসিইউ সাপোর্ট তথা অক্সিজেন না পেলে মৃত্যুমুখে পতিত হয় রোগী। অনেক হাসপাতালে কিছু আইসিইউ বেড থাকলেও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং দক্ষ চিকিৎসকসহ জনবলের সঙ্কটে জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে মুমূর্ষু রোগীর জীবন সংশয় দেখা দেয়। অধিকাংশ হাসপাতালে এমনকি কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। সঙ্কট মুহূর্তে অক্সিজেনের সাপ্লাইও অপ্রতুল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতি ৫০ বেডের জন্য ২টি এবং প্রতি ১০০ বেড হাসপাতালের জন্য ৫টি আইসিইউ বেড আবশ্যক। বাংলাদেশের অবস্থান এর চেয়ে অনেক পেছনে। করোনা মহামারীর এই চরম দুঃসময়ে নতুন দুই হাজার চিকিৎসক এবং পাঁচ হাজার ৫৪ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স জরুরীভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। সরকার জরুরীভিত্তিতে অন্তত ৭০টি সরকারী হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে তরণ অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনসহ হাইফ্লো ন্যাজাল মাস্ক দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর পাশাপাশি করোনা মোকাবেলায় দেশের সব নার্স-ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাও বাঞ্ছনীয়। যত তাড়াতাড়ি এসব বাস্তবায়ন হবে দেশ ও জাতির জন্য ততই মঙ্গল। এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট অত্যাধুনিক ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন এক্ষেত্রে একটি বিশেষ অগ্রগতি অবশ্যই।