কানাইঘাটে প্রতিবন্ধী রুহল হত্যায় মামলা দায়ের, চাচা সহ গ্রেফতার ২

3
নিহত রুহুল আমিনের হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন কানাইঘাট থানার ওসি তাজুল ইসলাম ও গ্রেফতারকৃত সমছুল হক এবং তার পুত্র ফখরুল।

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
গত সোমবার কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের সোনাতনপুঞ্জি গ্রামের টিলার উপর থেকে ঘাড় কাটা অবস্থায় উদ্ধারকৃত নিহত শারীরিক প্রতিবন্ধী রুহুল আমিন (২৫) এর হত্যাকান্ডের ঘটনায় কানাইঘাট থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত রুহুল আমিনের বড় বোন কুলসুমা বেগম তার নিরপরাধ প্রতিবন্ধী ভাইকে পরিকল্পিত ভাবে আপন চাচা সোনাতনপুঞ্জি গ্রামের মৃত ইছরাক আলীর পুত্র পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত সামছুল হক ও তার পুত্র ইমরান আহমদ ফখরুল, হত্যা করেছে এমন অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত সোমবার রাতে দায়েরকৃত এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ৩/৪জনকে আসামী করা হয়েছে। থানার মামলা নং-১৭ তারিখ ১৫/০৬/২০২১ইং। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে রুহুল আমীন হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম পিপিএম। এ সময় তিনি আশপাশ এলাকার অনেকের সাথে কথা বলেন এবং গ্রেফতারকৃত সামসুল হকের বাড়ীতে যান। মামলার বাদী কুলসুমা বেগম সহ তার স্বজনদের শান্তনা দিয়ে বলেন, হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত ছিল তারা কেউ রেহাই পাবে না। পুলিশের ধারণা মূলত জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে সোনাতনপুঞ্জি গ্রামের সামছুল হক তার আপন ভাতিজা প্রতিবন্ধী রুহুল আমিনকে খুন করার উদ্দেশ্যে গত রবিবার রাতে তার বাড়ীতে নিয়ে আসে। পুলিশের ধারণা সোমবার ভোর রাতে সামছুল হক ও তার পুত্র ফখরুল তার বাড়ীর পাশের উঁচু টিলায় নিয়ে ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মেরে হত্যা করে সেখানে রুহুল আমিনের লাশ ফেলে রাখতে পারে।
জানা যায়, এরপর সকাল ৭টার দিকে ভাতিজা হত্যা মামলার আসামী হত্যাকারী সামছুল হক প্রথমে তার আত্মীয় স্বজন সহ এলাকায় চাউর করে সকালে তার ছেলে ফখরুল ও ভাতিজা প্রতিবন্ধী রুহুল আমিন টিলায় কাঠাল পাড়তে গেলে একই গ্রামের আব্দুল মান্নান ও তার ভাই নজরুল ইসলাম সহ পরিবারের লোকজন তাদের উপর হামলা করে। হামলার পর তার ভাতিজা রুহুল আমিনকে খুঁজে পাচ্ছেন না। একপর্যায়ে সামছুল হক কানাইঘাট থানায় এসে পুলিশকে বলেন তার ভাতিজাকে কুপিয়ে আব্দুল মান্নান গংরা মেরে ফেলছে এবং তার ছেলে ফখরুল আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ সময় সামছুল হককে পুলিশ নানা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে একেক সময় একেক কথা বললে এতে পুলিশের সন্দেহ হলে তাকে প্রাথমিক ভাবে আটক করে পুলিশ। পরে হাসপাতালে গিয়ে ফখরুল ইসলামকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে সেও রুহুল আমিনের বিষয়ে উল্টা-পাল্টা কথা বললে তাকেও আটক করা হয়। এছাড়া থানা পুলিশ সামছুল হকের নিকট আত্মীয় কয়েকজনকে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদের পর রুহুল আমিন হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা না পেয়ে ছেড়ে দেয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সামছুল হকের সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী আব্দুল মান্নানের পরিবারের মধ্যে সরকারী খাস খতিয়ানে অবস্থিত কয়েক একরের একটি টিলা বেষ্টিত ফসলাদি ভূমির দখল নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মামলা-মোকদ্দমা চলছে। সরকারী খাস খতিয়ানে অবস্থিত জমির দখল ও পাল্টা দখলকে কেন্দ্র করে সামছুল হক তার প্রতিপক্ষ আব্দুল মান্নান গংদের ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে আপন ভাতিজা প্রতিবন্ধী রুহুল আমিনকে খুন করে। এ খুনের ঘটনায় মান্নান গংদের ফাঁসানোর উদ্দেশ্য ছিল তার। থানার ওসি তাজুল ইসলাম পিপিএম বলেন, প্রতিবন্ধী রুহুল আমিন অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির লোক তার সাথে এলাকায় কারো বিরোধ নেই। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় সামছুল হক ও তার ছেলে ইমরান আহমদ ফখরুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। রুহুল আমিন হত্যার সাথে আর কেউ জড়িত রয়েছে কিনা তা অধিকতর তদন্দের জন্য গ্রেফতারকৃত সামছুল হক ও তার পুত্র ইমরান আহমদকে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিজ্ঞ আদালতে ৭দিনের পুলিশ রিমান্ড চাওয়া হবে।