বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত চার খুনীর খেতাব ও পদক বাতিলের সিদ্ধান্ত

2

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রী সভা কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত চার খুনী শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাব ও পদক বাতিল করা হবে। এছাড়া তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিল করতে হলে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া তার বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না। পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া হেফাজতের কাউকে ভবিষ্যতেও গ্রেফতার করা হবে না। বুধবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রী সভা কমিটির ষষ্ঠ সভা শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রী এ কথা বলেন।
সভা শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত চার খুনী শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাব ও পদক বাতিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এখন আমরা গেজেট আকারে প্রকাশ করব। গেজেট প্রকাশ করলে আপনারা পাবেন। এর আগে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।
জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রী সভা কমিটির আহ্বায়ক আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, তার (জিয়াউর রহমান) বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। তার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে হলে উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে নিতে হবে। কারণ, বিষয়টি আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তখন সেখানে প্রমাণ করতে হবে।
জিয়ার খেতাব বাতিল প্রক্রিয়ায় আরও সময় নেবে সরকার।
সংবিধান লঙ্ঘন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনীদের দেশত্যাগে সহায়তা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের অভিযোগে জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলেরও সুপারিশ করেছিল জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)।
জিয়াউর রহমানের কবর সরবে কিনা প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী ॥ বলেন, আমরা হয়ত জানি ও বিশ্বাস করি তিনি (জিয়াউর রহমান) বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের কথায়ও হয়ত এসেছে। তবে অনুধাবন করা এক জিনিস, তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করা আরেক জিনিস। তার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে হলে প্রমাণ সাপেক্ষে করতে হবে। এর জন্য আমরা একটা সাব-কমিটি করেছি এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিবেদন দিতে। কমিটির রিপোর্ট এখনও হাতে পাইনি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। হেফাজতে ইসলাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খুবই নগণ্য সংখ্যক, কয়েকজন হাতেগোনা ব্যক্তিকে গোয়েন্দা সংস্থা চিহ্নিত করেছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি, ভবিষ্যতেও কাউকে গ্রেফতার করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত, প্রমাণ হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
তিনি বলেন, জাতির সামনে কিছু ভুল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে আলেম-ওলামাদের গ্রেফতার হয়রানি করা হচ্ছে। এটি সঠিক নয়। আমরা বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোন অবস্থায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া গ্রেফতার করা হবে না। অপরাধের বিচার হবে, অপরাধী হিসেবে। কোন দলীয় বা সম্প্রদায়ের পরিচয়ে আইনের অপব্যবহার যাতে না হয়, সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে।
ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ বিদেশী নাগরিকরা অপরাধে জড়িত ॥ মোজাম্মেল হক বলেন, কিছু বিদেশী নাগরিকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তারা দেশে যেতে পারছেন না। নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। বিমান বন্ধ, কেউ বলছে টাকা নেই। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী- তাদের অধিকাংশই ক্রাইমের (অপরাধ) সঙ্গে জড়িত। তাদের আইনের আওতায় এনে সেইফ জোনে রাখা বা যদি টাকা না থাকে সরকারীভাবে টিকিট সংগ্রহ করে তাদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত (ভার্চুয়ালি ও সশরীরে) ছিলেন।