খালেদা জিয়ার ফুসফুসের উন্নতি, শ্বাসকষ্টও কমেছে

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ফুসফুসের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। শ্বাসকষ্টও আগের মতো নেই। তবে পুরনো সমস্যাগুলো এখনও রয়ে গেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জ্বরে আক্রান্ত। এ কারণে শুক্রবার ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা ব্যবস্থায় কিছুটা পরিবর্তন এনেছে।
সূত্র মতে, এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ফুসফুসের পানি বের করার জন্য যে দুটি পাইপ লাগানো হয়েছিল তা ইতোমধ্যেই খুলে ফেলা হয়েছে। এখন জ্বরসহ পুরনো সমস্যাগুলোর চিকিৎসা চলছে। তবে আরও কিছুদিন তাঁকে সিসিইউতেই থাকতে হবে। এ ছাড়া হঠাৎ করে তিনি কেন জ্বরে আক্রান্ত হলেন চিকিৎসকরা তা খতিয়ে দেখছেন এবং সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার ফুসফুসের অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাঁর শ্বাসকষ্ট কমেছে। তবে তাঁর হার্ট এখনও দুর্বল। এ ছাড়া তাঁর অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ইনসুলিন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। হৃদযন্ত্রের সমস্যারও উন্নতি নেই। তাঁর শরীরে প্রচুর প্রোটিনের ঘাটতি রয়েছে। তাই তাঁকে এ্যালবুমিন দেয়া হচ্ছে। আর্থাইটিস সমস্যারও উন্নতি নেই। তাই হাত-পায়ে ব্যথা আছে। হাঁটাচলায়ও সমস্যা রয়েছে। আর চোখের সমস্যাও রয়েছে তাঁর। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সে মোতাবেক চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, লন্ডন প্রবাসী পুত্রবধূ ডাঃ জোবাইদা রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা খালেদা জিয়ার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন নিয়মিত। তারা সাবধানতার সঙ্গে তার শারীরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সে মোতাবেক চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে বাজেট ভাবনা উপস্থাপনের সময় এক প্রশ্নের জবাবে দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার থেকে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর শরীরের অন্যান্য যে প্যারামিটার তা আগের মতোই আছে। হঠাৎ করে কেন জ্বর এসেছে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। খালেদা জিয়ার ফুসফুসের পানি বের করার জন্য যে ২টি পাইপ লাগানো হয়েছিল তার প্রথমটি খোলা হয় ১৯ মে আর দ্বিতীয়টি খোলা হয় ২৬ মে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। হাসপাতালের মধ্যে ফিজিওথেরাপির অংশ হিসেবে এখন তাঁকে হাঁটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সম্প্রতি একদিন তিনি ৫০ গজের মতো হেঁটেছেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালে এরই মধ্যে ৩২ দিন চিকিৎসা নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। চিকিৎসকদের মতে, খালেদা জিয়াকে আরও কিছুদিন সিসিইউতেই রাখতে হবে। ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে সিসিইউর বাইরে রেখে চিকিৎসা দেয়া এখনও নিরাপদ মনে করছেন না তারা। কারণ, তাঁর শরীরের এখন যে অবস্থা তাতে এখনও কেবিনে নেয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। তবে ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। শারীরিক অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি হলে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হবে। খালেদা জিয়ার এখন খাবার খেতে তেমন সমস্যা না হলেও পুরোপুরি রুচি এখনও আসেনি।
উল্লেখ্য, বাসায় গৃহকর্মী ফাতেমাসহ ৮জন করোনাক্রান্ত হওয়ায় ১০ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা নেয়া হয়। ১১ এপ্রিল রিপোর্ট প্রকাশিত হয় খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রথমে বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত পারেনি। কারণ, ওইদিন সকালেই স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানিয়ে দেয়া হয় নমুনা পরীক্ষায় খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরপর বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বীকার করেন খালেদা জিয়ার করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট পজিটিভ এসেছে।
করোনাক্রান্ত হওয়ার পর গুলশানের বাসা ফিরোজায় থেকেই খালেদা জিয়া চিকিৎসা নেন। লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা রহমানের নির্দেশ মতে ৪ সদস্যের ব্যক্তিগত চিকিৎসক দল তাঁর চিকিৎসা চালিয়ে যান। ১৫ এপ্রিল এক ঘণ্টার জন্য তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যান করানো হয়। রিপোর্ট ভাল আসায় তাঁকে ওইদিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি।
খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ২৭ এপ্রিল। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ৩ মে ওই হাসপাতালের সিসিইউতে নেয়া হয় তাঁকে। এর পর সরকারের কাছে লিখিত আবেদন করে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি চায় বিএনপি। কিন্তু আইনগত জটিলতায় সরকার তাঁকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারেনি।
৩ মে খালেদা জিয়াকে কেবিন থেকে সিসিইউতে নেয়ার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তারা খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার কথা জানালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের আবেদন করার কথা বলেন। ৫ মে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির বাসায় যান খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। রাজধানীর বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে সরকারের অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে লিখিত আবেদন করেন তিনি।
খালেদা জিয়ার ভাইয়ের করা আবেদন পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, আবেদনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া হবে। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সেটি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে উদার। আবেদনে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার উল্লেখ করেছেন, তার বোন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তাররা তাকে বিদেশে নিয়ে আরও উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনা করে মানবিক দৃষ্টিতে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার অনুরোধ করছি। আশা করি, সরকার মানবিকভাবে বিষয়টি বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেয়ার সুযোগ দেবেন। আবেদনে খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির সময় শর্তে তিনি বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করতে যেতে পারবেন না বলে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেটি প্রত্যাহার করে তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করার সুযোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। ৯মে সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রচলিত আইন অনুযায়ী (৪০১ ধারা) দ্বিতীয়বার সাজা মওকুফ করে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে করা আবেদন মঞ্জুর করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ৪০১ ধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাঁকে সাময়িক মুক্তির সুবিধা দেয়া হয়েছে। সেটা দ্বিতীয়বার দেয়ার সুযোগ নেই।