ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে ইয়াসের তান্ডবে পাঁচজনের মৃত্যু, দেড় কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অতিপ্রবল ঘূর্র্ণিঝড় ইয়াস বুধবার সকালে ১৫৫ কিলোমিটার গতিতে ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানার পর কিছুটা শক্তি হারিয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। এরপর এটি ঝাড়খন্ডের দিকে এগুতে থাকে। ওড়িশায় ঘূর্র্ণিঝড়টি তিন ঘণ্টা তান্ডব চালায়। ইয়াসের আজ আরও শক্তি হারানোর কথা। ইয়াসের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে যে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ধারণা করছে, রাজ্যজুড়ে এক কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ রাজ্যের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল দীঘা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং মেদেনীপুর। এসব এলাকার বহু গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইয়াসের তান্ডবে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটেছে।
বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ছয়টায় ভারতের আবহাওয়া দফতর এক টুইট বার্তায় জানায়, ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটার গতি নিয়ে ভারতের ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ে তা-ব শুরুর পর শক্তি কমে ‘অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়’ ইয়াস এখন ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের’ রূপ নিয়েছে। ইয়াসের প্রভাবে ওডিশা উপকূলে প্রবল বৃষ্টি ও দমকা বাতাসের সঙ্গে সাগর ফুলে উপকূলের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ওড়িশার ধামরা ও বালাসোরের মধ্যবর্তী উপকূল দিয়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস তিন ঘণ্টায় উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী কলকাতায় তার অফিস নবান্নে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর মমতা ব্যানার্জী বুধবার স্থানীয় সময় দুপুরে বলেন, রাজ্যে ইয়াসের আঘাতে প্রায় ২০ হাজার বাড়িঘর ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের আরেক মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেছেন, আমি অতীতে এমন ঝড় দেখিনি। ঝড়ের তা-বে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর। এর ফলে উপকূলীয় এলাকায় উচ্চ জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। রাজ্যের উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
জেলা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকের পর মমতা বলেন, পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহু গ্রাম ভেসে গেছে। কপিলমুনির আশ্রম জলমগ্ন। সেচ ব্যবস্থা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানের বরোজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি জানান, দুই মেদিনীপুর ছাড়াও হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, হাড়োয়া, পাথরপ্রতিমা, কুলপি, বাসন্তী, বজবজ, উলুবেড়িয়া, শ্যামপুর, বাগনান, সাঁকরাইল, দিঘা, নন্দীগ্রাম, শঙ্করপুর, রামনগর, তাজপর, কাঁথি, সুতাহাটা, কোলঘাট ব্যাপক, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক লোকজনকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমাদের কাছে প্রত্যেকের জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে এ রাজ্যেও প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বুধবার সকাল নয়টায় ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম শুরু করে। দুপুর নাগাদ এটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উত্তর ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করে। ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রমের সময় কখনও বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছায়। পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি স্থানে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে বেশ কিছু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ইয়াস পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছাকাছি চলে যাওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয় কলকাতার বিমানবন্দর। উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনায় রাজ্যে সেনা মোতায়েনও করা হয়। আবহাওয়া দফতরের প্রধান এম মহাপাত্র জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আঘাত হানার সময়ে এর গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার। ওড়িশার প্রায় ত্রিশ লাখ এবং পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ লাখ মানুষকে নিজেদের বাড়ি থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ওইসব মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করা বড় চ্যালেঞ্জ।
ঝড়ের কারণে ভারতীয় রেলওয়ে ৩৮টি দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রা বাতিল করে। শনিবার পর্যন্ত এসব ট্রেন চলবে না। দুর্ঘটনা এড়াতে বুধবার সকাল থেকে কলকাতার নয়টি ফ্লাইওভারেও যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। বুধবার পূর্ণিমা এবং চন্দ্রগ্রহণ থাকায় বড় ধরনের প্রভাব পড়ে জোয়ারে। ঝড় যখন উপকূল অতিক্রম করে, তখন ছিল ভরা কাটাল। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তখনই জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়ে যায়। করোনা মহামারীর মধ্যে এই নতুন দুর্যোগে সংক্রমণ এড়ানো আর রোগী সামলানোর কথাও ভাবতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। ওড়িশার ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকাগুলোর কোভিড হাসপাতালে অক্সিজেন এবং বিদ্যুতের সঙ্কট যেন না হয়, সে ব্যবস্থা আগেই করে রাখা হয়েছিল। উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য উপকূলে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ভারতের নৌবাহিনীর সদস্যদেরও। বিশাখাপত্তমে নৌবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদরদফতর থেকে পুরো কার্যক্রমের সমন্বয় করা হচ্ছে।