গাজায় ইসরাইলেরই পরাজয় দেখছেন সাবেক জেনারেল

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
গাজায় নিজেদের পরাজয়ের কথা স্বীকার করেছেন দখলদার ইসরাইলী সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আইজ্যাক ব্রিক। ইসরাইলের একটি রেডিওতে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
আইজ্যাক ব্রিক বলেন, ইসরাইল হামাসের রকেট ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। এবারের যুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে তেল আবিব কয়েকটি ফ্রন্টে একসঙ্গে যুদ্ধ করতে গেলে মহাবিপর্যয়ের মুখে পড়বে। ব্রিক আরও বলেন, গাজায় ইসরাইল যুদ্ধবিমান দিয়ে বোমা হামলা করেছে। বিমান হামলা করে যুদ্ধে বিজয়ী হওয়া যাবে এমন ধারণা পুরোপুরি ভুল। আইজ্যাক ব্রিক ইসরাইলের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমরা গাজা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছি। এ অবস্থায় আমরা কিভাবে কয়েকটি ফ্রন্টে একসঙ্গে যুদ্ধ করতে সক্ষম হবো। আমরা কিভাবে মোকাবেলা করব, যখন হিজবুল্লাহও যুদ্ধে নামবে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনীদের ওপর বোমাবর্ষণ আপাতত বন্ধ হলেও থামেনি ইসরাইলের দখলদারিত্ব। টানা ১১ দিনের প্রাণঘাতী লড়াই শেষে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে যুদ্ধবিরতি পালন করছে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস। তবে এই বিরতি কতক্ষণ টিকবে তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কারণ নানাভাবে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। রবিবার মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ আল-আকসা থেকে নামাজরত মুসল্লিদের পিটিয়ে বের করে সেখানে একদল ইহুদীকে ঢুকিয়েছে ইসরাইলী পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে ফিলিস্তিনী বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, রবিবার ফজরের নামাজ পড়ার সময় পবিত্র হারাম-আল শরীফে মুসল্লিদের ওপর হঠাৎ হামলা চালায় ইসরাইলী পুলিশ। এসময় তাদের প্রচণ্ড মারধর করে বের করে দেয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই ইসরাইলের একদল ইহুদী দখলদার সেখানে প্রবেশ করে।
ওয়াফা জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ছয় ফিলিস্তিনীকে গ্রেফতার করেছে ইসরাইলী পুলিশ। এদের মধ্যে ফাদি আলিয়ান নামে আল-আকসার এক নিরাপত্তারক্ষীও রয়েছেন। তিনি মুসল্লিদের ওপর হামলার ঘটনা ভিডিও করার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা গেছে। এছাড়া আল-আকসার প্রবেশপথে কড়াকড়িও বাড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইলী বাহিনী। সেখানে ৪৫ বছরের কম বয়সী মুসল্লিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে দখলদাররা।এর আগে, গত রমজান মাসের শেষের দিকে আল-আকসা প্রাঙ্গণে তাণ্ডব চালায় ইসরাইলী বাহিনী। এর সঙ্গে পূর্ব জেরুজালেম থেকে উচ্ছেদের হুমকি ফিলিস্তিনীদের ভেতর ক্ষোভের আগুন জ্বেলে দেয়। বিভিন্ন শহরে শুরু হয় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। কিন্তু এর কারণে ফিলিস্তিনীদের ওপর উল্টো হামলা-সহিংসতা বাড়িয়ে দেয় ইসরাইল। এই দখলদারিত্ব বন্ধে ইসরাইলকে একটি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। তবে সেই সময়সীমার মধ্যে ইসরাইলীরা নিবৃত্ত না হলে প্রতিবাদে রকেট হামলা শুরু করে ফিলিস্তিনী এই যোদ্ধা গোষ্ঠী। জবাবে গাজা উপত্যকায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরাইলী দখলদার বাহিনী। টানা ১১ দিন চলে এই সংঘাত। অবশেষে মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই পক্ষ। তবে ইসরাইলীদের উস্কানিতে এই বিরতি দীর্ঘস্থায়ী হওয়া নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুক্রবার আল-আকসায় ফিলিস্তিনীরা বিজয়োল্লাস করার সময় তাদের ওপর হামলা চালায় ইসরাইলী পুলিশ। এছাড়া, সম্প্রতি উগ্রবাদী ইহুদী দখলদাররা বেশি সংখ্যায় আল-আকসায় যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। পবিত্র মসজিদটির জায়গায় তৃতীয় ইহুদী উপাসনালয় বানানোর লক্ষ্য তাদের। যদিও ১৯৬৭ সালে চুক্তিতে বলা হয়েছে, কেবল মুসলিমরাই পবিত্র হারাম আল-শরীফে প্রার্থনা করতে পারবেন।
ইসরাইল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করলে অথবা পবিত্র জেরুজালেম শহরে ফিলিস্তিনীদের ওপর নতুন করে কোন হামলার চেষ্টা করলে তার যোগ্য জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। সংগঠনটির অন্যতম মুখপাত্র আবদুল লতিফ কানু স্থানীয় একটি রেডিওকে দেয়া সাক্ষাতকারে এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জেরুজালেম শহরের শেখ জাররাহ এলাকা থেকে ফিলিস্তিনীদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র হলে, পবিত্র আল-আকসা মসজিদ ভাগ করার চেষ্টা হলে কিংবা এই মসজিদের পরিচয় মুছে ফেলা এবং সেটিকে ইহুদীকরণের চেষ্টা হলে আমরা তার জবাব দিতে প্রস্তুত। এদিকে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে টানা ১১ দিন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে গাজা উপত্যকায় বিশাল সামরিক মহড়া চালিয়েছে হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জাদ্দিন কাসেম ব্রিগেডস। ইরানের আরবী স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেল আল-আলম জানিয়েছে, কাসেম ব্রিগেডসের শত শত যোদ্ধা অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গাজার রাজপথে প্রকাশ্যে মহড়া দিয়েছেন। মহড়ায় সাম্প্রতিক লড়াইয়ে নিহত হামাসের অন্যতম কমান্ডার বাসিম ঈসার প্রতি সম্মান জানানো হয়। হামাসের অন্যতম নেতা ইসমাইল রেদওয়ান মহড়ার ফাঁকে রাখা বক্তব্যে বলেন, আমরা আজ গাজার মাটিতে বসে দখলদার শক্তির বিরুদ্ধে বিজয়োৎসব করছি। সাম্প্রতিক যুদ্ধ প্রমাণ করেছে, বায়তুল মুকাদ্দাস আরব ও ইসলামী পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকবে এবং এটি হবে ফিলিস্তিনের চিরকালীন রাজধানী। এ সময় ইসরাইলকে মোকাবেলায় কাসেম ব্রিগেডস সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখবে বলেও জানান। পবিত্র রমজান মাসের শেষের দিকে ইসরাইলী বাহিনী আল-আকসা মসজিদে মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায় এবং জেরুজালেমের শেখ জাররাহ এলাকা থেকে ফিলিস্তিনীদের উচ্ছেদেও চেষ্টা চালায়। সেখানে পরিস্থিতির অবনতি হলে ইসরাইলকে চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দেয় হামাস এবং পরবর্তীতে দখলদারদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। গত ১০ মে গাজায় ইসরাইল বিমান হামলা শুরু করে। ২১ মে পর্যন্ত চলা হামলায় ৬৯ শিশু ও ৩৯ নারীসহ ২৪৮ ফিলিস্তিনী নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও এক হাজার ৯১০ ফিলিস্তিনী। ইসরাইলী আগ্রাসন মোকাবেলায় চার হাজারের বেশি রকেট নিক্ষেপ করে ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ সংগঠন হামাস।