বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা ॥ খালেদা জিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ নয়জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিটের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
গত বৃহস্পতিবার (২০ মে) ৬৮ পৃষ্ঠার আদালতের পর্যবেক্ষণ প্রকাশ পায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে। সোমবার (২৪ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান।
তিনি বলেন, ‘সাবেক মন্ত্রী আমিরুল ইসলামের করা এক মামলায় রায় হয় ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। রবিবার (২৩ মে) ওই রায়ের কপি আমরা হাতে পেয়েছি। সেই রায়ে বলা হয়েছে, মামলায় যে সব আসামি আছে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও আছেন।’
এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে করা এই দুর্নীতি মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
মামলার অন্যতম আসামি সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের করা মামলা বাতিলের আবেদনের রুল খারিজ করে সেদিন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দিয়েছিলেন।
আদালতে ওই দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। ব্যারিস্টার আমিনুল হকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক।
পরে খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মামলা বাতিলে ব্যারিস্টার আমিনুল হকের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। এখন নিম্ন আদালতে এ মামলা চলতে আর কোনো বাধা নেই। এছাড়া এই মামলা আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্যও নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ওইদিন জানান, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল আলম ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় এই মামলা করেন। ওই বছরের ৫ অক্টোবর ১৬ আসামির বিরুদ্ধে দুদকের উপ-পরিচালক মো. আবুল কাসেম ফকির দণ্ডবিধি আইনের ৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
প্রসঙ্গত, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং তার মন্ত্রিসভার ১০ সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয়। চীনা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অব চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতির অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়। ওই বছরের ৫ অক্টোবর ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে দুদক।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান (মৃত), সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (মৃত), সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী (মৃত্যুদণ্ড কার্যকর), সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (মৃত্যুদণ্ড কার্যকর), এম কে আনোয়ার (মৃত), এম শামসুল ইসলাম (মৃত), ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, এ কে এম মোশাররফ হোসেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান এস আর ওসমানী, পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মঈনুল আহসান, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও খনির কাজ পাওয়া কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন।