বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে ৫৩২ শতাংশ

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
স্বাধীনতার পর প্রায় এক দশক বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়নের (রিজার্ভ) কোন তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নেই। ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের তথ্য সংরক্ষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই অর্থবছরে দেশের মোট রিজার্ভ ছিল মাত্র ১২ কোটি ১০ লাখ ডলার। এখন সেই রিজার্ভ ৪ হাজার ৪০০ কোটি (৪৪ বিলিয়ন) ডলারের সর্বোচ্চ চূড়ায় অবস্থান করছে। এই সময়ে বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বেড়েছে ৫৩২ শতাংশ। রফতানি আয় এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ায় অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে এই মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এই রিজার্ভ দিয়ে প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার হিসেবে সাড়ে ১০ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী একটি দেশের কাছে অন্তত ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশী মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। বাকি অর্থের সমপরিমাণ রিজার্ভ দেশের উন্নয়মূলক কর্মকান্ডে বিনিয়োগের প্রস্তাব আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এই অবস্থায় রিজার্ভ থেকে সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তারাও ঋণ নিতে চান। সরকার ইতোমধ্যে রিজার্ভ থেকে ঋণ দিতে বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (বিআইডিএফ) গঠন করেছে। এ তহবিল থেকে ইতোমধ্যে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে। এছাড়া বেসরকারী উদ্যোক্তাদের একটি গ্রুপ গত সপ্তাহে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে একটি বৈঠকও করেছে।
রেকর্ড রেমিটেন্সে নতুন উচ্চতায় রিজার্ভ ॥ বিশ্বজুড়ে করোনা সঙ্কটের মধ্যেও বৈধ পথে প্রচুর রেমিটেন্স দেশে আসছে। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে ১৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি। এভাবে রেমিটেন্স বাড়লেও আমদানি দায় পরিশোধের তেমন চাপ নেই। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রচুর ডলার কিনতে হচ্ছে। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি থেকে প্রচুর ঋণ আসছে। যে কারণে রিজার্ভে একের পর এক রেকর্ড হচ্ছে। প্রবাসীদের পাঠানো এই অর্থের উপর ভর করে বাংলাদেশের বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয়ন আবার ৪৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করতে চলেছে। জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, করোনা সঙ্কটের মধ্যেও প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। একই সঙ্গে বিদেশী ঋণ ও অনুদান আসছে। আমদানি ব্যয় হ্রাস পাওয়ায় দেশের রিজার্ভের পরিমাণ বেড়েছে। তবে রফতানি আয় বাড়ানো সম্ভব না হলে রিজার্ভর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হবে।
এর আগে গত জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নবেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪২ বিলিরয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল। রেমিটেন্স বাড়ায় তিন সপ্তাহের ব্যবধানে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সেই রিজার্ভ বেড়ে আবার ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এই রিজার্ভ দিয়ে প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার হিসেবে সাড়ে ১০ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশী মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ- এই ৯ দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, একটা বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে। রেমিটেন্স বাড়ার কারণে রিজার্ভ বেড়েছে ঠিক।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রিজার্ভ বাংলাদেশের ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান রিজার্ভ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রিজার্ভের দিক দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। যা পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশী মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। বাংলাদেশকে দুই মাস পরপর পরিশোধ করতে হয় আকুর বিল। প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয়ের খরচ হিসাবে হাতে থাকা রিজার্ভ দিয়ে বর্তমানে সাড়ে ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশীর পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স।