স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন হোক

67

সরকারি হাসপাতাল, বিশেষ করে ঢাকার বাইরের সরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। চিকিৎসক থাকেন না, ওষুধ পাওয়া যায় না, ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না এমনই আরো কত অভিযোগ। চিকিৎসক-কর্মচারীদের অবহেলা-দুর্ব্যবহারের অভিযোগও কম নয়। দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের অভিযোগকেন্দ্রেও এমন বহু অভিযোগ জমা হয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক গত সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকা ও ঢাকার বাইরের মোট ১১টি হাসপাতালে একযোগে অভিযান চালায়। তাতে উঠে আসে অনিয়মের এক বিশাল চিত্র। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৬২ শতাংশ চিকিৎসক অনুপস্থিত ছিলেন। ঢাকারও তিনটি হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। এর মধ্যে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ছাড়া অন্য দুটিতে বেশ কিছু চিকিৎসক অনুপস্থিত ছিলেন। চিকিৎসকদের তো বেতন, সুযোগ-সুবিধা কম দেওয়া হচ্ছে না, তার পরও সেবা প্রদানে এত অনীহা কেন?
ঢাকায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে হাসপাতাল রয়েছে অনেক। মানুষ কোনো না কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের মানুষের সামনে তেমন সুযোগ নেই। অনেক স্থানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সই হলো একমাত্র গন্তব্য। গ্রামের দরিদ্র মানুষের ব্যয়বহুল বেসরকারি চিকিৎসাসেবা নেওয়ার সাধ্য নেই। আবার সেখানেও রয়েছে নানা ধরনের প্রতারণা। তাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই তাঁরা ভিড় করেন। কিন্তু সেখানকার চিত্র যদি এমন হয়, তাহলে গ্রামের এই দরিদ্র মানুষ কোথায় যাবে? চিকিৎসা আর দশটা পেশার মতো নয়। এখানে মানুষের বাঁচা-মরার প্রশ্ন আছে। চিকিৎসার সঙ্গে আন্তরিকতা ও সেবার মনোভাব অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সে কারণেই এই পেশাটিকে মহৎ পেশা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ৬২ শতাংশ চিকিৎসক কাজে অনুপস্থিত থাকা কোন ধরনের ‘মহত্ত্বের’ লক্ষণ? অভিযোগ আছে, কিছু চিকিৎসক মাসে দু-এক দিন অফিস করেন এবং সারা মাসের হাজিরা দিয়ে যান। কিছু চিকিৎসক হাসপাতালে এসে খাতায় সই করেই চলে যান বাইরের ক্লিনিকে অর্থ রোজগার করতে। বিনা মূল্যে রোগীদের দেওয়ার জন্য সরকার ৩০ ধরনের ওষুধ বরাদ্দ করে। জানা যায়, খুব কম হাসপাতালেই সেসব ওষুধ রোগীদের দেওয়া হয়। এক্স-রে মেশিন, ইসিজি মেশিনসহ হাসপাতালের রোগ নির্ণয় ব্যবস্থাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে অচল করে রাখার অভিযোগও পাওয়া যায়। তখন রোগীদের পাঠানো হয় বাইরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য, আর তাতে নাকি চিকিৎসকদের কমিশন জোটে। কমিশনের লোভে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর অভিযোগও কম নয়। এসবের মধ্যে আমরা ‘মহত্ত্ব’ কোথায় খুঁজে পাব?
সরকার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আন্তরিকতার পর্যায় এতটা নিম্নগামী হলে এই খরচের উদ্দেশ্য অর্জন হবে কিভাবে? দুদক হাসপাতালগুলোতে অভিযান চালিয়ে যে ভয়াবহ তথ্য জনসমক্ষে তুলে ধরেছে, তার জন্য দুদককে ধন্যবাদ। এ ধরনের অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কেউ যেন ছাড় না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।