কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানছেন খালেদা জিয়া

26

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মহামারী করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বাসার বাইরে থেকে এখন কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি নিকটাত্মীয়দের আসা-যাওয়াও সীমিত করা হয়েছে।
সূত্র মতে, দেশে আবারও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে অধিক মনোযোগী হয়েছেন। তাঁর বাসার নিচতলা থেকে শুরু করে দ্বিতীয়তলা পর্যন্ত প্রতিদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি জীবাণুনাশক ছিটানো হয়। এছাড়া কাজের মেয়ে ফাতেমা ও একজন নার্স ছাড়া আর কাউকে তাঁর ধারেকাছে যেতে দেয়া হয় না। আর তারাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে খাবার ও ওষুধ সেবনসহ বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করে থাকেন।
বাসায় থাকা বিভিন্ন উপকরণের সাহায়্যে প্রতিদিনই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করানো হচ্ছে। তাঁকে চিকিৎসা সহায়তা দিতে বাসায় সার্বক্ষণিকভাবে রয়েছেন একজন নার্স। যিনি লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমানের স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা রহমানের সঙ্গে কথা বলে খালেদা জিয়াকে নিয়মিত ওষুধ সেবন করান। আর ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা মনে করলে ওই নার্স ডাঃ জোবাইদা রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। তখন ডাঃ জোবাইদা রহমান খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বোর্ডে থাকা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান দেন।
সূত্র জানায়, কাজের মেয়ে ফাতেমা ও নার্সকে খালেদা জিয়ার কক্ষে যেতে হলে পাশের আরেকটি কক্ষে জীবাণুনাশক ব্যবহারসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক পরতে হয়। এছাড়া খাবার ও ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা হয়। কোন প্রয়োজন ছাড়া তারাও খালেদা জিয়ার কক্ষে যান না।
৩ দফায় ৬ মাস করে শর্তস্বাপেক্ষে সাময়িক মুক্তির পর গুলশানের বাসা ফিরোজায় ১৩ মাস কাটিয়ে দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এক মুহূর্তের জন্যও তিনি বাসা থেকে বের হননি। তবে তিনি চেয়েছিলেন লন্ডনে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে। কিন্তু সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় এবং নতুন করে আবারও করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তিনি এখন কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসায় অবস্থান করছেন। এমনকি চিকিৎসার জন্য দেশের কোন হাসপাতালেও যাচ্ছেন না। অবশ্য সাময়িক কারামুক্তির পর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যাতে বাসায় অবস্থান করেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পেতে পারেন সে ব্যবস্থা আগেই করে রাখা হয়। তাঁর মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে গুলশানের বাসা ফিরোজায় হাসপাতালের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়।
গুলশানের বাসা ফিরোজার দ্বিতীয় তলায় খালেদা জিয়ার শয়ন কক্ষের পাশের আরেকটি বড় কক্ষে তাঁর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় যন্ত্রপাতি বসানো হয়। আগে থেকেই তাঁর বাসায় চিকিৎসক ও একান্ত আপনজন ছাড়া প্রবেশাধিকার ছিল সংরক্ষিত। এখন স্বজনদের প্রবেশাধিকারও সীমিত করা হয়েছে।
এদিকে ১৩ মাস আগে সাময়িক মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই খালেদা জিয়া প্রায় প্রতিদনই লন্ডনপ্রবাসী ছেলে তারেক রহমান, ছেলের বউ ডাঃ জোবাইদা রহমান, তারেক রহমানের মেয়ে জায়মা রহমান, প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান, তার দুই মেয়ে জাসিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানের সঙ্গে ফোনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কথা বলেন। এ সময় পরিবারের সদস্যরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন। তাদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতে পেরে খালেদা জিয়া এখন স্বস্তিতে রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর গত বছর ২৫ মার্চ মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থান নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এখনও বাসার বাইরে যাননি তিনি। রাজনীতি থেকেও তিনি বিরত রয়েছেন। মুক্তি পাওয়ার পর দলের ক’জন সিনিয়র নেতা কয়েকবার বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করলেও তিনি তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি বলে জানা যায়।
দ্বিতীয় দফায় মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই স্বজনরা খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সম্ভব হয়নি। এর পর দ্বিতীয় দফার মুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তৃতীয় দফায় মুক্ত করার চেষ্টা করেন তারা। আর তৃতীয় দফায় মুক্ত হওয়ার পর বিদেশে যেতে হলে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে এমনটি মাথায় রেখেই খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে নিজেকে দূরে রাখেন। কিন্তু মার্চ মাসে তৃতীয় দফায় ৬ মাসের জন্য খালেদা জিয়া যখন মুক্তি পান তখন আবারও দেশে করোনাভাইরাসের দাপট বেড়ে যায়। তাই আপাতত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার বিষয়টির দিকে বেশি জোর না দিয়ে খালেদা জিয়া করোনা থেকে রক্ষা পেতে নিজেকে কঠোর সুরক্ষার মধ্যে রাখার দিকে নজর দিয়েছেন।