মৌলভীবাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বেশির ভাগ মানুষ, হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ

12

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে এক সপ্তাহের লকডাউনের প্রথমদিনে মৌলভীবাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বেশির ভাগ মানুষ। লকডাউনের প্রথমদিনে জেলাজুড়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে।
মার্কেট ও শপিংমল বন্ধ থাকলেও ছোট ছোট দোকান খোলা থাকতে দেখা যায়। দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ছোট ছোট যানবাহন ছিলো চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে রাস্তায় বের হওয়া ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়।
কাঁচাবাজারগুলোতেও দেখা গেছে একই চিত্র। ঘর থেকে বের হওয়া বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক ছাড়াই বের হয়েছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটার সময় নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না। দোকানগুলোতেও নেই সে ব্যবস্থা। ফার্মেসি থেকে কাঁচাবাজার কোথাও নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই। অনেক ক্রেতা ও বিক্রেতাকে বেচা কেনা করার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। অনেকের মাস্ক থাকলেও ব্যবহারে উদাসীন বা নির্দিষ্ট স্থান থেকে নামিয়ে থুতনিতে রাখতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ও জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, লকডাউনের সময় স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ও মাস্ক ছাড়া ঘর থেকে বের হলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা জানান, ইতোমধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় করোনা সংক্রমনের হার সারাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। এখন থেকে সবাই সচেতন না হলে করোনা মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বাধ্যতামূলক মাস্ক নিয়ে বের হতে হবে। করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে সবাইকে সরকারের বেঁধে দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। করোনার সংক্রমণ রোধে লকডাউন জারি করেছেন সরকার। একই সাথে দিয়েছেন ১১ দফা নির্দেশনা। এই নির্দেশনা দেওয়ার একটাই উদ্দেশ্য সংক্রমণ রোধ করা। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে মানুষের উদাসীনতায় সংক্রমণ ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। নিজেদের জীবন বাচাঁতে এ বিষয়ে সবাইকে আরও সচেতন হয়ে চলাফেরা প্রয়োজন।
এদিকে প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলায় প্রতিদিনই নতুন করে করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যান বাড়ছেই।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। দেশে উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকি আছে এমন তালিকায়ও রয়েছে জেলাটি। ১১ মার্চ থেকে জেলা জুড়ে নতুন করে সক্রমণের হার ক্রমেই বেড়েই চলছে। এ পরিস্থিতিতে সংক্রমণ রোধে মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব না থাকায় প্রতিদিন নিজ দায়িত্বে বিশেষ ব্যবস্থায় সংগৃহীত নমুনা সিলেটে পাঠাতে হচ্ছে। সেখান থেকে একদিন পর মিলছে পরীক্ষার রিপোর্ট। তাছাড়া করোনার টিকা নিতে ও পরীক্ষা করাতে মানুষের আগ্রহ একেবারেই কম। ৭টি উপজেলা মিলে প্রতিদিন নমুনা সংগৃহীত হচ্ছে ১শ জনেরও কম।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৬২টি নমুনা পরীক্ষায় ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সেই হিসেবে শনাক্তের হার ৩১ শতাংশ। যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ছিল ২২.২ ভাগ। মৌলভীবাজারে করোনা আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি শনাক্ত হয় গত বছরের ৫ এপ্রিল। একবছরে এই জেলার ২ হাজার ৭৬ জন করোনাভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন। সরকারি হিসেবে মারা গেছেন ২৪ জন। মৌলভীবাজারে মোট আক্রান্তের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯২৪ জন।
প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা মৌলভীবাজারে ফেব্রুয়ারির শুরুতে দৈনিক সংক্রমণের হার ছিল ৫ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু মার্চের শেষে এই হার এসে ঠেকেছে ৩০ শতাংশে। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা থাকলেও মানছেন না অনেকেই। করোনার টিকা গ্রহণেও উৎসাহ কমে এসেছে। ফলে জেলায় বাড়ছে করোনা সংক্রমণ।