হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সম্মেলনে হাওর বিষয় মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি, বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ

11

একে কুদরত পাশা সুনামগঞ্জ থেকে :
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী মু. ইনামুল হক বলেন, হাওর উন্নয়নের নামে হাওর এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ বিপন্ন হতে চলছে। হাওর এলাকার বিপন্ন প্রকৃতিকে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে হবে। হাওরের দেশী প্রজাতির মাছের দুরবস্থা নিরসন করতে হবে, হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের কারণে এখন আর আগের মতোন মা মাছেরা ডিম উৎপাদন করতে পারছেনা, অতিথি পাখিরা হাওরে আসছেনা, হাওরের প্রাকৃতিক উদ্ভিদ বিলুপ্ত হতে চলছে। তিনি আরো বলেন, শুধু বাঁধ নির্মাণ করলেই চলবে না, বোরো ফসল বৈশাখের আগে ঘরে তুলতে হবে, কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসের মধ্যে পিআইসি গঠন করে ফেলতে হবে, বৈশাখ মাসে বাঁধ কেটে ফেলতে হবে যাতে পানি প্রাকৃতিক ভাবে চলাচল করতে পারে, দেশীয় মাছ অবাধে বিচরণ করতে পারে। দিন দিন যেভাবে হাওরে মাছ কমছে এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে হাওরে আর মাছ পাওয়া যাবে না।
বুধবার স্থানীয় লতিফা কমিউনিটি সেন্টারে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক সালেহিন চৌধুরী শুভর সঞ্চালনায় জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা শিলা রায় ওবিকাশ রঞ্জন চৌধুরী ভানু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়। সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে কুদরত পাশা শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। সম্মেলনে হাওরাঞ্চল হিসেবে খ্যাত ৭ টি জেলার মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। প্রথম অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন, হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এডভোকেট স্বপন কুমার দাস রায়, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির আহবায়ক বাবু সুখেন্দু সেন, নেত্রকোনা জেলা কমিটির প্রতিনিধি আব্দুল হালিম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির প্রতিনিধি শামীম আহমেদ, হবিগঞ্জ জেলা কমিটির প্রতিনিধি জাফর ইকবাল চৌধুরী, এম এ জব্বার, সিলেট জেলা কমিটির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দীন, যুগ্ম আহবায়ক কাউসার আহমদ, যুগ্ম আহ্বায়ক সুব্রত দাস, সদস্য তারেক আল মঈন, সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য সচিব রাজু আহমদ, সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদ নূর আহমদ, জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির আহবায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, দিরাই উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সামছুল ইসলাম সরদার, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি আব্দুল গণি, তাহিরপুর উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক তোজাম্মুন হক নাসরুম, শাল্লা উপজেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাশ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ জালাল উদ্দিন,জামালগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি শাহানা আল আজাদ প্রমুখ। এ সময় সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি আলী হায়দার ও সর্বদলীয় সম্প্রীতি উদ্যোগ সুনামগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী মিসবাহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন মানিক চন্দ, ওবায়দুল হক মুন্সি। অতিথিদের স্বাগত জানান, কেন্দ্রীয় বাঁধ বিষয়ক সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন ও জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলুল করিম সাঈদ।
বক্তারা হাওর বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের জন্য পুনরায় দাবি তুলেন, তারা বলেন হাওরের বিষয়ে এখন মাতব্বরের অভাব নেই। হাওর মন্ত্রণালয় গঠন করা হলে এক জায়গা থেকে কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে ফলে হাওরবাসী উপকৃত হবেন। তারা বলেন যেভাবে পার্বত্য মন্ত্রণালয় রয়েছে সেভাবেই হাওর বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।
২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৩১ মার্চ পর্যন্ত হাওরের কোন বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হিন্দু পল্লীতে হামলার নিন্দা জানিয়ে তারা বলেন, হাওরাঞ্চল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এলাকা এখানে এমন গঠনা মেনে নেওয়া যায় না, তারা প্রশাসনকে আহ্বান জানান সঠিক তথ্য উৎঘাটন করে মানুষের মাঝে প্রশাসনকে সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে হবে। বক্তারা দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, হাওরের সামগ্রিক উন্ননয় কাজে কৃষকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, নদী খনন করে নদী শাসন নিশ্চিত করতে হবে। কাউন্সিলে হাওর বিষয়ক পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানানো হয়।
কাউন্সিল অধিবেশনের শুরুতেই সভাপতি বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। পরে সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা শিলা রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় কাউন্সিল অধিবেশন। অধিবেশন সভাপতি পদে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বিজন সেন রায়ের নাম ঘোষণা হলে আর কেউ এ দুপদে প্রার্থী না হওয়ায় তারা নির্বাচিত হন। নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে শপথ পাঠ করান সংগঠনের উপদেষ্টা শীলা রায়। আগামী তনি দিনের মধ্যে পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার জন্য নির্বাচিতদের দায়িত্ব দেওয়া হয়।