১৪ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী গ্রেফতার ॥ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থানের মধ্যে দিয়ে নগরীতে হেফাজতের বিক্ষোভ সমাবেশ

18
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে নয়াসড়ক এলাকা থেকে ১৪ জামায়াত-শিবির কর্মী ও ১৩টি মোটরসাইকেল আটক করে পুলিশ। ছবি- মামুন হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার :
কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেট নরীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থানের মধ্যে দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। গতকাল শনিবার বাদ আছর নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এ সময় ওই এলাকায় সতর্ক অবস্থানে ছিলো বিপুল সংখ্যক পুলিশ। পাশাপাশি নিরাপত্তায় র‌্যাব ও বিজিবির টহল জোরদার করা হয়।
গত শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোদী বিক্ষোভকালে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ৫ মাদ্রাসা ছাত্র নিহতের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ করা হয়। একই ঘটনার প্রতিবাদে আজ রবিবার হরতাল ডেকেছে ধর্মভিত্তিক এই সংগঠনটি। তবে ক্ষমতাশীল দল এ হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানা গেছে।
গতকাল শনিবার বিকেল সোয়া ৫টায় নগরীর বন্দরবাজারের কালেক্টরেট মসজিদের সামনে থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে। এরপর চৌহাট্টা ঘুরে মিছিলটি আবারও বন্দরবাজারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করে হেফাজত নেতারা। তখন পুলিশ তাদেরকে বাধা দিতে দেখা যায়নি। এসময় ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সমাবেশ থেকে হেফাজত নেতারা রবিবার হরতাল স্বত:স্ফূর্তভাবে পালনের আহবান জানিয়ে চট্টগ্রামের ‘৭ জন শহিদের’ রক্ত বৃথা যেতে পারে না উল্লেখ করে সমাবেশে হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা গতকালের মতো আজও শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি (হরতাল)

কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম।

পালন করবো। আজকের হরতালে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে আমরাও এর দাঁতভাঙা জবাব দেবো।
হেফাজতে ইসলাম কেন্দ্রীয় নায়বে আমির ও সিলেট জেলার সভাপতি মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ির সভাপতিত্বে ও জামেয়া মাদানীয়া কাজিরবাজারের প্রিন্সিপাল হেফাজত নেতা মাওলানা সামিউর রহমান মুসার পরিচালনায় সমাবেশে নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন- হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, জেলা হেফাজত নেতা মাওলানা ফয়জুল হাসান কাদিমানী, মহানগর হেফাজত নেতা মাওলানা খলিলুর রহমান, মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ, জেলা হেফাজত নেতা মাওলানা ইকবাল হোসাইন, মহানগর হেফাজত নেতা মাওলানা নজরুল ইসলাম, মাওলানা আতিকুর রহমান, মাওলানা মুহিবুর রহমান, মাওলানা এমরান আলম, মাওলানা সৈয়দ সলিম ক্বাসেমী, মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী, মাওলানা নজমুদ্দিন ক্বাসেমী, মাওলানা মাহমুদ শুয়াইব, মাওলানা মুহিব্বুল হক, মাওলানা ছদরুল আমীন, মাওলানা আখতারুজ্জামান তালুকদার, মাওলানা মুশফিকুর রহমান মামুন, মাওলানা ফাহাদ আমান, মাওলানা সালেহ আহমদ শাহবাগী, মাওলানা আমিন আহমদ রাজু, আসলাম রাহমানী, মাওলানা হাফিজ কবির আহমদ, মাওলানা হারুন রশিদ, মাওলানা লুৎফুর রহমান, আবু সুফিয়ান, আবু বক্কর সিদ্দিক, আবুল খয়ের, আব্দুল করিম দিলদার ও মাওলানা একরামুল হক জুনেদ। শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে দোয়ার মাধ্যমে হেফাজতের সমাবেশের সমাপ্তি ঘটে।
এদিকে, হেফাজতের মিছিল শুরুর পর বন্দরবাজার-জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কের পথচারী এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। অনেক ব্যবসায়ী দোকানপাট বন্ধ করে দেন। পথচারীরা আতঙ্কে সড়ক ছেড়ে চলে যান।
হেফাজতের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার দুপুর থেকে বন্দরবাজার এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। সিলেট নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও নাশকতারোধে পুলিশের পাশপাশি ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়। তবে বিক্ষোভকালে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এরআগে একই ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার সকালে নগরীতে বিক্ষোভ করে জামায়াত-শিবির। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন পুলিশ তাদের বিক্ষোভ থেকে ১৪ নেতাকর্মীকে আটক করে।
আটককৃতরা হচ্ছেন- নগরী শাহজালাল উপশহর ই ব্লকের ৬নং রোডের বাসিন্দা জকিগঞ্জ উপজেলার সোনাসার গ্রামের ফখর উদ্দিনের পুত্র জুয়েল আহমদ (২০), নগরীর সুরমা টাওয়ারের বাসিন্দা সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক সেওতরছড় গ্রামের মৃত আমীর আলীর পুত্র জুনেদ আহমদ (২২), নগরীর বাদামবাগিচার ৩৮/৪ নম্বর বাসার মৃত আবু উবায়দার পুত্র মো. মিজানুর রহমান মুন্না (২১), নিপবন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা কানাইঘাট উপজেলার ভাল্লুকখাড়ার শিবাহ উদ্দিনের পুত্র মো. খায়রুল হাসান (২৪), জালালাবাদ থানার উমাইরগাঁও’র আবদুল মান্নানের পুত্র মো. মাজহারুল ইসলাম (২০), নগরীর আম্বরখানা ইলেকট্রিক সাপ্লাই’র মাহমুদ আলীর পুত্র মো. তোফায়েল আহমদ (২১), নগরীর ইসলামপুরের বাসিন্দা মৌলভীবাজার বড়লেখা সদরের আতিকুর রহমানের পুত্র মো. হাফিজুর রহমান (২০), নেত্রকানা জেলার খালিয়াজুড়ি থানার বল্লি গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের পুত্র মো. আলী মর্তুজা (২৩)। অপর কয়েক জনের নাম পরিচয় জানা সম্ভবপর হয়নি।
জামায়াত-শিবিরের ১৪ নেতাকর্মী আটককের বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালী মডেল থানার এসএম আবু ফরহাদ জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ এসল্ট মামলা দায়েরের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।