অসহযোগ আন্দোলন

19

একাত্তরের মার্চ মাস ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উত্তাল সময়। এক মার্চ থেকে অব্যাহত বিক্ষোভ মিছিল-মিটিং আর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার সভা-সমাবেশে ঢাকা-চট্টগ্রাম শহর সহ দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তিন মার্চের হরতাল চলাকালিন সময়ে ঢাকার পল্টন ময়দানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকা ছাত্র জনসভায় আকস্মিক ভাবে উপস্থিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছাত্র-জনতার বিশাল সভায় বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন, সেদিনেই স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রিয় ছাত্র- সংগ্রাম পরিষদের চার নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, শাহাজান সিরাজ, আ স ম আব্দুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ার শপথ নেন। এদিনই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইশতেহার ঘোষনা করা হয়। ইশতেহারে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক হিসাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ঘোষনা করা হয়। এছাড়া বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আমার সোনার বাংলা- আমি তোমায় ভালোবাসি” এ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে নির্বাচিত করা হয়।
তিন মার্চের অর্ধ দিবস শান্তিপূর্ণ হরতাল চলাকালিন সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশের প্রায় শতাধিক বিক্ষোভকারী প্রাণ হারান। এদিনের পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে তৎকালীন স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান ত্বরিৎ পার্লামেন্টরি গ্রুপের ১২ জন নির্বাচিত নেতাকে দশ মার্চ বৈঠকের আমন্ত্রণ জানান। এ আমন্ত্রণ পত্রকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রত্যাখ্যান করেন। পাকিস্তানের ভুট্টো আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। মৌলানা ভাসানীর তীব্র নিন্দামূলক ও ব্যাঙ্গাত্মক টেলিগ্রাম পৌঁছে স্বৈরাচার ইয়াহিয়ার কাছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বাধীনতার সংগ্রাম আরো এগিয়ে যায়। দেশবাসী বড় ধরনের আন্দোলন সংগ্রামের অপেক্ষায় থাকে। এতসব আন্দোলন সংগ্রামের সংবাদ প্রকাশে স্বৈরাচর নিষিদ্ধ করলেও লন্ডনের বিবিসি সংবাদ সংস্থা কোথায় কি ঘটছে তা দেশের জনগণ শোনার জন্যে প্রতিনিয়ত অপেক্ষায় থাকতে হতো।
একাত্তরের পহেলা মার্চ থেকে বাঙলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের দৃষ্টি ছিল বাঙালি জাতির নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর। শুধু বাংলার সাধারণ মানুষ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের উপর আস্থা ছিল প্রচন্ড।
এদিকে বাঙালির জাতির বিক্ষোভে সাধারণ মানুষের ঢল দেখে পাকিস্তানিরা নানা ফন্দি ও কৌশলের পথ নেয়। তিন মার্চের স্বত:স্ফূর্ত হরতাল পালন আর পাকিস্তানি বাহিনীর বন্দুকধারিদের গুলিতে বিক্ষোভকারিদের হত্যার প্রতিরোধে সারা বাংলায় সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধতা আরো দৃঢ় হতে থাকে। বাংলার প্রত্যন্তাঞ্চলে হত্যার প্রতিবাদে ঝড় উঠে। পাকিস্তানি খেদাও আন্দোলন শক্তিশালী হতে থাকে। সর্বত্র হরতাল অব্যাহত থাকে।