টাঙ্গুয়ার হাওরে সংঘবদ্ধ জেলেদের মাছ লুটের মহোৎসব

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সুনামগঞ্জ দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট মা মাছের অভয়ারণ্য টাঙ্গুয়ার হাওরের পানি কমতে শুরু করেছে। সেই সাথে হাওরে অবৈধ ভাবে সংঘবদ্ধ জেলেদের মাছ লুটের মহোৎসব শুরু হয়েছে।
চলতি বছরে টাঙ্গুয়ার হাওরে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায়, অবৈধ জাল আটকে বড় ধরনের কোন অভিযান না হওয়ায় মাছ লুটেরা অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে টাঙ্গুয়ার হাওরের মাছের অভয়াশ্রম রুপাবুই, রৌহা, তেকুইন্যা, চটানিয়া সহ বিভিন্ন স্থানে গেলে চোখে পড়ে মাছ শিকারের দৃশ্য। যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই চোখে পড়ে সংঘবদ্ধ জেলেদের চৌহন্দা জাল দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য। উগ্রপন্থী জেলেরা প্রতিটি চৌহন্দা জালে ১৪-১৫জনের একটি গ্রুপ করে, প্রায় ২০থেকে ২৫টি গ্রুপ সংঘবদ্ধ হয়ে মৎস্য লুটের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্চে। এবং ছোট ছোট নৌকায় হাওরের কিনারে কিনারে জেলেরা কারেন্ট জাল আর চাই দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ শিকার করছে। চৌহন্দাজাল দিয়ে সংঘবদ্ধ মাছ শিকারিদের ছবি তুলতে গেলে বাঁধা নিষেধ করে জেলেরা। অনেক ঝুঁকি নিয়ে কৌশলে কয়েকটি ছবি তুলতে পেরেছি।
এছাড়াও প্রতি রাতেই ১২টা থেকে ভোররাত পর্যন্ত টাঙ্গুয়ার হাওরের উল্লেখযোগ্য মাছের অভয়াশ্রম আলমের দোয়ার সহ শ্রীপুর বাজার হতে বোয়ালমারা পর্যন্ত উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের,খালাশ্রীপুর,মন্দিয়াতা,তেলিগাও,ছিনীতাহিরপুর, জয়পুর গ্রামের জেলেরা সংঘবদ্ধ হয়ে নিষিদ্ধ কোনাজাল ও বানরিজাল দিয়ে মৎস্য নিধন করছে।
জানা যায় টাঙ্গুয়ার হাওরে দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি গার্ডের সদস্যরা জেলেদের বাধা নিষেধ করলে, সংঘবদ্ধ জেলেরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সাথে থাকা লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া দেয়, গার্ডের সদস্যদের জনবল কম ও নিরস্ত্র থাকায় তাদের সাথে পেরে উঠতে পারছে না।
স্থানীয়দের তথ্যমতে জানাযায় টাঙ্গুয়ার হাওর সংলগ্ন লামাগাঁও, রামসিংহপুর, হুকুমপুর, ইন্দ্রপুর,মন্দিয়াতাসহ কয়েকটি গ্রামের জেলেরা, হাওরে পানি কমতে শুরু হওয়ার সাথে সাথেই সংঘবদ্ধ হয়ে চৌহন্দা জাল দিয়ে অবৈধভাবে মৎস্য নিধন করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এসব চৌহন্দা ও কোনাজালের অবৈধ মৎস্য আহরণের কারণে হাওটি প্রায় মাছ শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এমনকি হাওরে জলজ উদ্ভিদ কিংবা শেওলাও জন্ম নিতে পারে না। দিবারাত্রি সমানতালে চলছে মৎস্য নিধন, হাওর থেকে অবৈধ মৎস্য আহরণ বন্ধ করতে না পারলে এক সময় হাওরটিতে ঔষধের জন্যও মাছ খোঁজে পাওয়া যাবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির তথ্যমতে জানাযায় টাঙ্গুয়ার হাওর সংলগ্ন হুকুমপুর গ্রামের নুরুল আমিন এর ছেলে আরিফ মিয়া নেতৃত্বে ১২-১৪জনের একটি গ্রুপ, রামসিংহপুর গ্রামের মহব্বত আলীর ছেলে উজ্জ্বল মিয়ার নেতৃত্বে ১২-১৪জনের একটি গ্রুপ, লামাগাঁও গ্রামের নুরুল হকের ছেলে রুবেল মিয়ার নেতৃত্বে ১২-১৪জনের একটি গ্রুপ, লামাগাঁও গ্রামের নুর আলম মিয়ার ছেলে আলকুশ মিয়ার নেতৃত্বে ১২-১৪জনের একটি গ্রুপ, ইন্দ্রপুর গ্রামের মন্টু বর্মন এর ছেলে দীনবন্ধু বর্মন এর নেতৃত্বে ১২-১৪জনের একটি গ্রুপ, ইন্দ্রপুর গ্রামের গোপেশ বর্মন পিতা অজ্ঞাত এর নেতৃত্বে ১২-১৪জনের একটি গ্রুপ, এবং ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের বংশীকুন্ডা গ্রামের নুর মিয়ার ছেলে রিপন মিয়ার নেতৃত্বে ১২-১৪জনের একটি গ্রুপ সহ কয়েকটি গ্রুপ প্রতিদিন সংঘবদ্ধ হয়ে মৎস্য নিধন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও প্রতি রাত মন্দিয়াতা, মইয়াজুরী, খালা শ্রীপুর, তেলীগাঁও, ছিলানী তাহিরপুর, জয়পুরসহ কয়েকটি গ্রুপ প্রতিরাত আলমের দোয়ার সহ বিভিন্ন স্থানে সংঘবদ্ধ হয়ে মৎস্য নিধন করছে।
স্থানীয় সুশীলসমাজের প্রতিনিধিগণ জানান অচিরেই এই মৎস্য নিধনযজ্ঞ বন্ধ না করলে এই মা মাছের অভয়ারণ্য ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা বলেন টাঙ্গুয়ার হাওরে পূর্বের ন্যায় দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় টাঙ্গুয়ার হাওরে এবার অরক্ষিত হয়ে গেছে, ৮-৯জন কমিউনিটি গার্ডের পক্ষে এই সংসংঘবদ্ধ জেলেদের মৎস্য নিধন বন্ধ করা সম্ভব না।
এ ব্যাপারে টাঙ্গুয়ার হাওর কেন্দ্রীয় সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ কবির বলেন এই বিশাল হাওরটি এবং সংঘবদ্ধ জেলেদের মৎস্য নিধন বন্ধ করতে মাত্র কয়েক জন কমিউনিটি গার্ডদের পক্ষে সম্ভব নয়, উনি আর বলেন অতিদ্রুত হাওরে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা এদের ধমন করার দাবি জানান।
এ ব্যাপারে হাওর সংলগ্ন ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা,সিলেটে কর্মরত সমীরণ তালুকদার, টাঙ্গুয়ার হাওর দেখতে এসে বলেন, মা মাছের অভয়ারণ্য টাঙ্গুয়ার হাওর এখন অবৈধ জেলেদের দখলে, এভাবে মৎস্য নিধন চলতে থাকলে হাওরে কিছুই থাকবে না, দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।
এ ব্যাপারে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পিযুস পুরকায়স্থ টিটু বলেন, হাওরে অবৈধ মৎস্য নিধন বন্ধ করতে হবে এবং প্রতিটি অভয়াশ্রম পর্যাপ্ত কাঠা বাঁশ স্থাপন ও বৃক্ষরোপণ করে কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়াতে হবে।এ ব্যাপারে উনি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের প্রতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া অনুরোধ জানান।