প্রস্তুতি সম্পন্ন, ছাতক পৌরসভা নির্বাচন কাল

12

আতিকুর রহমান মাহমুদ ছাতক থেকে :
শিল্প নগর খ্যাত ছাতক পৌরসভা নির্বাচন ১৬ জানুয়ারি। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ করা হবে। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৩০হাজার ২৮০ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ হাজার ২৭১ ও নারী ভোটার ১৫ হাজার ৯ জন রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার পর থেকে সব ধরণের প্রচারিভাযান শেষ হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খরা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাতক পৌরবাসীকে উপহার দেয়ার জন্য সকল ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন।
পৌরবাসীও নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার প্রত্যাশায় আছেন। বিশেষ করে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীকে ঘিরে সরগরম ভোটের মাঠ। এবার পৌরসভা নির্বাচনে কে হবেন ছাতক পৌরসভার মেয়র, এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ভোটারদের মনে। এখানে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী (নৌকা) ও বিএনপির মনোনীত
প্রার্থী রাশেদা আহমেদ ন্যান্সি (ধানের শীষ) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আবুল কালাম চৌধুরী এর আগে টানা তিনবার মেয়র ছিলেন। এটি চতুর্থ বারের মতো তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাশিদা আহমেদ ন্যান্সি মেয়র পদে তিনি প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এর আগে তিনি ছাতক উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। দু’দলের দুইজন প্রার্থী হওয়ায় প্রথম থেকেই সরগরম হয়ে উঠে। এ নির্বাচনী আমেজটি উৎসবে পরিণত হয়েছে।
পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে পৌরশহরের প্রতিটি অলি-গলি ও পাড়া-মহল্লা। দলীয় প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকে দলের নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে প্রচার-প্রচারনায় নেমেছিলেন প্রার্থীদ্বয়।
ভোটারদের সাথে তারা মতবিনিময় সভা করে দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করে আসছিলেন। শীতকে উপেক্ষা করে দিন- রাত সমান তালে প্রার্থীরা মানুষের কাছ থেকে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন। নিজেদের সমর্থকের পাল্লা ভারি করে তুলতে সকল ধরণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন প্রার্থী ও দলীও নেতা- কর্মীরা। ছাতকে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন কেন্দ্রিয়, জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা। বিএনপির প্রার্থীর পক্ষেও কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও জেলা উপজেলার নেতৃবৃন্দরা প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। দলীয় কোন্দল না থাকায় প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিএনপির স্থানীয় দু’বলয়ের নেতারা ঐক্য। এ ঐক্যের কারণে তারা বেশ ফুরফুরে। অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে বিএনপির প্রার্থী। যে কারণে ১৬ জানুয়ারি পৌর নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী রাশিদা আহমেদ ন্যান্সির বিজয়ের সম্ভাবনা দেখছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
অন্যদিকে দলীয় বিভক্তি ও কোন্দলের কারণে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আবুল কালাম চৌধুরীর পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলয়ের নেতা-কর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। কিন্তু শেষ পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহিদ মজনুসহ অন্যান্য নেতারা নৌকার পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন পথসভায় বক্তব্য দিয়েছেন।
বিগত ১৫ বছরের কর্মকান্ড তুলে ধরে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম চৌধুরী জানান, দেশ জুড়ে উন্নয়নের মহোৎসব চলছে। এর অংশ হিসেবে ছাতক পৌরসভায়ও উন্নয়ন চলমান রয়েছে। চলমান কাজ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এ পৌরসভাটি একটি আধুনিক পৌর সভায় রূপ নেবে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ১৬ জানুয়ারি নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য সকল ভোটারদের প্রতি তিনি আহবান জানান। বিএনপির প্রার্থী রাশিদা আহমেদ ন্যান্সি জানান, জনবান্ধব মেয়র হতে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে নির্বাচনী মাঠে কাজ করে পৌরবাসীর সমর্থন আদায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে পৌরবাসীও ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নিবার্চন হলে ধানের শীষ বিজয়ী হবে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, এক যুগেরও অধিক সময় ধরে বর্তমান মেয়র পৌরবাসীকে শাসন করছে। এ পৌর সভায় ভাল ড্রেনেজ ব্যবস্থা, লাইটিং ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কোন ব্যবস্থা নেই। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তুপ। বর্ষায় কর্দমাক্ত রাস্তায় মানুষ হাটা-চলা করতে পারে না। তিনি ১৬ জানুয়ারি নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে পৌরসভার সকল ভোটারদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
সূত্রে জানা যায়, ছাতক পৌরসভা স্থাপিত হয় ১৯৯৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পৌরসভাটি ক’ শ্রেণীতে উন্নীত হয়। এ পৌর সভায় প্রতিষ্ঠাকালিন নির্বাচনে পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল ওয়াহিদ মজনু মিয়া। তিনি ৮ এপ্রিল ১৯৯৯ থেকে ১৬ নভেম্বর ২০০৪ পর্যন্ত পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর পর ১৭ নভেম্বর ২০০৪ সাল থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত টানা তিনবার অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আবুল কালাম চৌধুরী বিজয় লাভ করে পৌর চেয়ারম্যান ও পরে পৌর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। শুরু থেকে পৌর সভাটি আওয়ামীলীগের দখলে রয়েছে। এ নির্বাচনে দু’দলের দুইজন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও ৯টি ওয়ার্ডে ৩৩জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৪জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ভোট যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ। এখন পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচনে বেঁছে নেয়ার পালা ভোটারের। ভোটাররাও তাদের মূল্যবান ভোটটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। যাকে ভোট দিলে পৌরবাসীর কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হবে এমন প্রার্থীকে পছন্দ করছেন ভোটাররা। ছাতক উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্ত ফয়েজুর রহমান জানান, নির্বাচনী সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। ১৬ জানুয়ারি শনিবার ১৯টি কেন্দ্রের ৭৭টি ভোট কক্ষে ছাতক পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।