করোনা নিয়ে শাবির গবেষণার পর সিলেটে নতুন করে আতংক

366

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা নিয়ে সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগ এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে। এমন সময়ে বাড়তি উদ্বেগ তৈরি করেছে ‘নতুন স্টেইন’ আর সিলেট-বিলেতের ফ্লাইট।
বৃহস্পতিবারও সিলেটে ফিরেছেন ২৮ লন্ডনি। এর আগে সোমবার ৪২ জন এসেছেন। এ ৭০ জনকে হোটেলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
তাতেই শেষ নয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগায় এমন ছয় ধরনের করোনা (মিউটেশন বা রূপান্তরিত রূপ) মিলেছে যা এ পর্যন্ত বিশ্বের কোথাও পাওয়া যায়নি। সিলেটে তাই আতঙ্ক বেড়েছে।
সিলেটের সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা থেকে নমুনা নিয়ে গবেষণা চালায় শাবির জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগ।
বিভাগের প্রভাষক জিএম নূরনবী আজাদ জুয়েল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে জানান, গবেষণায় তারা করোনার ৩০টি মিউটেশন লক্ষ্য করেন। এরমধ্যে ছয়টি শুধু বাংলাদেশেই রয়েছে। এ ছাড়া একটি মিউটেশন সিলেট ছাড়া কোথাও নেই।
শাবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, মানবিক দায়বোধ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ল্যাবে বসিয়ে আমরা গবেষণা শুরু করি। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ গবেষণাগারে পাঠালে তারাও একমত হয় এবং তাদের ওয়েবসাইটে প্রচার করছে।
এখন সিলেট ও মৌলভীবাজার থেকে সংগ্রহ করা নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং চলছে। আশা করি এ থেকেও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। এতে এ এলাকায় করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হবে।
ফরিদ উদ্দিন আরও বলেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ সবচেয়ে বেশি হওয়ায় সিলেট অঞ্চলে নতুন স্টেইন ছড়িয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। তাই গবেষণা আরও বাড়ানোর জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার প্রক্রিয়া চলছে।
শিগগির চার কোটি টাকা ব্যয়ে জিনম সিকোয়েন্সিং মেশিন কেনা হবে। সেইসঙ্গে গবেষকদের আলাদা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করাসহ আরও অনেক খরচ রয়েছে।
শাবির মত একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন ব্যয় অনেক কষ্টসাধ্য। তারপরও আমরা দেশ-জাতির প্রয়োজনেই গবেষণায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় আমাদের সবাইকেই দায়িত্বশীল হতে হবে।
সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মন্ডল বলেন, নতুন স্টেইন মোকাবিলার ব্যাপারে লিখিত কোনো নির্দেশনা আসেনি। তারপরও বাড়তি সতর্কতা আমাদের রয়েছে। যেহেতু বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সিলেটের যোগাযোগ রয়েছে। শাবির গবেষণা প্রতিবেদনের লিখিত তথ্য না পেলেও শুনেছি। এ ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
সিলেট বিভাগের সহকারী স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, লন্ডনে আলোচিত নতুন স্টেইন-এর সংক্রমণ বা লক্ষণ সিলেটে এখনো ধরা পড়েনি। ৭০ প্রবাসী কোয়ারেন্টিনে আছেন। তাদের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
সিলেটে করোনা রোগীদের আইসোলেশন কেন্দ্র শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা ডা. সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, করোনা শনাক্ত করার পাশাপাশি চিকিৎসকরা রোগীদের লক্ষণ এন্ট্রি করছেন। এসব ডাটা থেকে করোনা সম্পর্কিত নতুন কিছু তথ্য বের করে আনার চেষ্টা করছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়া জানান, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়ালেও সিলেটের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক।
বৃহস্পতিবার চব্বিশ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে ১৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ১৮ জন। করোনায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেনি।