শাবিতে অনলাইনে পরীক্ষা, বৈষম্যের আশংকায় শিক্ষার্থীরা

10

শাবি থেকে সংবাদদাতা :
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় না খোলায় অনলাইনে টার্মটেস্ট ও কুইজ পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এমন সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ার আশংকা প্রকাশ করছেন অনেকে।
অনলাইনে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নেওয়া পরীক্ষায় সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারবে কিনা সেই প্রশ্ন তুলছেন বিগত সময়ে অনলাইন ক্লাসের সমালোচনা করে আসা শিক্ষার্থীরা।
করোনা ভাইরাসের প্রকোপে মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে শাবিপ্রবি। তবে বন্ধের শুরু থেকেই নিয়মিত অনলাইন ক্লাস চালিয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সমস্যা থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থী এসময় নিয়মিত ক্লাস করতে পারেন নি বলে অভিযোগ রয়েছে। যার ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৭ই মে অনলাইন ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন।
পরবর্তীতে ক্লাসে ফিরে যেতে ৬ জুন প্রশাসনকে ১২ দফা দাবি পূরণ করার শর্ত বেধে দেয় শিক্ষার্থীরা। তবে ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব দাবি পূরণ না করায় শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ প্রশাসনের বিরোধিতা এবং অনলাইন ক্লাস বর্জন আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলেন।
যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত জাহান বর্ণিকা বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই গ্রামে থাকেন যেখানে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। অনলাইন ক্লাসে ম্যাক্সিমাম ১৫-১৬ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকেন, এই কম শিক্ষার্থীদের মধ্যেই অনেকে গ্রাম থেকে সিলেট চলে এসেছেন শুধুমাত্র ক্লাস করার জন্যে। অনেকে সিলেট আসতে পারছেন না কারণ এই প্যান্ডেমিকের সময়ে ফ্যামিলিকে সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। তাহলে যেখানে এই মানুষগুলো ক্লাস করতেই হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে পরীক্ষা নেওয়া কতটুকু যৌক্তিক? শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা চিন্তা করেই এটেন্ডেন্সে কোনো মার্ক্স থাকবে না, পরীক্ষা নেওয়া হবে না বলা হয়েছিল। এখন ৪০ নাম্বারের মত ভাইটাল মার্ক্স এই অর্ধেকের বেশি বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা কিভাবে তুলতে পারবে? আর এই পর্যন্ত কোনো ব্যবহারিক ক্লাসও নিতে পারছেন না শিক্ষকরা। যেখানে ক্লাসই ঠিকমত হচ্ছে না, সেখানে পরীক্ষা নেওয়ার কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। তাছাড়া ছেলেরা সিলেট এসে তাদের মেসে থাকতে পারছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য সিলেট এসে থাকাও সম্ভব হচ্ছে না। অনেক শিক্ষার্থীর ডিভাইস নেই, ডিভাইস দেওয়া হবে বলা হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা পান নাই। অনেকের জিপি সিম নেই, আবার অনেক জায়গায় তো ইন্টারনেট কানেকশনই পাওয়া যায় না।
প্যান্ডেমিকের খারাপ অবস্থার কথা বিবেচনা করেই আমরা অনলাইনে ক্লাস করতে সম্মত হয়েছিলাম, যদিও এই সিদ্ধান্তে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বঞ্চিত হচ্ছেন। এখন এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকেরা যদি তাঁদের বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা না করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে সত্যিই তা দুঃখজনক।
এ বিষয়ে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী তানিম খন্দকার বলেন, অনলাইনে পরীক্ষা নিলে অনেক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া এ সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে নেয়া হয়নি। প্রশাসন একরকম নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হচ্ছে না। আমরা আগেও দেখেছি অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কোন দাবি মেনে নেয়নি প্রশাসন। গত তিন মাস গ্রামীণ সিম ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীদের একটা অংশকে মোবাইলে ডাটা সরবরাহ করছে কর্তৃপক্ষ। তবে এক্ষেত্রেও এক ধরণের বৈষম্য তৈরি করেছে প্রশাসন কারণ যেসব শিক্ষার্থী গ্রামীন ছাড়া অন্য সিম ব্যবহার করে তাদেরকে ডাটা দেওয়া হয়নি। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের যেখানে অনলাইন ক্লাসেই অংশগ্রহণ অনেক কম সেখানে পরীক্ষায় কতজন অংশ গ্রহণ করতে পারে সেটাই একটি বিবেচনার বিষয়। তাই এসব বিতর্কিত সিদ্ধান্ত থেকে প্রশাসনের সরে আসা উচিত বলে মনে করি।
এ বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট শাবিপ্রবি শাখার দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক তানভীর রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ইউজিসি অনলাইন ক্লাস নিতে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহকে বাধ্য করেছে। যার ফলে প্রথম থেকেই এক বৈষম্যমূলক শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীরা ক্লাস করার কোনো সুযোগই পাচ্ছে না। এরকম একটা বৈষম্যমূলক নীতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইন ক্লাস করতে বাধ্য করে ক্লাস নেওয়ার পরে এখন আবার অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরো বৈষম্য তৈরি করবে। কারণ একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তখন এমনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না।
অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে কোন বৈষম্য তৈরি হবে কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার বলেন, অনলাইনে পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের মাঝে কোন বৈষম্য তৈরি হবে না। আমরা সকল শিক্ষককে বলে দিয়েছি যাতে কোন ধরণের বৈষম্য তৈরি না হয়। প্রত্যেক শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে পরীক্ষা নিবে। এক্ষেত্রে কোন শিক্ষার্থী যদি সমস্যার কারণে সঠিক সময়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে অসমর্থ হয় তখন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করতে পারবে। এক্ষেত্রে আমরা শিক্ষকদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি। কোন রকম বাঁধা ধরা নিয়ম রাখা হয়নি।