দেশে করোনা রোধে টিকা তৈরী

13

করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরির তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে বিশ্বব্যাপী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকার উদ্ভাবন ও অগ্রগতির হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে নিয়মিত। তাদের মতে এ পর্যন্ত ৪২টি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলমান। এবার এই তালিকায় সংযুক্ত হলো বাংলাদেশের নামও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় যে ১১৫টি টিকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পূর্বাবস্থায় রয়েছে সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের তিনটি টিকার নামও আছে। এটি অবশ্যই একটা গর্ব করার বিষয়। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং উন্নত মানের। অনেক ওষুধ যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ রফতানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এখন দেখা যাচ্ছে দেশের বিজ্ঞানীদের চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণা এবং সাফল্যও যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। গ্লোব কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের উদ্ভাবিত তিনটি টিকা তারা ইতোমধ্যে প্রাণীর ওপর প্রয়োগ করে সাফল্য পেয়েছেন। এবার তারা যাবেন মানুষের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে। এ কাজে তাদের সহযোগিতা করবে ঢাকার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা সংস্থা আইসিডিডিআরবি। সংস্থাটি গবেষণা প্রটোকল তৈরি করে পেশ করবে বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশনে (বিএমআরসি)। এরা অনুমোদন দিলেই বাংলাদেশের টিকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগে আর বাধা থাকবে না। তবে বাংলাদেশের টিকার প্রয়োগে অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএরও। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে চীনের সিনোভেকের টিকার পরীক্ষামূলক ট্রায়াল অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেননা, চীনের প্রতিষ্ঠানটি এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ অর্থায়নের প্রস্তাব করেছে, প্রথমে সমঝোতা স্মারকে যা ছিল না। অন্যদিকে স্বাস্থ্য সচিব জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী অনুমোদন পেলে দেশে আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। এর জন্য সরকার অর্থও বরাদ্দ রেখেছে আলাদাভাবে। বিশ্বব্যাংকও এগিয়ে এসেছে অর্থায়নে। তবে সর্ববৃহৎ বৈশ্বিক আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ অধিবেশনে ভার্চুয়াল ভাষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি যে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন, তা সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য। করোনা মহামারীর ভ্যাকসিন যে দেশই প্রথম আবিষ্কার করুক না কেন, সেটিকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে সব দেশের জন্য এর প্রাপ্তি সহজসাধ্য সুলভ ও নিশ্চিত করা আবশ্যক। প্রধানমন্ত্রীর এই উদার আহ্বান বিশ্ব নেতৃবৃন্দের ঐকমত্য প্রকাশ করার এখনই সময়। কেননা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে সতর্ক করে বলেছে, করোনা অতিমারীতে অন্তত ২০ লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে আগামীতে। সে অবস্থায় ভ্যাকসিনের মেধাস্বত্ব হতে হবে বৈশ্বিক, যাতে সহজে ও সুলভে সব দেশ ও জাতির জন্য এর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়। জাতিসংঘসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে।