এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনা ॥ ধর্ষক সাইফুর, অর্জুন ও রবিউল ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডে, আরো ৩ জন গ্রেফতার

16
এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় রিমান্ডে নেওয়া সাইফুর, অর্জুন ও রবিউল (উপরে) র‌্যাবের অভিযানে আটক তিন জন (নিচে)।

স্টাফ রিপোর্টার :
ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিট সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাস এলাকায় ক্যাম্পাস থেকে গৃহবধূ তরুণীকে (১৯) তুলে নিয়ে গিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গণধর্ষণের ঘটনার দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতারকৃত ৩ ধর্ষককে ৫দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার ওসি (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য্য রাজন কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে ৩ আসামীকে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতে হাজির করে ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের জন্য তাদের বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে রিমান্ড শুনানী শেষে আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডকৃতরা হচ্ছে, সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়া গ্রামের মো: তাহিদ মিয়ার পুত্র বর্তমানে এমসি কলেজ হোস্টেল সুপারের বাংলো ৫ম ব্লকের বাসিন্দা সাইফুর রহমান (২৮), জকিগঞ্জ উপজেলার আটগ্রামের কানু লস্করের পুত্র বর্তমানে টিলাগড় রাজপাড়ার বাসিন্দা অর্জুন লস্কর (২৫) ও সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের ও বর্তমানে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম (২৫)।
রিমান্ড শুনানিকালে এপিপি এডভোকেট খোকন কুমার দত্তের সাথে রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তা করেন এডভোকেট মুজিবুর রহমান, এডভোকেট সাজ্জাদ আহমদ, এডভোকেট প্রবাল চৌধুরী পূজন, এডভোকেট দেবব্রত চৌধুরী লিটন প্রমুখ। তবে আদালতে জামিন শুনানিতে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী অংশ নেননি।
শুনানিতে অংশ নেওয়া একাধিক আইনজীবীরা জানান, আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় আদালত আসামিদের কাছে তাদের কোনো বক্তব্য আছে কী না জানতে চান। এ সময় সাইফুর রহমান নিজেকে নির্দোষ হিসেবে দাবি করেন। তিনি আদালতকে বলেন, রাজন, আইন উদ্দিন ও তারেক এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি জড়িত ছিলাম না। শুক্রবার এমসি কলেজের ছাত্রভবাসে ধর্ষণের ঘটনায় পরদিন ২৬ সেপ্টেম্বর শনিবার ধর্ষিতার স্বামী মাইদুল ইসলাম বাদি হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জনকে আসামী করে শাহপরান থানায় একটি মামলা (নং-২১) দায়ের করেন। মামলায় তারেকুল ইসলাম তারেককে আসামি করা হলেও রাজন ও আইন উদ্দিনের নাম নেই। তবে এজাহারে ধর্ষিতার স্বামী অজ্ঞাতনামা ৩ জনকে আসামি করেছেন। যাদের পরিচয় তিনি নিশ্চিত হতে পারেননি বলে জানিয়েছেন।
এদিকে, সিলেটের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে এই গণধর্ষণের দায়েরকৃত মামলার এজাহারভুক্ত ৩ নং আসামী মাহবুবুর রহমান রনিকে হবিগঞ্জ সদর থেকে এবং ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় মো. আইনুদ্দিন ও মো. রাজনকে ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৯’র সদস্যরা। গত দু’দিন পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার পুত্র বর্তমানে এমসি কলেজ হোস্টেল ৭নং ব্লকের ২০৫ নং রুমের বাসিন্দা শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), শাহপরান থানার শিবগঞ্জ টিলাঘরের মৃত সোনা মিয়ার পুত্র মো: আইনুদ্দিন (২৬) ও বিয়ানীবাজার থানার নাটেরশর গ্রামের মৃত ফয়েজউল ইসলামের পুত্র রাজন মিয়া (২৫)।
র‌্যাব-৯’র প্রেসবিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টে¤¦র শুক্রবার এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের শিকার হয় এক গৃহবধু। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় ভিকটিম এর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় মামলা দায়ের করেন। যার নং-২১। ঘটনার পর থেকে অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি র‌্যাব-৯ আসামীদের গ্রেফতার করার জন্য তৎপর হয়। এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৯ এর একাধিক আভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে। গত ২৭ সেপ্টে¤¦র রাত সাড়ে ১০ টার দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৯, শ্র্রীমঙ্গল ক্যাম্প এর কোম্পানী অধিনায়ক মেজর আহমেদ নোমান জাকি ও এএসপি সোমেন মজুমদার এর নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল হবিগঞ্জের সদর থানা এলাকা থেকে এজাহারভূক্ত ৩ নং আসামী মাহাবুবুর রহমান রনিকে গ্রেফতার করে। পরে রনির দেয়া তথ্যমতে, র‌্যাব-৯ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু মুসা মো. শরীফুল ইসলাম এর নেতৃত্বে সিলেট ক্যাম্প এর একটি আভিযানিক দল চাঞ্চল্যকর এই গণধর্ষণ মামলার সাথে জড়িত মো. আইনুদ্দিন (২৬) ও রাজন মিয়াকে ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে ২৮ সেপ্টে¤¦র রাত সাড়ে ১২ টার দিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরবর্তীতে আইনুদ্দিন ও রাজনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।