সুনামগঞ্জে দুই দফা বন্যায় ৬০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত, ক্ষতি ৩৮০ কোটি টাকা

11

সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
দুই দফা বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন সড়কে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। এতে করে সুনামগঞ্জ শহরের সঙ্গে সরাসরি গাড়ি যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। অনেকই আবার জরুরি প্রয়োজনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসার প্রয়োজনে জেলা শহরে থেকে পণ্য পরিবহন করছেন এই ভাঙা সড়ক দিয়ে।
অনেক সময় ভারী গাড়িগুলো কাদায় আটকে যাচ্ছে। পরে সেখান থেকে মালামাল নামিয়ে ভ্যানে করে নিয়ে যাওয় হয় গন্তব্য স্থলে। এ ভাবেই চলছে সুনামগঞ্জের সঙ্গে জেলার প্রায় ১০টি উপজেলার যোগাযোগ। সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন উপজেলার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা।
সুনামগঞ্জ জেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)’র অধীনে থাকা প্রায় সাড়ে ৬০০ কিলোমিটার সড়ক বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে জেলার সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলার ১৯টি পয়েন্টের সংযোগ সড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন বিভিন্ন ব্রীজ কালভার্ট ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেন, জুন- জুলাই মাসের দু’দফা বন্যায় সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে জেলার সবকটি উপজেলার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২২টি মূল সংযোগ সড়ক পুরোপুরি ভেঙে গেছে।
আমাদের মোট সড়ক ৪ হাজার ৬৯৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৬৫০ কিলোমিটার ভেঙে গেছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সঙ্গে চারটি উপজেলা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখোলা-আনোয়ারপুর এলাকা ভেঙে যাওয়ায় তাহিরপুর উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের সড়ক যোগযোগ বিচ্ছিন্ন।
সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্বর সড়কের রাধানগর, লালপুর এলাকায় ভেঙে যাওয়ায় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সঙ্গে জেলা শহরের সড়ক যোগযোগ বিচ্ছিন্ন।
সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের জামলাবাজ এলাকায় ভেঙে গিয়ে বিচ্ছিন্ন উপজেলা হিসেবে আছে জামালগঞ্জ। সুনামগঞ্জ-ছাতক সড়কের নোয়াগাঁও ও দোহালিয়া এলাকায় ভাঙনে জেলা শহরের সঙ্গে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এগুলো মেরামতের জন্য বালু ফেলে দ্রুত ঠিক করে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দুই তিন দিনের মধ্যে সড়ক আপাতত চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া হবে। পরে বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে মূল কাজ করা হবে।
ক্ষয়ক্ষতির পুরো হিসেব পাওয়া গেলে আমরা মন্ত্রণালয়ে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামতের জন্য প্রস্তাব পাঠাবো। এদিকে সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৩০ কিলোমিটার সড়ক খুব বেশি পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা টাকার অংকে ২৫-৩০ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোকে আপতত ইট ও বালির বস্তা দিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে যাতে যানচলাচলও কিছুটা স্বাভাবিক রাখা যায় সে সাময়িকভাবে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পুরো হিসেব পাওয়া গেলে মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে দ্রুত সড়কগুলো মেরামত করা হবে।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, চলতি দুই দফা বন্যা আমাদের ২২৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৩০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে তা প্রায় ২৫-৩০ কোটি হবে। ক্ষয়ক্ষতির হিসেব পাওয়ার পর বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে কাজ করা হবে।
সুনামগঞ্জ যাত্রী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, বন্যার পর মানুষজন সব চেয়ে ভোগান্তিতে পড়বে ভাঙ্গাচোরা সড়কের কারণে। জেলার সঙ্গে চারটি উপজেলার উপজেলার সড়ক যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় যানবাহন
চলাচল বন্ধ আছে। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় সাধারণ মানুষকে নৌকায় চলাচল করতে হচ্ছে। দ্রুত সড়কগুলো মেরামত করা না হলে ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন বলেন, জেলা শহর থেকে আমার ইউনিয়নের আবুয়া নদী পর্যন্ত সড়কটি এমনিতেই খানাখন্দে ভরপুর ছিল। দুই দফা বন্যায় সড়কের অনেক স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।