পরিবহন শ্রমিক নেতা রিপন খুনের ঘটনা ॥ দিন ভর সড়ক অবরোধ, রেলওয়ের ৩ কর্মকর্তা সহ ২০ জনকে আসামী করে মামলা

87
সিলেট বিভাগীয় ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদককে হত্যার ঘটনায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রশাসনের সাথে শ্রমিকদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর দক্ষিণ সুরমার বাবনা পয়েন্ট এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্তদের উপর্যুগপরি ছুরিকাঘাতে খুন হওয়া সিলেট বিভাগীয় ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন রিপন (৪৫) এর ঘটনায় গতকাল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সিলেট। পরে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রিপনের খুনিদের গ্রেফতারের দাবির আশ্বাস পেয়ে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় শ্রমিকরারা।
এর আগে গতকাল শনিবার এ ঘটনায় দক্ষিণ সুরমার ফিরোজপুর লাউয়াই সংগঠনের কার্যালয়ে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে দক্ষিণ সুরমা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল ও সেকেন্ড অফিসার এসআই রিপন দাসকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি তুলে অনতিবিলম্বে এই হত্যাকান্ডের মূল আসামীকে গ্রেফতার করার আহবান জানানো হয়। অন্যতায় শ্রমিকদের ক্ষোভের অনল থেকে কেউই রেহাই পাবেনা। সভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, ডিসি সোহেল আহমদ, ট্রাফিকের ডিসি ফয়সল মাহমুদ, কাউন্সিলর লিপন বক্স, শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহজাহানসহ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ
এদিকে, গতকাল শনিবার পুলিশ ময়না তদন্ত শেষে নিহত রিপনের লাশ তার আত্মীয় স্বজনের কাছে হস্তান্তর করে। পরে বাদ আছর খোজারখলা মার্কাস জামে মসজিদে মরহুমের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার নামাজে ইমামতি করেন খোজারখলা মার্কাস জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা হিফজুর রহমান। পরে খোজারখলা পারিবারিক গোরস্থানে নিহত রিপনের লাশ দাফন করা হয়। নিহত ইকবাল হোসেন রিপন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৫নং ওয়ার্ডের খোজারখলা পশ্চিম মহল্লা নিবাসী প্রবীণ মুরব্বী আবুল হোসেনের পুত্র।
মরহুমের নামাজে জানাযায় উপস্থিত ছিলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১, ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিক বকস লিপন, ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাকবির ইসলাম পিন্টু, পূর্বাঞ্চল কমিটির আহবায়ক ও বাংলাদেশ ট্যাঙ্কলরী শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব শাহজাহান ভূইয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সিলেট বিভাগীয় ট্যাঙ্কলরী শ্রমিক ইউনিয়ন-২১৭৪ এর সভাপতি মোঃ মনির হোসেনসহ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও মুরব্বীয়ান, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবী সহ সর্বস্তরের মুসল্লিগণ জানাযায় অংশ গ্রহণ করেন। এদিকে, শ্রমিকনেতা রিপনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ট্যাঙ্কলরী শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব শাহজাহান ভূঁইয়া ও সিলেট বিভাগীয় ট্যাঙ্কলরী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ মনির হোসেন সহ শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। এ সময় নেতৃবৃন্দ কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান শ্রমিকনেতা ইকবাল হোসেন রিপন খুনের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনে আওতায় এনে ফাঁসি দেয়ার দাবী জানান।
অপরদিকে, ইকবাল হোসেন রিপন হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়। রেলওয়ের ৩ কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে দায়েরকৃত মামলায় আসামী করা হয়েছে ২০ জনকে। গতকাল শনিবার দুপুরে নিহত শ্রমিক নেতা ইকবাল হোসেন রিপনের স্ত্রী ফারজানা আকতার তমা বাদি হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল।
মামলার আসামিরা হচ্ছে- বরইকান্দি ১ নং রোডের মৃত ফরিদের পুত্র ইজাজুল (২৮), মৃত ফারুক মিয়ার পুত্র রিমু (২৮), মৃত আব্দুল করিম মনজ্জিরের পুত্র মুহিবুর রহমান মুন্না (৩০), মৃত আসদ্দর আলীর পুত্র মোস্তফা (৪০), মৃত বশির মিয়ার পুত্র মিন্টু (৩৮), লিলু মিয়ার পুত্র সেবুল (২৩), চান মিয়ার পুত্র কাইয়ুম (২৮), ফারুক মিয়ার ছেলে বদরুল (২৮), মৃত ফরিদ মিয়ার পুত্র ইসমাইল (৩০), স্থানীয় সাংগু গ্রমের মৃত করিব মিয়ার পুত্র নোমান আহমদ (৩৯), রেলওয়ের আইডব্লিউ শাখার আকবর হোসেন মজুমদার (৪৮), সিলেট রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মতিন ভুঁইয়া (৫৫) ও ওয়ার্কার সুপারভাইজার শহিদুল হক (৫৮)। মামলা দায়েরের পর পর নোমান আহমদ (৩৫) ও সন্দেহভাজন মো: আতাউর রহমান সাদ্দাম (৩০) নামের ২ জনকে তাদের নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছে। ধৃত নোমান আহমদ দক্ষিণ সুরমা থানার ১নং রোড বরইকান্দি এলাকার মৃত মাসুদ আহমদ কবিরের পুত্র ও ধৃত আতাউর রহমান সাদ্দাম বরইকান্দি ১ নং রোডের কাজিারখলা গ্রামের মৃত বশির মিয়ার পুত্র। মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ওসি খায়রুল ফজল।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার রাত সোয়া ১০টার দিকে দক্ষিণ সুরমার বাবনা পয়েন্ট এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন পরিবহান শ্রমিক নেতা ইকবাল হোসেন রিপন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সিলেট বিভাগীয় ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক চন্ডিপুলে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে হামলার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে সিলেটসহ সারাদেশে আন্দোলন শুরু হয়। গতকাল সকাল থেকে দক্ষিণ সুরমার এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান করে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে দক্ষিণ সুরমা বাবনা পয়েন্ট, চন্ডিপুল পয়েন্ট, পারাইরচক, হুমায়ুন রশিদ চত্বর, শেরপুর সড়ক অবরোধ করে রাখেন বিক্ষোভকারী শ্রমিকরা। এতে করে হাজার হাজার গাড়ি আটকে পড়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় জনসাধারণকে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শ্রমিকদের সাথে বৈঠকে বসেন পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ পর্যায়ে সিলেটের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারা শ্রমিকদের তিনটি দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে রাস্তা থেকে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা।