রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল বন্ধ ও শ্রমিক ছাঁটাই’র প্রতিবাদে বিক্ষোভ

7
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ ও শ্রমিক ছাঁটাই'র প্রতিবাদে বাসদ(মার্কসবাদী) বিক্ষোভ সমাবেশ।

রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল বন্ধ ও শ্রমিক ছাটাই’র প্রতিবাদে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে গতকাল সিলেট শহীদ মিনারে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সিলেট জেলার আহ্বায়ক মুখলেছুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার আহ্বায়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়, সদস্য এডভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েব, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সিলেট জেলার সদস্য জিতু সেন,আমেনা বেগম প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, “সম্প্রতি সরকারের তরফ থেকে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অথচ, করোনা মহামারীর এই সময়ে শ্রমিকদের খাদ্য, চিকিৎসাসহ যাবতীয় কোনো নিশ্চয়তা না দিয়েই এই সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিবে। ইতোপূর্বে খুলনায় ক্রিসেন্ট জুট মিলসহ বিভিন্ন পাটকলের শ্রমিকদের আন্দোলন সত্ত্বেও ন্যায্য বেতন ও বকেয়া পরিশোধ না করে মালিকরা একের পর এক তাদেরকে ঠকিয়ে যাচ্ছে। এরপর আবার তাদের এই অসহায় অবস্থায় ফেলে পাটকল বন্ধ করলে তাদের আর বাঁচার উপায় থাকবে না। এই সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। ২৯ জুন শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সাথে রাষ্ট্রীয় পাটকলের সিবিএ, নন-সিবিএ শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করে আগামী ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত মিল চালু রেখে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে মর্মে আলোচনার পর যখন শ্রমিকেরা আন্দোলনের কর্মসূচি স্থগিত করে কাজে যোগ দিল তার ২ দিন পরেই প্রধানমন্ত্রী গণভবনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে পাটকল বন্ধের ঘোষণা দেয়া হলো। এ ঘটনা সরকারের কূটকৌশল ছাড়া অন্য কিছু নয়। শ্রম প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসে শ্রমিকেরা আন্দোলন প্রত্যাহার করলো আর প্রধানমন্ত্রী বন্ধের ঘোষণা দিল যাতে শ্রমিকেরা পুনরায় সংঘটিত হওয়া ও শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানা বন্ধ করতে হলে ২ মাস পূর্বে নোটিশ দিতে হয়। রাষ্ট্রীয় ২৫টি পাটকল বন্ধে এ নিয়ম মানা হলো না। পাট মন্ত্রণালয় বন্ধ করলে এ নিয়ম মানার বাধ্যবাধকতা ছিল তাই চালাকী করে প্রধানমন্ত্রী বন্ধ করে দিল। কারণ অলিখিতভাবে আছে আইনে যাহাই থাকুক প্রধানমন্ত্রী কোন ঘোষণা দিলে সেটাই আইনে পরিণত হবে। রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধে ভোট ডাকাত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার সেই সুযোগ কাজে লাগালো। আন্দোলনের সুযোগ না পায়।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, “গত চার বছরে পাটকল শ্রমিকদের বর্ধিত মজুরি বকেয়া পড়েছে প্রায় ১৬১২ কোটি টাকা। দেশের পাট শিল্প, পাটশ্রমিক ও চাষীদের রক্ষায় সরকারের টাকা নেই অথচ অস্ত্র কিনতে সরকারের টাকার অভাব হয় না। বাংলাদেশ চীন থেকে দুটি সাবমেরিন কিনেছে ১৬৫০ কোটি টাকায়। এখন কক্সবাজারে সাবমেরিন ঘাঁটি তৈরি করা হবে ১০২ কোটি টাকায়। সরকার ভারত থেকে ৪ হাজার কোটি টাকার ও রাশিয়া থেকে ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্র কিনবে। করোনা মহামারীতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা যে মালিক শ্রেণির হস্তগত হয়েছে, তাও সবার জানা। অথচ শুধু শ্রমিকের জন্য সরকারের টাকা নেই। এর আগে নিতান্ত জীবন বাঁচানোর দায়ে পাটকলের শ্রমিকদের আমরণ অনশনে নামতে হয়েছিল। তাদের সেই ন্যায্য দাবিও সরকার সুকৌশলে এড়িয়ে গেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল আছে। পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আওতাধীন এই পাটকলগুলোতে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক কাজ করে। তাদের খাদ্য, চিকিৎসা ও যাবতীয় সামগ্রীর নিশ্চয়তা প্রদান করা সরকারের দায়িত্ব। ফলে সেই নিশ্চয়তা প্রদান না করে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল এবং পাটকল শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা, বকেয়া পরিশোধ, খাদ্য-চিকিৎসাসহ যাবতীয় নিশ্চয়তা প্রদানের দাবি জানান। বিজ্ঞপ্তি