সাইনবোর্ডেই সর্বোচ্চ সরকারীকরণ ॥ নানা সমস্যার বেড়াজালে বন্দি ওসমানীনগরের বড় দিরারাই বিদ্যালয়

13

শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে  :
বিদ্যালয়হীন গ্রামে ১৫শ’ বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত হলেও নানা বেড়াজালে বন্দি হয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে ওসমানীনগরে দয়ামীর ইউনিয়নের বড় দিরারাই বিদ্যালয়। কাগজে পত্রে সরকারীভাবে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হলেও বাস্তবে সাইনবোর্ডেই সর্বোচ্চ রয়ে আছে সরকারীকরণ। বঞ্চিত রয়েছে সরকারী সকল সুযোগ সুবিধা থেকে। স্থাপনের ৮ বছর অতিবাহিত হলেও বিদ্যালয়ে সরকারীভাবে কোনো শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন ও জড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে স্থানীয়রা প্রবাসীদের সহযোগিতায় একটি ভবন নির্মাণ করে চারজন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষকদের মাধ্যমে কার্যক্রম চালিয়ে চালিয়ে গেলেও উপবৃত্তিসহ সার্বিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী।
সূত্র জানায় ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদে এক সংসদ সদস্যের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তৎকালিন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের ১৫শ’ বিদ্যালয়ের আওতায় স্থাপিত বিদ্যালয়গুলোতে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের আশ্বাসের পর দেশের অনান্য স্থানে স্থাপিত বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদায়ন করা হলেও এ বিদ্যালয়টি রয়ে গেছে বঞ্চিতের খাতায়। বিদ্যালয়ে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগসহ সার্বিক সুযোগ সুবিধার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, ওসমানীনগরের দয়ামীর ইউনিয়নের সরকারী সুবিধা বঞ্চিত বৃহত্তর বড় দিরারাই এলাকার প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় কোনো সরকারী বা বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় কোমলমতি শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকতে হতো। অবশেষে গ্রামবাসী সম্মেলিত ভাবে এ ব্যাপারে এগিয়ে এসে তৎকালিন স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহযোগিতায় আওয়ামীলীগ সরকারের সারা দেশে বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে ১৫শ বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের আওতায় অবহেলিত এ গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়। সরকারী নিয়মানুযায়ী বিদ্যালয়ের নামে জমি রেজিষ্ট্রারি করে দেয়ার পর এলজিইডি কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে ৫০ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১২ সালে বিদ্যালয়ে গভীর নলকূপ স্থাপন ও দ্বিতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে এলজিইডির অন্তর্ভুক্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়ে নলকূপ স্থাপনের পর দ্বিতল বিল্ডিংয়ের কাজ হওয়ায় গ্রামবাসীর মনে আশার আলো জেগে উঠলেও ভাবনের আংশিক কাজ সম্পন্নের পর মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণ কাজ। ২০১৫ সালে উচ্চ আদালত মামলাটি নিষ্পত্তি করে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ প্রদান করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। উপজেলা এলজিইডি বিভাগের পক্ষ থেকে বড় দিরারাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন দ্বিতল ভবনের অসম্পন্ন সম্পন্ন করার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বরাবরে একাধিক প্রতিবেদন পাঠানো হলেও অদৃশ্য কারণে তা আজও আলোর মুখ দেখেনি। ফলে বিদ্যালয়ের সামনে থাকা অসম্পন্ন ভবনের ফাইলিংয়ের স্থানে বড় ধরনের গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিবছর ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে শতভাগ ফলাফল করলেও সরকারী বিদ্যালয়ের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে তারা। নামে সরকারী বিদ্যালয় হলেও বাস্তবে তার সুফল পাচ্ছে না।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম আক্তার, সাবেক মেম্বার আহমদ আলী, মস্তাব আলী, আব্দুল খালিকসহ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা জানান, বিদ্যালয়টি নামে সরকারী থাকলেও বাস্তবে বঞ্চিত। বিদ্যালয়ে দিন দিন শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়লেও সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দিনের পর দিন ধর্ণা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। এ ব্যাপারে আমারা প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সুহেল আহমদ, শিক্ষক সোহানা বেগম বলেন, আমরা নানা সংকটের মধ্যে দিয়ে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। নামে সরকারী থাকলেও একমাত্র বস্তুনিষ্ঠ পাঠদান ছাড়া সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বিদ্যালয়টি বঞ্চিত রয়েছে। সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় এবং এলাকার অন্য কোনো বিদ্যালয় না থাকায় এলাকায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় সরকারী প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন অসম্পন্ন ভবনের ফাইলিংয়ের গর্ত থাকায় ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থী পাঠদান করতে হচ্ছে।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা দিলিপময় চৌধুরী বলেন, ওসমানীনগর একটি নতুন উপজেলা। বিগত এক বছর থেকে এ উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কাজ চালু হয়েছে। আমরা এখনও এ বিদ্যালয়ের সরকারী করণের বিষয়ে কোনো কাগজপত্র পাইনি। সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: বায়োজিদ খান বলেন, বড় দিরারাই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৫শ বিদ্যালয়ের আওতায় সরকারীকরণের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।