গোলাপগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুটি পরিবারে শোকের মাতম, নিহত দুইজনের জানাযা সম্পন্ন

191

সেলিম হাসান কাওছার গোলাপগঞ্জ থেকে :
গোলাপগঞ্জের চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত গোলাপগঞ্জের আল-আমিন হোসেন ও জকিগঞ্জের রাজমিস্ত্রি জয়নুলের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় দুটি পরিবারে চলছে শোকের মাতম। আহতদের স্বজনদেরও আর্তনাদ থামছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সরস্বতির হাজী জছির আলী মডেল স্কুল মাঠে আলআমিনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর জানাযায় ইমামতি করেন নিহতের আপন মামা মাওলানা বেলাল আহমদ। জানাযায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ অংশগ্রহণ করেন। বুধবার রাতে তার লাশ পুলিশ ময়না তদন্ত ছাড়াই এডির ছাড়পত্রের মাধ্যমে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। নিহত আলআমিন ৪ ভাই বোনদের মধ্যে সকলের বড় ছিল। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিল সে। একমাত্র বড় ভাইকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে খাদিজা বেগম (১৩), শোভা বেগম (১১) ও ছোট বোন মুমিনা বেগম (৯)। বুধবার রাত ১১টায় নিহতের লাশ নিয়ে এ্যাম্বুলেন্স বাড়ীতে পৌছার পর দেখা যায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। নিহতের মা শেহারুন বেগমের কান্নায় আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে উঠে। কেউ তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। বাবা ইব্রাহীম আলীও ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন। তার মৃত্যুতে অনেক পাড়া-প্রতিবেশিদেরও কাঁদতে দেখা যায়। গ্রামের লোকজন আক্ষেপ করে বলছেন তার মত একটা ছেলে গ্রামে মিলানো অনেক কঠিন হবে। খুব ভাল ও ভদ্র ছিল ছেলেটি। নিহত আলআমিন গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সরস্বতি গ্রামের ইব্রাহীম আলীর ছেলে।
একই দুর্ঘটনায় নিহত জকিগঞ্জ থানার শাহবাগ মহিদপুর গ্রামের মৃত কুটি মিয়ার ছেলে জয়নুল ইসলাম (৩৫) এর গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় মহিদপুর প্রাইমারি স্কুল মাঠে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। নিহতের জানাযায় ইমামতি করেন মহিদপুর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল মতিন। জানাযায় উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। বুধবার রাতে তার লাশও ময়না তদন্ত ছাড়াই পুলিশ এডির ছাড়পত্রের মাধ্যমে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। নিহত জয়নুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি ছিলেন। একমাত্র উপার্জনকারী জয়নুলের মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্বজনরা। কেউ তাদের শান্তনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
মৃত্যুর দোয়ার থেকে ফিরে আসা জকিগঞ্জ থানার শাহবাগ মহিদপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে এহিয়া আহমদ (২০) এর সাথে আলাপ করা হলে সে প্রতিবেদককে জানান, আমরা ৩জন মাওলানা হাফিজ জুবায়ের আহমদ আনছারী সাহেবের ওয়াজ শোনার জন্য সিলেটর সিরামপুর বাইপাস এলাকায় একটি ওয়াজের উদ্দেশ্য রওয়ানা হই। গোলাপগঞ্জ উপজেলার চৌঘরী এলাকায় পৌছা মাত্র সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হই। আমাদের সঙ্গী আহত অপরজন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। তিনি আমাদের একই থানার শাহবাগ নুননগর গ্রামের মৃত মাওলানা আব্দুর রহমানের ছেলে ইফজাল আহমদ (৪৫)। আমারা সকলেই পেশায় রাজমিস্ত্রি। ওয়াজের পাশেও আমাদের সাইটের কাজ চলছিল। সে বলে আহত ইফজাল মিয়ার জ্ঞান এখনও ফিরেনি। আমরা গতকাল রাতে শুনছিলাম উনি মারা গেছেন। পরে জানতে পেরেছি উনি এখনও মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আসা এসআই ফয়জুল করিমের সাথে আহত সিএনজি চালকের বিষয়ে আলাপ করা হলে তিনি বলেন,লোকটির বাড়ী সিলেটের বালুচরে এই পর্যন্ত জানতে পেরেছি। তার নাম ঠিকানা এখনও পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি একেএম ফজলুল হক শিবলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, পরবর্তী নিহতের কোন খবর আমরা পাইনি। তবে সিএনজি চালকের বাড়ি বালুচরে বলে আমরা জানতে পেরেছি।