স্বস্তি ফিরছে কৃষকের মনে

29

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
তাহিরপুর হাওরাঞ্চলে স্বস্তি ফিরছে কৃষকের মনে। আগাম বন্যার সতর্ক বার্তার দুশ্চিন্তা কেটে গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে, হাওরের ধান কাটা মাড়াই প্রায় শেষের পথে, সেই সাথে বোর ধানের বাম্পার ফলন সব মিলিয়ে তাহিরপুর হাওরাঞ্চলের কৃষক এখন দুশ্চিন্তা মুক্ত। বৈশাখ মাসে এমন অনুকূল আবহাওয়া অনেক দিন পর দেখতে পেলো হাওরবাসী। হাওরে বৈশাখ মানেই বৃষ্টি-বাদল, ঝড়-তুফান, শিলা বৃষ্টি-বজ্রপাত, প্রাণহানি, ফসলাদি নষ্ট, পাহাড়ি ঢল, নদীতে উপচে পড়া পানি। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। এবার বৈশাখ মানেই রৌদ্রজ্জ্বল দিন, যথ সামান্য বৃষ্টি। বোর ধানের বাম্পার ফলন, কৃষকরে মুখে হাসি।
চলতি বছর বৈশাখ মাসের শুরুতে যখন ধান পাকতে শুরু করছে হাওরে হাওরে তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের আগাম বন্যার সতর্ক বার্তা, সেই সাথে করোনার প্রভাবে বিশ^ব্যাপী খাদ্য সংকটের হুমকি, প্রশাসন সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের অবিরত ধান কাটার তাগাদা প্রথম দিকে কৃষকদের একটু অস্বস্তিতেই ফেলে দিয়েছে। অনেক কৃষক হতাশা গ্রস্থ হয়ে কাঁচা পাকা ধানই কেটে নিয়েছেন। সামান্য একটু ঝড় বৃষ্টিতে মন খারাপ বেড়েছে। এই বৃঝি বন্যা শুরু হলো । কিন্তু না প্রকৃতি এবার কৃষকদের সহায়ক হয়েছে। হাওরাঞ্চলে বিশেষ করে মেঘালয় সীমান্ত এলাকায় বছরে বছরে বৈশাখ মাসে যে বৃষ্টিপাত হয় চলতি বছর এমনটা দেখা যায়নি। উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বৃষ্টিপাত । ঝড় বৃষ্টি তেমন একটা নেই। সারা বৈশাখ মাস জুড়ে দু’একদিন বজ্রপাত হলেও তা বিগত বছর গুলির তোলনায় কম। দিন ব্যাপী রোদ থাকলেও বৈশাখে তেমন গরম পড়ে নি হাওরে। প্রতি দিনের ধান প্রতি দিনই রোদে শুকিয়ে গোলায় তোলছেন কৃষক। কৃষকদের মতে বলতে পারি স্বস্তির বৈশাখ। হাওরের কাটা-মাড়াই প্রায় শেষ। বর্তমানে ধান মাড়াই খলায় কৃষক ধান শুকানো ও খর খুটু শুকানোতে ব্যস্ত। দু’এক দিনের মধ্যে এ ব্যাস্ততাও কমে যাবে।
শনির হাওর পার মধ্য তাহিরপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস ছোবহান তিনি জানান, বন্যার সতর্ক বার্তায় প্রথম দিকে তিনি সামান্য কাঁচা-পাকা ধান কেটেছেন। তার মতে এবার বৈশাখটা খুব ভালো ছিল,মেঘ বৃষ্টির তেমন ভোগান্তি নেই
একই অবস্থার কথা জানালেন কৃষক ঝুনু মিয়া,তিনি জানান,আগামী দু’এক দিনের মধ্যে অধিকাংশ কৃষকের ধান শুকানোও শেষ হয়ে যাবে।
চলতি বছর উপজেলার ২৩ টি ছেট বড় হাওরে ১৮ হাজার হেক্টরের বেশী জমিতে ইরি-বোর ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। বোর ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় লক্ষমাত্রা অর্জন হয়ছে বলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেযারম্যান বোরহান উদ্দিন বলেন,আগাম বন্যার সতর্কবাতার কারাণে কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার জন্য কৃষকদের দ্বারে দ্বার গিয়ে ধান কাটতে বলেছি। অনেক কৃষক কাঁচা পাকা ধান কেটেছেন। বৈশাখ মাসের আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষকরা কোন প্রকার ক্ষতি ছাড়াই বোর ধান কাটতে পেরেছেন। কৃষকদের মনে এখন আর কোন প্রকার আতংক নেই। স্বস্তিতেই আছেন কৃষক সমাজ।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ দৌলা বলেন, উৎকণ্ঠায় ছিলাম বোর ধান কাটা মাড়াই নিয়ে। বর্তমানে ধান কাটা মাড়াই প্রায় শেষ। বোর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায়,সেই সাথে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কৃষক খূশি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজেন ব্যানার্জি বলেন,করোনা ও আগাম বন্যার সতর্ক বার্তায় বোর ধান কাটা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত ছিলাম,আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষক নিশ্চিন্তে ধান কেটে মাড়াই দিয়ে শুকিয়ে গোলায় তোলতে পেরেছেন। এতে করে কৃষকদের পাশাপাশি আমাদেরও স্বস্তি লাগছে।